পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের তাপবলয়গুলির পরিচয় দাও। ? Class 10 | Geography | 5 Marks
উত্তর: পৃথিবীর তাপবলয় তাপমাত্রার তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠকে মােট পাঁচটি তাপবলয় বা তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—
1. উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল
অবস্থান: নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 23 1⁄2° অক্ষরেখা পর্যন্ত। বিস্তৃত স্থানে অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলে। 27°সে বা 80°ফা সমােয়রেখাকে অনেকসময় উয়মণ্ডলের সীমারেখা ধরা হয়। সেক্ষেত্রে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে 30° অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ উষ্ণমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়।
কারণ: [i] সূর্যরশ্মির পতন: এখানকার প্রতিটি স্থানে বছরে অন্তত দু-দিন মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং বছরের অন্যান্য দিনও সূর্যরশ্মি এখানে বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হাসবৃদ্ধি: সারাবছর এখানে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি খুব কম। হয়। তাই সারাবছর এখানকার বায়ুর তাপমাত্রা অন্যান্য অঞলের তুলনায় বেশি। এজন্য এই অঞ্চলটির নাম উয়ুমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল।বৈশিষ্ট্য: [i] পর্যাপ্ত সূর্যরশ্মি: উষ্ণমণ্ডলে সারাবছর যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যরশ্মি পাওয়া যায়। [ii] গড় তাপমাত্রা: এখানকার গড় তাপমাত্রা সারাবছর বেশি (প্রায় 27°সে) থাকে। এ ছাড়া, শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্যও কম হয়। [iii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের পার্থক্য: এখানে সারাবছর দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যে খুব বেশি তারতম্য হয় না। [iv] ঋতুপরিবর্তন: এই অঞলের মধ্যভাগে ঋতুপরিবর্তন হয় না বললেই চলে।
2.- 3. উত্তর নাতিশীতোষ্ণমন্ডল এবং দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল
অবস্থান: কর্কটক্রান্তিরেখা এবং মকরক্রান্তিরেখা থেকে যথাক্রমে। সুমেরুবৃত্ত এবং কুমেরুবৃত্ত পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম নাতিশীতোষ্ণমন্ডল । এর মধ্যে কর্কটক্রান্তিরেখা (23 1⁄2° উ.) থেকে সুমেরুবৃত্ত (66 1⁄2° উ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম উত্তর নাতিশীতোষ্ণমন্ডল এবং মকরক্রান্তিরেখা (23 1⁄2° দ.) থেকে কুমেরুবৃত্ত (66 1⁄2° দ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলটির নাম দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল। সমোষ্ণরেখার হিসাবে 27° সে থেকে 0°সে সমোষ্ণরেখার মাঝখানের স্থানসমূহ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল অন্তর্গত। কারণ: [i] সূর্যরশ্মির পতন: সূর্যরশ্মি এখানে খুব বেশি তির্যকভাবে পড়ে না। উষ্ণমণ্ডলের তুলনায় সূর্যরশ্মি কম পাওয়া গেলেও হিমমণ্ডলের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। [ii] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি: দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাসবৃদ্ধি মাঝামাঝি ধরনের হয়। এজন্য এই অঞলে উষ্ণতাও খুব বেশি বা কম হয় না, মধ্যম প্রকৃতির হয়। ফলে এখানে বছরের অধিকাংশ সময় নাতিশীতােষ্ম অবস্থা বিরাজ করে।
বৈশিষ্ট্য: [i] গড় উন্নতা: সারাবছর এখানকার গড় উষ্ণতা 0° সে। থেকে 27° সে-এর মধ্যে থাকে। [ii] ঋতুর তীব্রতা: এখানে গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল কোনােটিই তীব্র নয়। উপবিভাগ: উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে এই নাতিশীতোষ্ণমন্ডলকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায়—[i] উম্ন নাতিশীতোষ্ণমন্ডল: নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের যে অংশটি উষ্ণমণ্ডলসংলগ্ন অর্থাৎ কর্কটক্রান্তিরেখা ও মকরক্রান্তিরেখার দিকে থাকে (30° থেকে 45° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ) সেখানে উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বেশি বলে ওই অংশটিকে উয়। নাতিশীতোষ্ণমন্ডল বলে। [ii] শীতল নাতিশীতোষ্ণমন্ডল: নাতিশীতোষ্ণমন্ডলের যে অংশটি হিমমণ্ডলসংলগ্ন (45–661⁄2° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানসমূহ), অর্থাৎ মেরুবৃত্তের দিকে থাকে, সেখানে উয়তা অপেক্ষাকৃত কম বলে ওই অংশটিকে শীতল নাতিশীতোষ্ণমন্ডল বলে।
4. – 5. উত্তর হিমমণ্ডল এবং দক্ষিণ হিমমণ্ডল
অবস্থান: উভয় গােলার্ধে দুই মেরুবৃত্ত থেকে মেরুবিন্দু পর্যন্ত অঞ্চলকে বলে হিমমণ্ডল। এর মধ্যে সুমেরুবৃত্ত (661⁄2° উ.) থেকে সমেরবিন্দু (90° উ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের নাম উত্তর হিমমণ্ডল এবং কুমেরুবৃত্ত (661⁄2° দ.) থেকে কুমেরুবিন্দু (90° দ.) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞলের নাম দক্ষিণ হিমমণ্ডল।
কারণ: উভয় মেরুর চারদিকে সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে এবং বছরের বেশ কিছুটা সময় সূর্যরশ্মি একেবারেই পাওয়া যায় না। এজন্য এই অঞ্চলের উন্নতা খুবই কম এবং বছরের অধিকাংশ সময়। ভুমি হিমময় বা বরফাবৃত থাকে। তাই এই অঞ্চলের নাম হিমমণ্ডল। হিমমণ্ডলের সীমারেখা 0°সে সমােয়রেখা থেকে দুই মেরুবিন্দু পর্যন্ত।
বৈশিষ্ট্য: [i] দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য: হিমমণ্ডলে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্যের তারতম্য অত্যন্ত বেশি। দুই মেরুবিন্দুতে একটানা ছয় মাস। দিন ও ছয় মাস রাত হয়। [ii] বায়ুমণ্ডলের উত্তপ্ততা: সূর্যরশ্মি অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ায় একটানা ছয় মাস দিন থাকার সময়ও। বায়ুমণ্ডল বিশেষ একটা উত্তপ্ত হয় না। [iii] বার্ষিক গড় তাপমাত্রা: এখানকার বেশিরভাগ জায়গায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা 0° সে-এর কম থাকে এবং বছরের অধিকাংশ সময় তুষারপাত হয়। [iv] মেরুজ্যোতির প্রভাব: একটানা রাত্রিকালীন সময়ে অরােরা (aurora) বা মেরুজ্যোতির প্রভাবে এই অঞ্চল মৃদু আলােকিত হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।