সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।
অথবা,
সাম্রাজ্যবাদ কাকে বলে? সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের বিস্তারের কারণগুলি লেখ। Mark 8 | H.S (Class 12)
উত্তর:-
সাম্রাজ্যবাদের সংজ্ঞা:- সাম্রাজ্যবাদ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Imperialism’ ইম্পেরিয়ালিজম। এই ‘Imperialism’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘ইম্পেরিয়াম’ থেকে। প্রথম দিকে সাম্রাজ্যবাদের অর্থ ছিল সামরিক কর্তৃত্ব। পরবর্তীকালে এর অর্থ দাঁড়ায় বৃহৎ রাষ্ট্রের দ্বারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের ওপর উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সাম্রাজ্যবাদ বলতে সাধারণভাবে বােঝায় যখন কোন একটি শক্তিশালী দেশ অপর একটি দুর্বল দেশের উপর বলপূর্বক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে নিজ স্বার্থে শাসন ও শােষণ করে। লেনিনের মতে-সাম্রাজ্যবাদ হল ‘পুঁজিবাদের একচেটিয়া পর্যায়’ জে.এ.হবসনের মতে, প্রাথমিক স্তরে জাতীয়তাবােধ অন্য দেশে উপনিবেশ গড়ে তােলার প্রেরণা জোগায়, যা পরবর্তীকালে সাম্রাজ্যবাদের রুপ নেয়।
সাম্রাজ্যবাদ উদ্ভবের কারণ:- ইউরােপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি কর্তৃক ঔপনিবেশিক সম্প্রসারনের প্রধান উদ্দেশ্য নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্যের প্রসার ঘটানাে। তবে অধ্যাপক জেমস জোর বলেন যে, সম্ভবত কোন একটি অভিমত সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারনের জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী করা যায়। বিভিন্ন পন্ডিত ও ঐতিহাসিক আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের প্রসারে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেন। যেমন-
রাজনৈতিক কারণ:-
(ক) উগ্র জাতীয়তাবাদ:- 1870 খ্রিস্টাব্দের পর ইউরােপের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবােধ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। প্রতিটি জাতি নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে ফলে শুরু হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এই পরিস্থিতিতে ইউরােপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।
(খ) ক্ষমতার আকাক্ষা:- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সম্মান, প্রতিপত্তি ও সমতা বৃদ্ধির জন্য ইউরােপের বিভিন্ন দেশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়।
অর্থনৈতিক কারণ:- বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারে অর্থনৈতিক কারণগুলিকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। যেমন-
(ক) পণ্য বিক্রির বাজার:- অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ইংল্যান্ড এবং পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিবিপ্লব ঘটলে তাদের কারখানায় বিপুল পরিমাণে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন হতে শুরু করে। যেহেতু ইউরােপের সব দেশেই শিল্প বিপ্লব হযে গেছে তাই উদ্বৃত্ত পণ্য বিক্রির জন্য ইউরােপে শিল্পোন্নত দেশগুলি এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাম্রাজ্যবাদের প্রসার ঘটায়।
(খ) কাঁচামাল সংগ্রহ:- শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরােপের শিল্পোন্নত দেশগুলির কারখানায় অল্প সময়ে প্রচুর পরিমাণে পণ্য উৎপাদিত হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ কাঁচামালের প্রয়ােজন হয়। এই বিপুল কাঁচামালের জোগান নিজ দেশ থেকে সম্ভব নয়। তাই ইউরােপের শিল্পোন্নত দেশগুলি উপনিবেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করত।
(গ) পুঁজি বিনিয়োগ:- হবসনের মতে, পুঁজিপতিরা তাদের হাতে সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ মূলধন উপনিবেশগুলিতে বিনিয়ােগ করে আরাে মুনাফা অর্জনের জন্য উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহ দেখায়। লেনিন বলেন- পুঁজিপতিরা বাজার দখলের চেয়ে উপনিবেশে পুঁজি বিনিয়ােগেই বেশি আগ্রহী ছিল।
(ঘ) শ্রমিক সংগ্রহ:- শিল্পোন্নত দেশগুলির কলকারখানায় কাজ করার জন্য প্রচুর সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়ােজন ছিল। এই সুলভ শ্রমিকের প্রয়ােজনীয়তা পূরণের তন্য শিল্পোন্নত দেশগুলি ইউরােপের বাইরে বিভিন্ন অনগ্রসর দেশে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
সামরিক কারণ:- ইউরােপীয় দেশগুলির সামরিক বাহিনী ছিল আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার অনুন্নত দেশগুলির পক্ষে ইউরােপীয়দের প্রতিরােধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে ওই তিনটি মহাদেশেই ইউরােপীয় সাম্রাজ্য স্থাপন করে।
সাংস্কৃতিক কারণ:- অনেক সময় সাম্রাজ্যবাদের পৃষ্ঠপােষকেরা পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে সভ্যতা-সংস্কৃতির দীপশিখা প্রজ্বলিত করার আদর্শের আড়ালে তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্পৃহা চরিতার্থ করে। ব্রিটিশ কবি কিপলিং এ প্রসঙ্গে বলেছেন- “পৃথিবীর পিছিয়ে পড়া অংশে সভ্যতার আলােকবর্তিকা পোঁছে দেওযা শ্বেতকায় হাতির দায়িত্ব”।
উপসংহার:- পরিশেষে উল্লেখ্য, সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভবের পিছনে একাধিক কারণ ছিল। আর এই সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউরােপীয় শক্তিবর্গের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। আর এই সাম্রাজ্যবাদী প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমগ্র বিশ্বকে এক মহাযুদ্ধের সিংহদ্বারে এনে উপনীত করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Nice very nice
Very good
Thank you soo much for this important question..
Okkk
best