প্রাক-১৮৫৭ পর্বে উপজাতি আন্দোলনে কোল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রশ্ন – প্রাক-১৮৫৭ পর্বে উপজাতি আন্দোলনে কোল বিদ্রোহ ও সাঁওতাল বিদ্রোহ কেন গুরুত্বপূর্ণ? ৩ + ৫= ৮ । Class 10

উত্তর:

প্রথম অংশ :

কোল বিদ্রোহের গুরুত্ব : প্রাক-১৮৫৭ পর্বে উপজাতি আন্দোলনের ক্ষেত্রে কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩১ খ্রিস্টাব্দ) ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ—

১। সম্মিলিত বিদ্রোহ : এই বিদ্রোহে কোল উপজাতির সঙে ওঁরাও, হাে, মুন্ডা উপজাতির মানুষরা যােগদান করে এক ঐক্যবদ্ধ। বিদ্রোহের নিদর্শন তৈরি করেছিল। 

২। ব্রিটিশ বিরােধী বিদ্রোহ : চার্লস মেটকাফের মতে, কোল বিদ্রোহীদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানাে। বহিরাগত মহাজন (দিকু), জমিদার, পুলিশ, প্রশাসন ও কোম্পানির কর্মচারীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রবণতা এই বিদ্রোহে লক্ষ করা যায়। 

৩। মাতৃভূমি রক্ষার প্রচেষ্টা : ব্রিটিশ সরকার আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর সাহায্যে এই বিদ্রোহ দমন করলেও মাতৃভূমি রক্ষায় কোলদের এই অসম লড়াইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বিদ্রোহের ফলেই সরকার । 

ক। পৃথক ভূখণ্ড তৈরি : কোলদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামক পৃথক এক ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেয়। 

খ। স্বতন্ত্র নিয়ম : কোলদের জন্য স্বতন্ত্র কিছু নিয়মকানুন চালু হয়, কোল প্রধানদের কেড়ে নেওয়া জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়, জমি হস্তান্তরে বিধিনিষেধ আরােপিত হয়।

দ্বিতীয় অংশ :  

সাঁওতাল বিদ্রোহের গুরুত্ব : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল বা গুরুত্বকে কখনােই ছােটো করে দেখা হয় না। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব হল—

১। সাঁওতাল পরগনা গঠন : সাঁওতাল বিদ্রোহের অবসান হলে সাঁওতালদের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড গঠন করা প্রয়ােজন বুঝতে পেরে ব্রিটিশ সরকার একপ্রকার বাধ্য হয়েই সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চল। নিয়ে ‘সাঁওতাল পরগনা’ নামক পৃথক একটি এলাকা গঠন করে। 

২। পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি : সরকার সাঁওতালদের একটি পৃথক উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং সাঁওতাল পরগনায়। সরকারি কোনাে আইন কার্যকরী হবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৩। জমিদারি ও মহাজনি শােষণ হ্রাস : সাঁওতাল পরগনায় তিন ২ বছরের জন্য মহাজন ও জমিদারদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে জমিদার ও মহাজনদের শােষণ সাময়িক কালের জন্য হ্রাস পায়। 

৪। ভবিষ্যৎ আন্দোলনের পথপ্রদর্শক : সাঁওতাল বিদ্রোহারা তিরধনুক, টাঙ্গি, তরবারি সম্বল করে সুশিক্ষিত সরকারি বাহিনীর বন্দুকের সামনে যে বীরবিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে তা পরবর্তী কৃৎ বিদ্রোহ তথা ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনের পথনির্দেশ প্রদান করেছিল 

৫৷ কর হ্রাস : সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলেই সাঁওতালদের জমির ওপর কর হ্রাস করা হয়। সাঁওতাল পরগনাকে যতদূর সম্ভব ভারতীয় জনস্রোতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।

উপসংহার : সাঁওতাল বিদ্রোহের ফলে শুধুমাত্র সাঁওতালদের মধ্যেই নয়, সামগ্রিকভাবে নিম্নশ্রেণির কৃষকদের মধ্যে স্বাধীনতার যে স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়, তা মহাবিদ্রোহের মাধ্যমে দাবানলে পরিণত হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment