অপানুবর্তন বলতে কী বােঝ? শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তনের উপযােগিতা লেখাে।
অথবা, শিশুর শিখনে প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার তাৎপর্য লেখাে।
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে প্যাভলভের তত্ত্বের অবদান লেখাে ।
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে প্যাভলভীয় অনুবর্তন তত্ত্বের গুরুত্ব লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষার কৌশল) | 8 Marks
উত্তর:-
অপানুবর্তন
প্যাভলভের কুকুর, ঘণ্টাধ্বনি, মাংস এবং কুকুরের লালাক্ষরণ সম্পর্কিত পরীক্ষায় অনুবর্তনকে স্থায়ী করতে হলে ঘণ্টাধ্বনির সাথে মাঝে মাঝে স্বাভাবিক উদ্দীপক অর্থাৎ মাংস বা খাদ্যবস্তুকে উপস্থাপন করতে হবে। অনুবর্তনের পরে দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও যদি খাবার দেওয়া না হয়, শুধু ঘণ্টাই বাজানাে হয় তাহলে ক্রমশ লালাক্ষরণের (অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া) পরিমাণ কমতে কমতে একসময় তা বন্ধ হয়ে যাবে, একে অপানুবর্তন বলে। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের উপযােগিতা ইতর প্রাণী থেকে শুরু করে মানবশিশুর শিখনে প্যাভলভীয় প্রাচীন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার উপযােগিতা লক্ষ করা যায়। এর শিক্ষাগত তাৎপর্যগুলি হল—
[1] শিশুর ভাষাগত বিকাশ: শিশুর ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন কৌশলের যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। শিশুকে ভাষা শেখানাের সময় কোনাে-একটি বিশেষ পরিচিত বস্তু বা ব্যক্তির সঙ্গে বিশেষ একটি শব্দকে যােগ করে দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিশেষ একজন মহিলাকে দেখিয়ে মুখে ‘ঠাকুরমা’ শব্দটি বারে বারে উচ্চারণ করতে থাকলে শিশু ‘ঠাকুরমা’ শব্দটি শেখে। এই পদ্ধতিতেই শিশু বহু শব্দ ও ভাষা আয়ত্ত করে।
[2] শিশুর শিখন-দক্ষতা: এই কৌশলের দ্বারা শিশু শিখন-দক্ষতা অর্জন করে। লেখা, পড়া, বানান শুদ্ধ করা, নামতা মুখস্থ করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুবর্তনের প্রভাব দেখা যায়।
[3] শিশুর অভ্যাস গঠন: শিশুর মধ্যে অভ্যাস গড়ে তােলার ক্ষেত্রেও এই কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন—সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত দাঁত মাজা, ঠিক সময়ে পড়তে বসা প্রভৃতি।
[4] কু-অভ্যাস দূর করা: বানান ভুল, অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ, মুদ্রাদোষ ইত্যাদি কু-অভ্যাস দূর করতে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
[5] শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ: প্রাক্ষোভিক বিকাশে অনুবর্তনের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়। মানুষের জীবনে জটিল প্রক্ষোভ অনুবর্তনের ফল। প্রক্ষোভ-উদ্দীপকের ব্যাপকতা অনুবর্তনের কারণেই ঘটে।
[6] শিশুর আগ্রহ বা অনাগ্রহ সৃষ্টি: শ্রেণিশিখনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়ে শিক্ষার্থীর আগ্রহ বা অনাগ্রহ অনুবর্তন প্রক্রিয়ারই ফল। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি ভালােবাসা, তিনি যা পড়ান সেই বিষয়ে অনুবর্তিত হয়।
[7] শিক্ষকের আচরণ শিক্ষাথীর মধ্যে অনুবর্তন: শিক্ষক-শিক্ষিকার আচার-আচরণ, পােশাক-পরিচ্ছদ, অভ্যাস প্রভৃতি শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুবর্তিত হয়ে থাকে। সেইজন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণ হবে মার্জিত, পােশাক হবে রুচিসম্মত এবং অভ্যাস হবে অনুকরণযােগ্য।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।