সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে

প্রশ্ন – সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে । Class 10 | 8 Marks

উত্তর:
ভূমিকা : উনিশ শতকের শেষার্ধ ও বিশ শতকের প্রথমার্ধে বহিভারতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ঘটনা ভারতের তার রাজনীতিতে নারী শক্তির গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। রাজনীতিতে। নারী-পুরুষের সমানাধিকারের তত্ত্বও ক্রমশই জনায় শুতে। 

প্রেক্ষাপট : বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর থেকেই সশস্ত্র বিপ্লবী। আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট রচিত হয়। স্বদেশি আন্দোলনের অন্যতম নেতা কৃয়কুমার মিত্রের কন্যা কুমুদিনী মিত্র তার সুপ্রভাত’ পত্রিকার মাধ্যমে দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচার করে এবং এই পত্রিকা শহরের মধ্যবিত্ত নারীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মীরা দাশগুপ্তার সম্পাদিত ‘বেণু পত্রিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা : 

১) বঙ্গভঙ্গ-বিরােধী আন্দোলন পর্ব : এই আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন নারী বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গােপনে সংবাদ প্রেরণ ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রসঙ্গে ননীবালা দেবীর কথা বলা যায়। এ ছাড়া সরলাদেবী চৌধুরানির। প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও বীরাঙ্গনা ব্রত’ স্বদেশি চেতনার বিকাশে সাহায্য করেছিল। 

২) দীপালি সংঘ : বিপ্লবী লীলা রায় (নাগ) কর্তৃক ঢাকায়। প্রতিষ্ঠিত দীপালি সংঘের (১৯২০ খ্রিস্টাব্দ) উদ্যোগে নারীদের। লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্র চালানাে, অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় ও বৈপ্লবিক। আন্দোলনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই সংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে। যুক্ত ছিলেন ছাত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। 

৩। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার : বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। (১৯১১-৩২ খ্রি.) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য। সেনের সহযােগী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী চট্টগ্রামের। পাহাড়তলি ইউরােপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে ক্লাব বিপর্যস্ত করে দেয় এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। 

৪। কল্পনা দত্ত : চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্ত। বিপ্লবী দলের গােপন কাগজপত্র ও অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব। পেয়েছিলেন। তা ছাড়া তিনি বন্দি বিপ্লবী নেতাদের মুক্ত করার জন্য ডিনামাইট ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি জেলবন্দি হন ও ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জেল থেকে ছাড়া পান। 

৫। শান্তি ও সুনীতি : কুমিল্লার দুইজন ছাত্রী শান্তি ঘােষ ও । সুনীতি চৌধুরী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি. জি. ভি. স্টিভেনকে গুলি করে হত্যা করেন। আবার উজ্জ্বলা মজুমদার দার্জিলিং-এ গভর্নর। অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করলে ধরা পড়েন ও জেলবন্দি হন।

৬। বীণা দাস : আধা বৈপ্লবিক সংগঠন ছাত্রী সংঘ’-এর সদস্য তথা কলেজ ছাত্রী বীণা দাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সেনেট হলে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার জন্য গুলি করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ খ্রি.) । জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টার অভিযােগে বীণা দাসের নয় বছর কারাদণ্ড হয়।

৭। লক্ষ্মী সায়গল : আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী ঝাসি। ব্রিগেডের’ দায়িত্বপ্রাপ্ত লক্ষ্মী স্বামীনাথন বা লক্ষ্মী সায়গলের। বৈপ্লবিক কাজকর্মও খুব উল্লেখযােগ্য ছিল।

পর্যালােচনা : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যােগদান ছিল সীমিত। বৈপ্লবিক প্রচেষ্টায় পুরুষ বিপ্লবীদের তুলনায় নার বিপ্লবীদের দায়িত্ব কম দেওয়া হত। তাছাড়া এই রূপ সশস্ত্র আন্দোলন মূলত বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

9 thoughts on “সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে”

Leave a Comment