রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের প্রতিবেদনকে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান দলিল” বলা হয় কেন তা লেখাে।

রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের প্রতিবেদনকে ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান দলিল” বলা হয় কেন তা লেখাে।  Class 12 | Education | 8 Marks

উত্তর:

রাধাকৃষ্মণ কমিশন: ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান দলিল

 স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন তথা রাধাকৃয়ণ কমিশনের প্রতিবেদনটি ছিল ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে একটি মূল্যবান দলিল। এই দলিলটিতে উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে প্রয়ােজনীয় প্রায় সব ধরনের সুপারিশ লিপিবদ্ধ ছিল। সেগুলি নীচে সংক্ষেপে আলােচনা করা হল— 

[1] জাতীয় লক্ষ্য : কমিশন উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র, ন্যায়পরায়ণতা, স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববােধ, ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ ও ঐতিহ্য রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছে। এগুলির মধ্য দিয়ে জাতীয় লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। 

[2] নতুন ভারত : কমিশন অতি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘােষণা করেছে, দেশের উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান হল বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এগিয়ে আসতে হবে নতুন ভারত গঠনের মৌলিক দায়িত্বগ্রহণের উদ্দেশ্যে |

[3] নেতৃত্ব সরবরাহ: বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেশের জন্য প্রয়ােজনীয় দায়িত্বশীল নেতৃত্ব সরবরাহ করবে। 

[4] স্তর সৃষ্টি: এ ছাড়া কমিশনের প্রতিবেদনে সদ্য স্বাধীন দেশের প্রয়ােজন মেটাতে সাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, পেশাগত দিক ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণির উচ্চশিক্ষার স্তর সৃষ্টিতে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আহ্বান জানানাে হয়েছে। 

[5] পাশ্চাত্যশিক্ষার সংযােজন: গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তােলা এবং কৃষিশিক্ষার উন্নতিসাধনের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের শিল্প, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান শিক্ষা থেকে গ্রহণযােগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে ভারতীয় শিক্ষায় সংযােজনের কথাও কমিশন উল্লেখ করেছে। 

[6] জুটি দুরীকরণ : কমিশন ভারতের প্রচলিত শিক্ষার বিভিন্ন জুটি তুলে ধরেছে। যেমন—নিম্নমুখী শিক্ষার মান, অবহেলিত গ্রামীণ শিক্ষা, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ইত্যাদি। কমিশন এইসব ত্রুটি দূরীকরণের জন্যও কয়েকটি সুপরামর্শ দিয়েছে। 

[7] প্রয়ােজনীয় সুপারিশ : অর্থ বণ্টনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন এবং গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সুপারিশ—এই দুটি নিঃসন্দেহে প্রয়ােজনীয় এবং প্রশংসনীয়। 

[8] বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়াস : স্নাতকোত্তর শিক্ষা স্তরের উন্নয়নের প্রসঙ্গে গ্রন্থাগারের উন্নতিবিধান, বিজ্ঞান ও বীক্ষণাগারের উন্নয়নসাধন, গবেষণায় উন্নতিবিধান, শিক্ষকদের কোয়ার্টার নির্মাণ, ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য উন্নত বেতন কাঠামাে, সিনিয়র ও জুনিয়র ফেলােশিপএর ব্যবস্থা, সরকার অনুমােদিত মহাবিদ্যালয়গুলির উন্নতিসাধন প্রভৃতি নানা বিষয়ে প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। [9] নারীশিক্ষা কমিশন নারীশিক্ষা সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তারই প্রতিধিবনি আমরা নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে (1986) পাই। 

[10] গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় : কমিশন গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে যে সুপারিশগুলি করেছে, সেগুলিকে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে মেনে নেওয়া হয়েছে।

[11] ধারাবাহিক মূল্যায়ন; কমিশন পরীক্ষাব্যবস্থার যেসব ত্রুটিগুলির কথা উল্লেখ করেছিল, তার সংস্কারের জন্য এই কমিশন বর্তমানে কয়েকটি ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। সুতরাং, সবদিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, রাধাকৃষণ কমিশনের সুপারিশগুলি এতই সর্বজনীন যে সেগুলি কোনাে দেশের যেকোনাে কালের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment