প্রাচীন বাংলা ভাষার ভাষাতাত্বিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো
উত্তর:
প্রাচীন বাংলা ভাষার কালসীমা হল আনুমানিক ৯০০ খ্রীঃ থেকে ১২০০ খ্রীঃ। কেউ কেউ ১৩৫০ খ্রীঃ পর্যন্ত সময়কেও এই প্রাচীন বাংলার সর্বশেষ সীমা বলে মনে করেন। প্রাচীন বাংলা ভাষার একমাত্র নিদর্শন বৌদ্ধসহজ সাধকদের লেখা ‘চর্যাগীতি পদাবলী’ বা ‘চর্যাপদ। মহামহােপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে এটি আবিষ্কার করেন।
প্রাচীন বাংলাভাষার বৈশিষ্ট্য গুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – (ক) ধ্বনিতাত্বিক বৈশিষ্ট্য (খ) রূপতাত্বিক বৈশিষ্ট্য।
(ক) ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপ:
(১) প্রাচীন বাংলা চর্যাপদে পদের অন্তঃস্থিত স্বরধ্বনি বর্তমান ছিল। যেমন- ভণতি > ভনই। পুস্তিকা > পােখিআ > পােখী।
(২) প্রাচীন বাংলা ভাষার পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক স্বরধ্বনি আছে, কিন্তু দুটি মিলেমিশে একটি স্বরে পরিণত হয়নি। যেমনঃ – উদাস > উআস। এখানে উ, আ দুটি স্বরধ্বনি সন্ধিবদ্ধ হয়নি, পৃথক পৃথক আছে।
(৩) প্রাচীন বাংলা ভাষায় পাশাপাশি অবস্থিত দুটি স্বরধ্বনির মাঝে শ্রুতিধ্বনি হিসাবে ‘য়’, ‘ব’ ধ্বনি এসে গেছে। যেমনঃ ‘য়’ আগম = নিকটে > নিঅডি > নিয়ড্ডি।
(৪) প্রাচীন বাংলায় দুই স্বরের মধ্যবর্তী একক মহাপ্রাণধ্বনি সাধারণত ‘হ’- কারে পরিণত হয়েছে। যেমনঃ- মহাসুখ > মহাসুহ । কথন > কহন ।
(৫) প্রাচীন বাংলা ভাষায় দুই স্বরের মধ্যবর্তী ব্যঞ্জন লােপের প্রচুর উদাহরণ আছে। যেমনঃ সকল > সঅল । সরােবর > সরােঅর ।
(৬) প্রাচীন বাংলায় উচ্চারণের বা ব্যবহারে ‘ন’ এবং ‘গ’ এর মধ্যে পার্থক্য ছিল না। তাই একই শব্দের বানানে কোথাও না কোথাও ‘ণ’ । যেমনঃ নাবী – ণাবী । নিয়- শিব ।
(৭) প্রাচীন বাংলা ভাষায় শ, ষ, স – এই তিন শিস ধ্বনির উচ্চারণে বা ব্যবহারে পার্থক্য ছিল না। তাই একই শব্দের বানানে কোখাও ‘স’ ‘ষ’ হয়েছে। যেমনঃ শূন – সূণ । শবরী – সবরী | সহজে – ষহজে ।
(খ) রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নরূপ:
(১) প্রাচীন বাংলা ভাষার রূপতত্বগত একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে, নাম পদে ষষ্ঠী বিভক্তির চিহ্ন ‘র’ বা ‘এর’ ব্যবহার। এই বৈশিষ্ট্যটি একমাত্র বাংলা ভাষাতেই মেলে। যেমনঃ রুখের তেন্তলি।
(২) প্রাচীন বাংলা ভাষায় করতিকারকে শূন্য বিভক্তি হয় – এখনকার বাংলার মতােই । যেমনঃ বলদ বিআএল।
(৩) প্রাচীন বাংলায় কর্মকারকে ও সম্প্রদানে ‘রে’ বিভক্তি বর্তমান । এটিও শুধু বাংলাতেই পাওয়া যায়। যেমনঃ তােহােরে অন্তরে।
(৪) প্রাচীন বাংলায় করণকারকে ‘তে’, ‘তেঁ’ বিভক্তি বর্তমান। এটিও বাংলা ভাষার একটি নিজস্ব লক্ষণ । যেমনঃ সুখ দুখেতেঁ নিচিত মরিঅই ।
(৫) প্রাচীন বাংলায় অধিকরণ কারকে ‘ত’ বিভক্তির প্রচুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এটি বাংলার নিজস্ব বিভক্তি। এছাড়া অধিকরণে ‘ই’, ‘এ’, ‘তে প্রভৃতি বিভক্তিও আছে। যেমন: টালত ঘর মাের ।(৬) প্রাচীন বাংলার চর্যাপদে অনেক গুলি প্রবাদ প্রবচন আছে। যেগুলিকে বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্য বলে বিবেচনা করা হয় । যেমনঃ (ক) অপ না মাংসে হরিনা বৈরি।
(৭) প্রাচীন বাংলার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলাে শব্দদ্বিত্ব । যেমনঃ উচা উচা পাবত।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর, ধন্য বাদ। কমেন্ট করলাম 02/08/2023 তারিখে।
নাম – ভবেশ
অনেক সুন্দর হয়েছে।
তারিখ ২৭-১০ ২০২৪