ঋক বৈদিক যুগের ধর্মীয় জীবন সংক্ষেপে আলোচনা করো ?

প্রশ্ন : ঋক বৈদিক যুগের ধর্মীয় জীবন সংক্ষেপে আলোচনা করো ?
অথবা, ঋগবৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনের নানা দিক এবং পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনের নানা দিকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর:

ঋগবৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবন :

আর্যরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে দেবতাঙ্ঞানে পূজা করত। সূর্যোদয়, চন্দ্রোদয়, বৃষ্টিপাত ও বন্যা-সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনার ওপর দেবত্ব আরােপ করে। ঋগবৈদিক আর্যদের ধর্মজীবনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ—

1. সর্বপ্রাণবাদ: ঋগবৈদিক যুগে আর্যরা আদিম সর্বপ্রাণবাদে অর্থাৎ সর্বত্র প্রাণের অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। এই বিশ্বব্রয়াণ্ডের চেতন-অবচেতন সমস্ত পদার্থের মধ্যেই তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করত।

2. পুরুষ দেবতার প্রাধান্য: ঋবৈদিক যুগে পুরুষ দেবতাদেরই প্রাধান্য ছিল। নারী দেবতারা সংখ্যায় ও গুরুত্বে ছিলেন নিতান্তই কম। তবে ঋগ্‌বৈদিক ঋষিদের কাছে কোনাে একজন দেবতা বিশেষভাবে গুরুত্ব পাননি বা সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হননি।

3. অপৌত্তলিকতাবাদ ও একেশ্বরবাদ: বহু দেবদেবীর আরাধনা করলেও আর্যরা পৌত্তলিক ছিল না। ঋগবৈদিক আর্যরা এক-এক সময় এক-এক দেবতাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বা সর্বশক্তিমান বলে মনে করত, যা অনেক একেশ্বরবাদ (henotheism) নামে পরিচিত।

4. যাগযজ্ঞ ও বলিদান: আর্যদের ধর্মের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল যজ্ঞানুষ্ঠান ও বলিদান প্রথা। দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য যজ্ঞ উপলক্ষ্যে যড় বলি দেওয়া হত। যজ্ঞানুষ্ঠান পরিচালনার একচেটিয়া অধিকার ছিল ব্রাম্মণ পুরােহিতদের হাতে।

5.জন্মান্তরবাদ: আর্যরা বিশ্বাস করত যে মৃত্যুর পর কর্মফল ভােগ করার জন্য মানুষ পুনরায় জন্মগ্রহণ করে।

6.আরাধ্য দেবতাগণ: ঋগবৈদিক যুগে আর্যরা বহু দেবদেবীর পূজায় বিশ্বাসী ছিল। ঋাগবৈদিক যুগের বিভিন্ন দেবতাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিলেন—

ইন্দ্র : দেবতাদের রাজা। ইন্দ্র যুদ্ধ ও বজ্রের দেবতা।
অগ্নি : দেবতাদের পুরােহিত, যজ্ঞের আহুতি গ্রহণকারী ও মানুষের মধ্যে সংযােগরক্ষাকারী দেবতা।
বরুণ : পাপপুণ্যের ধারক।
মিত্র : সন্ধি, শপথ ও প্রতিজ্ঞা রক্ষার দেবতা।
বায়ু : বাতাসের দেবতা।
সােম : বৃক্ষাদির দেবতা।
মরুৎ : ঝড়ের দেবতা।
পর্জন্য : বৃষ্টির দেবতা।
সূর্য : আলাের দেবতা।
যম : মৃত্যুর দেবতা।
রুদ্র: ধবংসের দেবতা।

পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবন :

পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের ধর্মীয় জীবনে যাগযজ্ঞ ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলি জটিল রূপ ধারণ করে। এসময়ে আন্তরিক ভক্তি ও ধর্মীয় ভাবনার উধের্ব স্থান পেয়েছিল ধর্মের আচার অনুষ্ঠানগুলি।

1. পুরোহিতদের সংখ্যা ও মর্যাদা বৃদ্ধি: যাগযজ্ঞের জটিলতা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরোহিত শ্রেণির সংখ্যা ও মর্যাদা দুই ই বৃদ্ধি পায়। কাজের বিভিন্নতা অনুযায়ী আলাদা আলাদা পুরােহিতের প্রয়ােজন দেখা দেয়। যেমন—

হােত্রী: যিনি মন্ত্রপাঠ করে দেবতাকে আহবান করতেন।
উদগাত্রী: যিনি সামবেদ গাইতেন।
অধবর্যু: যিনি পুথি থেকে মন্ত্র উচ্চারণ করতেন।
পুরােহিত: যিনি মন্ত্র পাঠ করার সঙ্গে যজ্ঞে হবি বা ঘৃত দিতেন৷

2.দেবতাদের গুরুত্বের ক্ষেত্রে পরিবর্তন: পরবর্তী বৈদিক যুগে প্রজাপতি ব্রহ্মা সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন। ঋগবৈদিক যুগের গুরুত্বহীন দেবতা বিষ্ণুর মর্যাদাও এ যুগে বাড়ে। ঋগ্‌বৈদিক দেবতা রুদ্র এ যুগে শিবে রূপান্তরিত হন। এ যুগে ইন্দ্রের গুরুত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

3. একেশ্বরবাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি: একেশ্বরবাদী ধারণা এ যুগে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এসময় থেকেই মানুষের দৃঢ় ধারণা হয় যে, ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। বহু দেবতার মধ্যে দিয়ে একই ঈশ্বর বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হন। এ যুগের ধারণা ছিল প্রজাপতি ব্রয়াই হলেন এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর।

4. নতুন দেবদেবীগণের আবির্ভাব: পূর্ববর্তী যুগের দেব দেবীদের পাশাপাশি এ যুগে নতুন কয়েকজন দেবদেবীর পুজো শুরু হয়। যেমন—প্রজাপতি, কুবের, জয়ন্ত, গরুড়, নারায়ণ, বাসুদেব, উমা, হৈমবতী প্রমুখ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment