প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ | প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত কোঠারি কমিশনের সুপারিশ
অথবা, প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়? ওই স্তরের শিক্ষা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশসমূহ ব্যক্ত করাে। Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks
উত্তর:-
প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিবিভাগ
প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে কমিশন প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করেছে। আমাদের দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান দেখা যায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে সামগ্রিকভাবে নিম্নলিখিত উপায়ে ভাগ করা যায়।
[1] সরকারি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্ত দায়দায়িত্ব সরকার বহন করে। নিয়মকানুন, পাঠক্রম, পুস্তক ইত্যাদি সবই সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হয় না। বইপত্র বিনাপয়সায় সরকার সরবরাহ করে।
[2] বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার কোনাে আর্থিক সাহায্য করে না। বিদ্যালয় পরিচালনার ওপর সরকার কোনাে হস্তক্ষেপ করে না। বিদ্যালয় পরিচালনার যাবতীয় খরচ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হয়। শিক্ষার্থীদের বেতন দিয়ে পড়তে হয়।
[3] এক-শিক্ষক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: এই ধরনের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন মাত্র শিক্ষক বিশেষ পদ্ধতির সাহায্যে বা বিশেষ কোনাে প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে পড়ান গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রচুর।
[4] বুনিয়াদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: এখানে বুনিয়াদি পাঠক্রমকে অনুসরণ করা হয়। শিক্ষার্থীকে কোনাে বেতন দিতে হয় না। বর্তমানে এই ধরনের বিদ্যালয়ের সংখ্যা খুব কম।
[5] ধর্মীয় সংখা পরিচালিত প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান: বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা শিক্ষার মাধ্যমে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে। ধর্মীয় সংস্থা হিসেবে এগুলি সংবিধান স্বীকৃত কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে।
[6] প্রথামুক্ত প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন সময়ে পাঠদানের ব্যবস্থা থাকে, শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুযােগমতাে সময়সূচি স্থির করার সুযােগ পায়। বিভিন্ন সাক্ষরতাকেন্দ্র এবং নৈশ বিদ্যালয় এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদাহরণ।
আমাদের দেশে ওপরে উল্লিখিত প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠান (যেমন—কর্পোরেশন) এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।
প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত কোঠারি কমিশনের সুপারিশ
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে কমিশনের প্রধান প্রধান সুপারিশগুলি হল
1) সাংবিধানিক নির্দেশ পালন করা:
i. সাংবিধানিক নির্দেশমতাে 14 বছর পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা রাষ্ট্র করবে।
ii. অনুন্নয়ন ও অপচয় এমনভাবে কমিয়ে আনতে হবে যাতে বিদ্যালয়ে যারা ভরতি হয় তাদের মধ্যে শতকরা 80 জন শিশু সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পোঁছােতে পারে। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষা শেষে যাদের বয়স 14 বছর পূর্ণ হয়নি এবং যারা বৃত্তিশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়, তাদের জন্য সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
iii. যেসব ছেলেমেয়ের বয়স 1 থেকে 14 বছরের মধ্যে, তারা যদি কোনাে কারণে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করতে না পারে, তাহলে তাদের জন্য কমপক্ষে এক বছরের সাক্ষরতা শিবিরের ব্যবস্থা করতে হবে। এই ক্লাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
iv. নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা এমনভাবে করা হবে যাতে কোনাে শিক্ষার্থীকে নিম্নপ্রাথমিক শিক্ষার জন্য এক মাইলের বেশি দূরে যেতে না হয়। উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব শিক্ষার্থীর বাসস্থান থেকে 1-3 মাইলের মধ্যে হবে। একে সর্বজনীন বিদ্যালয় ব্যবস্থা বলা হবে৷
[2] অপচয় ও অনিয়ন্ত্রণ হ্রাস করা: পরবর্তী দশ বছরের শিক্ষা পরিকল্পনায় সবচেয়ে জরুরি কার্যসূচি হবে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার অপচয় ও অনুন্নয়ন রােধ করা। এর জন্য
i. প্রথম শ্রেণিতে অপচয় রােধ করার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিকে একটি ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হবে। একে ‘ungraded teaching ইউনিট বলা হবে। প্রথম শ্রেণিতে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে৷
ii. অন্যান্য শ্রেণিতে অপচয় রােধের জন্য বিদ্যালয়গুলির শিক্ষামানের উন্নতি, আংশিক সময়ের শিক্ষা ও অভিভাবকদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
[3] আংশিক সময়ের শিক্ষা: যেসব শিশু নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষ করে আরও পড়তে চায়, কিন্তু আর্থিক বা অন্য কোনাে কারণে পুরাে সময়ের শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না, তাদের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
[4] নারীশিক্ষার প্রসার: নারীশিক্ষার দিকে কমিশন বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলেছে। তাদের জন্য সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্পর্কেও নজর রাখতে হবে।
[5] ভাষা সংক্রান্ত সুপারিশ: ভাষা প্রসঙ্গে কমিশনের বক্তব্য, প্রাথমিক স্তরে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা হবে শিক্ষার মাধ্যম। কোনাে শ্রেণিতে দশজন এবং বিদ্যালয়ে মােট চল্লিশ জন ভিন্নভাষী ছাত্র থাকলে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দিতে হবে। পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাতৃভাষার সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা (হিন্দি) অথবা ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হবে।
[6] সর্বাত্মক পরিচয়পত্র চালু করা: কমিশন উচ্চপ্রাথমিক স্তরে মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের সুপারিশ করে প্রতিটি ছাত্রের জন্য সর্বাত্মক পরিচয়পত্র (Cumulative Record Card) রাখার প্রস্তাব করেছে।
[7] কর্ম অভিজ্ঞতা ও সমাজসেবা: সমগ্র প্রাথমিক স্তরে সমাজসেবার কর্মসূচি গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীর কর্ম-অভিজ্ঞতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Nice