পাঠক্রমে সাতটি মুল বিভাগ বা প্রবাহের অবতারণা প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রচলিত শিক্ষার পাঠক্রমের যে ত্রুটি চিহ্নিত করেন, তা লেখাে। পাঠক্রমের মূল অংশের এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয় সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ উল্লেখ করাে।

পাঠক্রমে সাতটি মুল বিভাগ বা প্রবাহের অবতারণা প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রচলিত শিক্ষার পাঠক্রমের যে ত্রুটি চিহ্নিত করেন, তা লেখাে। পাঠক্রমের মূল অংশের এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয় সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ উল্লেখ করাে। 4+4      Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রচলিত পাঠক্রমের ত্রুটি :  মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে সুপারিশ ত্রুটিগুলি হল— 

[1] পুথিকেন্দ্রিক ও তাত্ত্বিক : মুদালিয়র কমিশনের মতে, প্রচলিত পাঠক্রম পুথিকেন্দ্রিক ও তত্ত্বমূলক, জীবনের সঙ্গে এই পাঠক্রমের কোনাে যােগ নেই। 

[2] বিষয়গতভাবে ভারাক্রান্ত : প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম। বিষয়গতভাবে খুবই ভারাক্রান্ত। অথচ বিষয়গুলির বেশিরভাগ অংশ তাৎপর্যহীন এবং সমৃদ্ধ নয়।

[3] ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক নয়: কমিশনের মতে, প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক নয়। ওই পাঠক্রমে ব্যাবহারিক ও কর্মভিত্তিক বিষয়ের যথেষ্ট অভাব ছিল | 

[4] বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদাপূরণে সহায়ক নয় : প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠকম বয়ঃসন্ধিকালের ছাত্রছাত্রীদের চাহিদাপূরণে সহায়ক ছিল না l

[5] পরীক্ষানির্ভর : প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম ছিল মূলত পরীক্ষানির্ভর। মাত্রাতিরিক্ত পরীক্ষার চপি ছাত্রছাত্রীদের ওপর বিরূপ প্রভবি ফেলত। 

[6] কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনে সহায়ক বিষয়ের অভাব: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের উপযােগী তেমন কোনাে বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

উল্লিখিত ত্রুটিগুলিকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মুদালিয়র কমিশন নিম্নলিখিত পাঠক্রমের সুপারিশ করে— 

[1] নিম্নমাধ্যমিক স্তরের জন্য : নিম্নমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলিতে যেসব বিষয় পড়ানাের ব্যবস্থা করতে হবে, সেগুলি হল— i. ভাষা, ii. সামাজিক শিক্ষা, iii. সাধারণ বিজ্ঞান, iv. গণিত, v. কলা ও সংগীত, vi, হাতের কাজ, vii. শিল্প এবং viii. শারীরশিক্ষা। 

[2] উচ্চ ও উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য: কমিশনের মতে, নিম্নমাধ্যমিক স্তরের পাঠ শেষ করার পর প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ সামর্থ্য ও অনুরাগ একটি নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে। তাই, এই পর্যায়ের পাঠক্রম প্রণয়নের সময় ছাত্রছাত্রীদের সামর্থ্য ও অনুরাগের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন ৷ পাঠক্রমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও বিষয়বস্তুকে এমনভাবে সংযােজিত করতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের রুচি, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারে। এই নীতির কথা বিবেচনা করে মুদালিয়র কমিশন পাঠক্রমকে দুটি অংশে ভাগ করে উপস্থাপন করে। এদের একটি হল—আবশ্যিক (compulsory) বা মূল (core) অংশ; অপরটি হল ঐচ্ছিক (elective) অংশ। এ ছাড়াও অতিরিক্ত বিষয় (optional subject)-ও থাকবে।

পাঠক্রমের মূল এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয়সমূহ সম্পর্কে সুপারিশ : মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক পাঠক্রমকে মূল অংশ ও ঐচ্ছিক অংশে ভাগ করেন| পাঠক্রমের উভয় অংশের বিষয়সমূহ সম্পর্কেই কমিশনের রিপাের্টে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। 

মূল অংশের বিষয়সমূহ : কমিশন পাঠক্রমের আবশ্যিক বা মূল অংশে যে বিষয়গুলিকে উপস্থাপন করেছে, তা নীচে উল্লেখ করা হল— 

[1] ভাষা: এই পর্যায়ে দুটি ভাষা শেখা দরকার। 

i. মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, অথবা মাতৃভাষা এবং প্রাচীন ভাষার মিশ্রণ। ii. নীচে উল্লিখিত ভাষাগুলির মধ্যে যে-কোনাে একটি — 1. হিন্দি (যাদেরমাতৃভাষা হিন্দি নয়), 2. প্রাথমিক ইংরেজি (যারা আগে ইংরেজি পড়েনি), 3. ইংরেজি (যারা আগে ইংরেজি পড়েছে), 4. একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষা (হিন্দি ছাড়া), 5. একটি আধুনিক  ইউরােপীয় ভাষা (ইংরেজি ব্যতীত), 6. একটি প্রাচীন ভাষা। 

[2] সমাজবিজ্ঞান: সাধারণ পাঠ (প্রথম দুবছর সময়কালের জন্য।

[3] গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান : সাধারণ পঠি (প্রথম দুবছর সময়কালে জন্য)। 

[4] হাতের কাজ বা হস্তশিল্প : নীচের বিষয়গুলির মধ্যে থেকে যে-কোনো একটি কাঠের কাজ, ধাতুর কাজ, বয়ন ও বুনন, টাইপােগ্রাফি, দর্জির কাজ, বানান তৈরি, সেলাই ও সূচিশিল্প, মূর্তি নির্মাণ, কর্মশালায় প্রস্তুতিমুলক কাজ ইত্যাদি।

ঐচ্ছিক অংশের বিষয়সমূহ : কমিশন ঐচ্ছিক পাঠক্রমে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়গুলিকে সাতটি মূল প্রবাহে বা বিভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করেছে। এদের যে-কোনাে বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীকে তিনটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে | নীচে সাতটি বিভাগ ও সেগুলির অন্তর্গত বিষয় উল্লেখ করা হল —

বিভাগ বা প্রবাহের নামবিভাগ বা প্রবাহের অন্তর্গত বিষয়সমূহ
1. মানবিক বিদ্যা (Humanities)1. একটি প্রাচীন ভাষা বা একটি অন্য ভাষা যা শিক্ষার্থী আবশ্যিক অংশে গ্রহণ করেনি, 2. ইতিহাস,3. ভূগােল, 4.অর্থনীতি ও পৌরবিজ্ঞান, 5. মনােবিজ্ঞান ও তর্কশাস্ত্র, 6. গণিত, 7.সংগীত, 8. গার্হস্থ্য বিজ্ঞান।
2. বিজ্ঞান (Science)1. পদার্থবিদ্যা, 2. রসায়ন বিজ্ঞান, 3. জীববিদ্যা, 4. ভূগোল, 5. গণিত, 6. শারীরবিদ্যা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান।
3. কারিগরি বিদ্যা (Technical)1. ব্যাবহারিক গণিত ও জ্যামিতি অঙ্কন,2. ফলিত বিজ্ঞান, 3.প্রযুক্তিবিদ্যা মেকানিক্যাল ইফিনিয়ারিং অথবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।
4. বাণিজ্য (Commerce)1.ব্যাবহারিক বাণিজ্য, 2.বুককিপিং,3.বাণিজ্যিক ভূগোল বা প্রাথমিক অর্থনীতি ও পৌরবিজ্ঞান, 4.শর্টহ্যান্ড ও টাইপরাইটিং।
5. কৃষিবিদ্যা (Agricultural science)1.সাধারণ কৃষিবিজ্ঞান, 2.পশুপালন, 3.বাগান তৈরি ও কৃষিকাজ, 4.কৃষি বিষয়ক রসায়নশাস্ত্র ও উদ্ভিদবিদ্যা। 
6. চারুকলা (Fine arts)1.চারুকলার ইতিহাস,2.অঙ্কন ও ডিজাইন শিক্ষা,3. চিত্রাঙ্কন, 4.মডেলিং,5. সংগীত, 6.নৃত্যকলা | 
7. গার্হস্থ্য বিজ্ঞান (Home science)1.গার্হস্থ্য অর্থনীতি, 2.পুষ্টিবিদ্যা ও রন্ধনপ্রণালী, 3.মাতৃত্ব বিজ্ঞান ও শিশুপালন, 4.গৃহ পরিচালনা ও শুশূষা৷

 শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত বিভাগের বিষয়গুলি থেকে আরও একটি বিষয়কে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment