প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, কাঠামাে এবং পাঠক্রম সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের সুপারিশসমূহ উল্লেখ করাে। Class 12 | Education (কোঠারি কমিশন) | 8 Marks
উত্তর:-
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য, কাঠামাে ও পাঠক্রম সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশসমূহ
শিক্ষাকাঠামাের প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। একে আরম্ভিক শিক্ষাও বলা হয়। লক্ষ্য: প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্যগুলি হল—
[1] শিশুর স্বাস্থ্যাভ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে, যেমন—শিশুর মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তােলা, সামাজিক সচেতনতার মনােভাব সঞ্চার করা, শিক্ষার্থীর প্রাক্ষোভিক বিকাশ ও পরিনমন, শিশুর নান্দনিক, বৌদ্ধিক ও সৃজনশীল বিকাশ প্রভৃতিতে সাহায্য করা।
[2] শিশুকে পরিবেশ সম্পর্কিত বিষয়ে কৌতুহলী করে তােলা।
[3] ন্যায়-অন্যায়, ভালােমন্দ, পাপপুণ্য ইত্যাদির সঠিক বিচারের জন্য নীতিবােধ গড়ে তােলা।
[4] শিশুর মধ্যে পরিচ্ছন্ন চিন্তার বিকাশ ঘটানাে এবং শিশুকে সঠিক ও স্পষ্ট লিখতে ও উচ্চারণ করতে সক্ষম করা।
[5] নিয়মানুবর্তিতা, সংস্কারমুক্ত খােলা মন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও পােষণ, জাতীয় সংহতি, জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিকাশে সাহায্য করা।
কাঠামাে: কমিশন প্রাথমিক শিক্ষাস্তরকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করার কথা বলেছে। একটি হল নিম্নপ্রাথমিক স্তর এবং অন্যটি হল উচ্চপ্রাথমিক স্তর।
শিক্ষাস্তরের নাম | শ্রেণির নাম | শিক্ষার্থীর বয়স |
নিম্নপ্রাথমিক স্তর | প্রথমদ্বিতীয় | 6+ বছর7+ বছর |
তৃতীয় | 8+ বছর | |
চতুর্থ | 9+ বছর | |
উচ্চপ্রাথমিক স্তর | পঞ্চম | 10+ বছর |
ষষ্ঠ | 11+ বছর | |
সপ্তম | 12+ বছর | |
অষ্টম | 13+ বছর |
পাঠক্রম: কমিশন প্রাথমিক শিক্ষাকে দুটি স্তরে বিভক্ত করেছে [1] নিম্নপ্রাথমিক শিক্ষাস্তর (প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণি) এবং [2] উচ্চপ্রাথমিক স্তর (পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি)। উভয়ের জন্যেই পৃথক পাঠক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
[1] নিম্নপ্রাথমিক শিক্ষাস্তর (I-IV or V): কমিশন নিম্নপ্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে নীচের বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করেছে—
i. ভাষা: মাতৃভাষা অথবা একটি আঞ্চলিক ভাষা।
ii. গণিত: গণিতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ভাষা ও গণিতকে শিখনের মৌলিক দক্ষতা হিসেবে বিচার করতে হবে।
iii. পরিবেশ সম্বন্ধে ধারণা: III & IV-এর ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান পাঠের ব্যবস্থা থাকা দরকার।
iv. সৃজনশীল কাজ: শিশুদের সৃষ্টিশীলতা প্রকাশের জন্য সংগীত, কলা, নাটক ও বিভিন্ন হাতের কাজ করাতে হবে।
V. কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা: কাগজ কাটা, কার্ডবাের্ড কাটা ও ভাজ করা, মাটি বা প্লস্টিসিন দিয়ে মডেল তৈরি, সুতাে কাটার কাজ, ছুঁচের কাজ, রান্নার কাজ, বাগান তৈরি ইত্যাদি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই স্তরে সমাজসেবামূলক কাজের মধ্যে পড়ে ক্লাসঘর পরিষ্কার, স্কুল সাজানাে ইত্যাদি।
vi. স্বাস্থ্যশিক্ষা: এই স্তরে শিশুদের ভালাে স্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তােলার জন্য শিক্ষা দেওয়া দরকার।
[2] উচ্চপ্রাথমিক শিক্ষাস্তর (V-VII or VIII): উচ্চপ্রাথমিক স্তরের পাঠক্রমে কমিশনের সুপারিশগুলি হল—
i. আবশ্যিক দুটি ভাষা: a) মাতৃভাষা অথবা আঞ্চলিক ভাষা, b) হিন্দি অথবা ইংরেজি।
ii. গণিত: প্রাথমিক স্তরে গণিতের মধ্যে পাটিগণিত, বীজগণিত ও জ্যামিতি পড়তে হবে।
iii. বিজ্ঞান: বিজ্ঞানে আগের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে থাকবে—পদার্থবিদ্যা, ভূবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান। ষষ্ঠ (VI) শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে থাকবে—পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিজ্ঞান৷ সপ্তম (VII) শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে থাকবে—পদার্থবিদ্যা, জীবনবিজ্ঞান, রসায়ন, জ্যোতির্বিদ্যা।
iv. সমাজবিজ্ঞান: এই স্তরে সমাজবিজ্ঞানের পাঠক্রমে থাকবে ইতিহাস, ভূগােল ও পৌরবিজ্ঞান।
v. চারুকলা: চারুকলার পাঠক্রমের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—অঙ্কন, চিত্রকলা, ভাস্কর্য (art and craft) প্রভৃতি হাতের কাজ।
vi. কর্মশিক্ষা ও সমাজসেবা: এই স্তরে কর্মশিক্ষার মধ্যে রয়েছে বাঁশের কাজ, চামড়ার কাজ, মাটির কাজ, ছুঁচের কাজ, সেলাই, বাগান তৈরি, মডেল তৈরি, কৃষি খামারে কাজ ইত্যাদি। এই স্তরে বুনিয়াদি শিক্ষার অনুকরণে সমাজসেবামূলক কাজ সংগঠিত করা হবে। এ ছাড়া এই কাজগুলির জন্য বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত রাখতে হবে বলেও কমিশন সুপারিশ করে।
vii. শারীরশিক্ষা: এই স্তরের প্রথম দিকে ছেলে ও মেয়েদের বিভিন্ন শারীরশিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। শেষ 5 বছরে শিক্ষার্থীদের রুচি ও আগ্রহ অনুযায়ী খেলাধুলাের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
viii. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা: সপ্তাহে একটি অথবা দুটি পিরিয়ড এই বিষয়ের শিক্ষার জন্য Time-table-এ রাখতে হবে। প্রাথমিক স্তরে বিভিন্ন নীতিগল্প বিধেয়, বিভিন্ন ধর্মের নীতিশিক্ষা দিতে হবে।
সংক্ষেপে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে বলা যায়, এই শিক্ষা প্রাথমিক স্তরে খেলাধুলাে ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেহের সুষম বিকাশে সাহায্য করে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সৃজনশীল এবং উৎপাদনমূলক ক্ষমতার বিকাশ ঘটায় এবং নানা ধরনের অভিজ্ঞতামূলক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মানসিকতার উন্নতি ঘটায়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।