প্রাক-শৈশব এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র বক্তব্য আলােচনা করাে

প্রাক-শৈশব এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র বক্তব্য আলােচনা করাে Class 12 | Education | 8 Marks

উত্তর:-

প্রাক-শৈশব এবং প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-র বক্তব্য

 জাতীয় শিক্ষানীতির পঞ্চম অধ্যায়ে প্রাক্-শৈশব এবং প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। আলােচনার বিষয়গুলি উল্লেখ করা হল।

প্রাক-শৈশব শিশুকল্যাণ ও শিক্ষার পুনর্গঠন

জাতীয় শিক্ষানীতিতে শিশুর সামগ্রিক বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে পুষ্টি, স্বাস্থ্য, সামাজিক, মানসিক, শারীরিক, নৈতিক, প্রাক্ষোভিক উন্নয়ন ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাক্-শৈশব শিশুকল্যাণ ও শিক্ষাকে (Early Childhood Care and Education, ECCE) অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং সম্ভবমতাে সুসংহত শিশু বিকাশ কর্মসূচির সঙ্গে (Integrated Child Development Scheme, ICDS) যুক্ত করতে হবে। শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ, ইচ্ছার প্রকাশ ইত্যাদির দিকে লক্ষ রেখে লেখা, পড়া ও হিসাব শেখানাের জন্য আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির পরিবর্তে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে। 

প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন

জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে আলােচনায় সর্বজনীন শিক্ষা, শিশুকেন্দ্রিকতা, বিদ্যালয়ের সুযােগ ও বিধিমুক্ত শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।

[1] সর্বজনীন শিক্ষা : এই প্রসঙ্গে আলােচ্য বিষয়গুলি হল — 

i. সর্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব: 1960 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে 6-14 বছরের সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু বিভিন্ন কারণে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হয়নি। 

ii. সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা : সর্বজনীন প্রাথমিক | শিক্ষা জাতির পক্ষে অপরিহার্য। কেবল নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই শিক্ষার এই লক্ষ্যটি বাস্তবায়িত করতে হবে তাই নয়, সমগ্র বিশ্বে। জাতির সম্মানজনক অবস্থানের জন্য এটি বিশেষ প্রয়ােজন। 

iii. সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার বাস্তবায়ন: নিঃসন্দেহে এটি একটি কঠিন কাজ। প্রতিবছর জনসংখ্যার বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় এক কোটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যার সঙ্গে সর্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষার সমস্যাটি যুক্ত। 

1981 সালে প্রারম্ভিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল 21.7 লক্ষ৷ এই ধারা বজায় থাকলে 1990 সালে শিক্ষকের সংখ্যা হত 29 লক্ষ; কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। তাই যদি সর্বজনীন প্রারম্ভিক শিক্ষাকে বাস্তব রূপ দিতে হয়, তাহলে প্রয়ােজনীয় শিক্ষকের সংখ্যা হবে 44 লক্ষ৷ শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মান উন্নতির জন্যও প্রচুর। অর্থের প্রয়ােজন। প্রশ্ন হল, অর্থ কীভাবে সংগৃহীত হবে? এর জন্য প্রয়ােজন প্রারম্ভিক শিক্ষায় আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা।

[2] শিশুকেন্দ্রিকতা: এই প্রসঙ্গে মূল আলােচ্য বিষয়গুলি হল—

 i. শিশুকে স্বাগত জানানাে: শিশুকে বিদ্যালয়ে আসতে ও শিক্ষণে অনুপ্রেরণা জোগানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে শিশুদের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে উম্ন আহ্বানে তাদের স্বাগত জানাতে হবে। শিশুর বিকাশের সঙ্গে সংগতি রেখে জ্ঞানমূলক শিক্ষার প্রসার ও দক্ষতার অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ii. অনুন্নয়ন এবং শান্তিপ্রথা বাতিল করা: পরীক্ষায় অসফলতার জন্য অনুন্নয়ন ব্যবস্থা বাতিল করার সঙ্গে সঙ্গে দৈহিক শাস্তিবিধান বিদ্যালয় থেকে দূর করতে হবে। শিশুদের শিক্ষার সময় তাদেরই পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করতে হবে৷

[3] বিদ্যালয়ের সুযােগ : এই প্রসঙ্গে আলােচ্য বিষয়গুলি— 

i. অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড : এই কর্মসূচিতে ঠিক করা হয়, প্রতিটি বিদ্যালয়ে দুজন করে শিক্ষক থাকবেন। তার মধ্যে একজন হবেন মহিলা ও অপর জন হবেন পুরুষ। ধীরে ধীরে প্রতিটি শ্রেণির জন্য একজন করে শিক্ষকের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও থাকবে। ব্ল্যাকবাের্ড, মানচিত্র, নানারকম চার্ট, প্রয়ােজনীয় পুস্তক, রাজ্য ও জেলার মানচিত্র, বিজ্ঞানশিক্ষার জন্য সহজলভ্য সরঞ্জাম, খেলার জন্য ফুটবল, ভলিবল, রবারের বল, চক, ডাস্টার, ঘণ্টা ইত্যাদি। 

ii. অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড কার্যকরী করা: দেশের প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য অপারেশন ব্ল্যাকবাের্ড সমগ্র দেশে কার্যকরী করতে হবে। এর জন্য সরকার, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে।

[4] বিধিমুক্ত শিক্ষা : এই প্রসঙ্গে মূল আলােচ্য বিষয়গুলি হল— 

i. কাজের জন্য বিধিমুক্ত শিক্ষা : বিদ্যালয়-ছুট (drop-out) শিক্ষার্থীদের, বিদ্যালয়বিহীন অঞ্চলের শিশুদের, কর্মরত শিশু এবং যেসব বালিকা দিবা বিদ্যালয়ে পুরাে সময়ের জন্য উপস্থিত থাকতে পারে না, তাদের জন্য ব্যাপকভাবে বিধিবহির্ভূত ধারাবাহিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ii. বিধিমুক্ত শিক্ষার উপকরণ : এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে আধুনিক | প্রযুক্তিগত উপকরণ ব্যবহার করা হবে। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের। উপযুক্ত শিক্ষা-উপকরণ দেওয়া হবে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য আকর্ষণীয় পরিবেশ, খেলাধুলার ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের ভ্রমণের ব্যবস্থা ইত্যাদি থাকবে। 

iii. বিধিমুক্ত শিক্ষার পরিচালনা: এই শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে পঞ্চায়েত বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলিকে। এইসব সংস্থাকে যথেষ্ট পরিমাণে এবং যথাসময়ে আর্থিক সহায়তা করতে হবে l 1990 সালের মধ্যে যারা 11 বছরে উপনীত হবে, তারা যাতে 5 বছরের বিদ্যালয় শিক্ষা বা সেই মানের বিধিবহির্ভূত শিক্ষা অর্জন করতে পারে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment