প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা কী? এই শিক্ষাস্তরে কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে।

প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা কী? এই শিক্ষাস্তরে কমিশনের সুপারিশগুলি উল্লেখ করাে। Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks

উত্তর:-

প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা 

কমিশন বিভিন্ন কারণে প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছে। এই কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল

[1] বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিজনিত ঘাটতি পূরণ করা: বর্তমানে আর্থসামাজিক কারণে অনেক শিশুর বাবা-মা উভয়েই চাকুরিরত। ফলে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশের জন্য তারা প্রয়ােজনীয় সময় দিতে পারেন না৷ প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই ঘাটতি পূরণে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করে। 

[2] শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে প্রয়ােজনীয় ন্যূনতম পরিসরের ব্যবস্থা করা: নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের বাসস্থান, বিশেষ করে শহরাঞ্চল এতই ক্ষুদ্র যে সেখানে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশের জন্য ন্যূনতম পরিসরের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সমস্যার সমাধানে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। 

[3] শিশুর সুস্থ বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা: শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা অনেক বাবা-মায়ের পক্ষে সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকাদের সহযােগিতা শিশু-মনােবিজ্ঞানসম্মত। 

[4] অপচয় ও অনুন্নয়নের মাত্রা হ্রাস করা: সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব শিশুরা প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করেছে, প্রাথমিক শিক্ষায় তারা ভালাে ফল করেছে। তাদের মধ্যে অপচয় ও অনুন্নয়ন কম। 

প্ৰাকপ্রাথমিক শিক্ষাস্তরের ক্ষেত্রে কমিশনের সুপারিশসমূহু 

প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের প্রধান প্রধান সুপারিশগুলি হল— 

[1] উপযুক্ত বয়সের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আওতাভুক্ত করা: 3-5 বছরের ছেলেমেয়েদের 5% ও 5-6 বছরের ছেলেমেয়েদের 15% যাতে 1986 সালের মধ্যে এই শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় আসে, সে চেষ্টা করতে হবে। 

[2] রাজ্যভিত্তিক কেন্দ্রীয় প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: প্রতিটি রাজ্যে প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। 

[3] জেলাভিত্তিক প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত কেন্দ্র স্থাপন: প্রতিটি জেলায় প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনা, পরিদর্শন ও প্রসারের জন্য একটি করে কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এ ছাড়া, এখানে এই স্তরের শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রয়ােজনীয় উপকরণ এবং পুস্তক রচনার ব্যবস্থা করা হবে। 

[4] বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে উৎসাহদান: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই শিক্ষার প্রসারের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণে উৎসাহিত করা হবে এবং এদের সরকারি সাহায্য দেওয়া।

[5] প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম: এই স্তরের পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশন, কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ পর্ষদ নিয়ােজিত কমিটির সুপারিশের সঙ্গে একমত পােষণ করে। বিভিন্ন প্রকারের খেলাধুলা, নাচ-গান ও কাজের মধ্য দিয়ে ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের সাহায্যে নানাপ্রকার শিক্ষার ব্যবস্থা এখানে থাকবো। 

[6] নমনীয়তা: এই শিক্ষায় কোনাে কঠোর নীতি থাকবে না।

[7] প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন: জাতীয় ও রাজ্যস্তরে শিশু পরিচর্যা ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে যেসব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment