শিক্ষাবিদ গ্যাগনে শিক্ষাকে কয় ভাগে ভাগ করেছে ও কি কি

উত্তরঃ-

আমেরিকান শিক্ষাবিদ Robert M. Gagne 1970 সালে ‘The Conditions of Learning’ শিরোনামে ক্রমোচ্চ পর্যায়ের ভিত্তিতে শিথন কে ৮ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন। যথা-

১) সংকেত শিখন (Signal Learning):

সংকেত শিখন হল এমন এক শিখন, যার দ্বারা কোন একটি স্বাভাবিক উদ্দীপকের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অন্য একটি উদ্দীপক (কৃত্তিম উদ্দীপক) দ্বারা প্রাণীর মধ্যে সৃষ্টি করা যায়। এটি সবথেকে সরল প্রকৃতির শিখন। এটি প্রকৃতপক্ষে প্রাচীন অনুবর্তন জনিত শিখন। আচরণবাদী মনোবিদ প্যাভলভ সর্বপ্রথম এটিকে বর্ণনা করেছিলেন।

২) উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া শিখন (Stimulus Response Learning):

উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া শিখন হল এমন এক শিখন প্রক্রিয়া যেখানে শক্তিশালী উদ্দীপকের সাহায্যে বাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা হয়। এটি প্রকৃতপক্ষে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন জনিত শিখন। এর প্রবর্তক হলেন বি. এফ. স্কিনার।

৩) শৃঙ্খলিতকরণ শিখন (Chaining Learning) :

শৃঙ্খলিতকরণ শিখন হল অত্যন্ত উন্নত মানের এমন এক শিখন যেখানে প্রাণী এমন এক প্রকার দক্ষতা অর্জন করে, যার সাহায্যে সে দুই বা তার অধিক পূর্বার্জিত উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়া বন্ধনকে একটি সংযোজিত পর্যায়ক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। এই শিখন প্রক্রিয়ার দ্বারা অতি জটিল চিন্তন কৰ্মসমন্বয় দক্ষতা অর্জিত হয়। যেমন- সাইকেল চালানো বা পিয়ানো বাজানো ইত্যাদি। 

৪) বাচনিক বা ভাষাগত সংযোগ সাধনমূলক শিখন (Verbal Associative Learning): বাচনিক বা ভাষাগত সংযোগ সাধনমূলক শিখন হল এক ধরণের শৃঙ্খলিতকরণ শিখন, যা বিভিন্ন বাচনিক বা ভাষাগত উপাদানের মধ্যে সংযোগসাধন ঘটিয়ে ভাষাগত দক্ষতা অর্জনে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।

৫) বিনিশ্চয় শিখন বা পার্থক্যকরণমূলক শিখন (Discrimination Learning) :

বিনিশ্চয় শিখন বা পার্থক্যকরণমূলক শিখন হল সেই শিখন প্রক্রিয়া যার দ্বারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে একই ধরণের একগুচ্ছ উদ্দীপকের প্রতি সঠিক অথচ ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া করার সামর্থ্য বা দক্ষতা গড়ে তোলা হয়।

৬) ধারণা শিখন (Concept Learning):

একই শ্রেণির অন্তর্গত বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্তমান তার অভিজ্ঞতাই হল ধারণা। আর বস্তু সম্পর্কে ধারণা গঠনের মধ্য দিয়ে প্রাণীর মধ্যে যে শিখন হয় তাকে বলে ধারণার শিখন। কোন বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে হলে আগে সেই শ্রেণির সকল বিষয় বা বস্তুকে ভালো করে প্রত্যক্ষণ করতে হয়।

৭) নিয়ম শিখন (Rule Learning) :

নিয়ম শিখন হল সেই শিখন যার দ্বারা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধারণার মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক খুঁজে পায় এবং সাধারণ নিয়মাবলী বা প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে অবহিত হয়।

৮) সমস্যাসমাধানমূলক শিখন (Problem Solving Learning):

কোন একটি সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে বার বার আত্মপ্রচেষ্টার দ্বারা একাধিক প্রতিক্রিয়ার মধ্য থেকে ভুল প্রচেষ্টাগুলিকে ত্যাগ করে এবং সঠিক প্রচেষ্টাগুলিকে গ্রহণ করে, সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে প্রাণীর মধ্যে যে শিখন হয়, তাকে বলে সমস্যাসমাধানমূলক শিখন। মনোবিদ রবার্ট এম. গ্যাগনির মতে এই শিখন সবথেকে জটিল।

Read Also

শিখন কাকে বলে | শিখনে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান গুলো কি কি

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment