প্রশ্ন : সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে। Class 10 | 8 Marks
ভূমিকা : উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে যে সমস্ত উপজাতি বিদ্রোহ ঘটে তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ছিল ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ।।
বিদ্রোহের কারণ : সাঁওতালরা হাজারিবাগ, মানভূম থেকে রাজমহলের পার্বত্য সমতলভূমিতে এসে, সেখানকার জঙ্গলাবৃত। অঞ্চল পরিষ্কার করে বসবাস ও কৃষিকাজ শুরু করে অলটির নাম দেয় ‘দামিন-ই-কোহ’ বা মুক্ত অঞল। কিন্তু সেখানে তারা জমিদার, মহাজন, বহিরাগত ব্যবসায়ী ও ইংরেজদের অত্যাচারে। অতিষ্ঠ হয়ে শেষপর্যন্ত বিদ্রোহের পথ বেছে নেয়।
বিদ্রোহের লক্ষ্য : বিদ্রোহীদের লক্ষ্য ছিল বহিরাগত মহাজন (দিকু) ও ব্যবসায়ীদের অত্যাচার ও এবং জমিদারি ও ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ঘটিয়ে সাঁওতাল রাজ প্রতিষ্ঠা করা।
বিদ্রোহের শুরু : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন সিধু-কানহুর নেতৃত্বে প্রায় দশ হাজার সাঁওতাল নরনারী ভাগনাডিহির মাঠে জমায়েত হয়ে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য গঠনের পরিকল্পনা নেন। দীঘি থানার অত্যাচারী দারােগা মহেশলাল দত্ত ও কুখ্যাত মহাজন কেনারাম ভগৎকে হত্যার মাধ্যমে এই বিদ্রোহ শুরু হয়।
বিদ্রোহের নেতৃত্ব ও ব্যাপ্তি : বিদ্রোহীরা সিধু, কানহু, ডােমন মাঝি, চাদ, ভৈরব, কালাে প্রামাণিকের নেতৃত্বে মহাজনদের আড়ত, বণিকদের বাড়ি, নীলকুঠি ও জমিদারের কাছারি আক্রমণ করে। রেলস্টেশন ও যােগাযােগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে। এভাবে রাজমহল থেকে মুরশিদাবাদ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে। পড়ে। মুরশিদাবাদ, বীরভূমে পাকুড় ও সাঁওতাল পরগনার বিস্তীর্ণ অঞলে ইংরেজবাহিনী পর্যদস্তু হয়ে পড়ে। সবশেষে বিদ্রোহীরা। তির, ধনুক, বল্লম সম্বল করে কলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে দল বেঁধে। বেরিয়ে পড়লে শেষপর্যন্ত ইংরেজ কোম্পানি প্রচণ্ড দমনপীড়নের মাধ্যমে এই বিদ্রোহ দমন করে (১৮৫৬ খ্রি.)। ১
বিদ্রোহের প্রকৃতি : ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা একে নিছক বর্বরদের স্থানীয় বিদ্রোহ ও আদিম ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ বললেও আধুনিক ঐতিহাসিকরা একে দেশীয় শােষণ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক গণসংগ্রাম তথা শ্রমজীবীদের প্রতিরােধ হিসেবে দেখেছেন।
ফলাফল : এই বিদ্রোহের ফলে (১) সরকার সকল পরগনা নামে একটি স্বতন্ত্র সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি করে সেখ সাঁওতালদের আইনকানুন চালু করে; (২) সাঁওতালদের উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং মিশনারি ছাড়া সমতলের লােকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়; (৩) সাঁওতাল মােড়ল ও সর্দারদের। স্বীকার করা হয়; এবং (৪) সর্বত্র একই ধরনের ওজন বিধি চাল
উপসংহার :ব্যাপ্তিতে ক্ষুদ্র ও বিক্ষিপ্ত হলেও সাঁওতাল বিদ্রোহের মধ্যে শােনা গিয়েছিল প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পদত ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় তাই সাঁওতাল বিদ্রোহকে ‘মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত বলেছেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
👍👍👍👍👍👍👍👍
Thank you so much 😌☺️