শিখনে আগ্রহের ভূমিকা সম্পর্কে আলােচনা করাে। বাঞ্ছিত আগ্রহ সৃষ্টিতে শিক্ষার ভূমিকা লেখাে। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশুর আগ্রহের প্রয়ােজনীয়তা লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
শিখনে আগ্রহের ভূমিকা
শিক্ষায় আগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রেষণা সৃষ্টিতে আগ্রহের ইতিবাচক ভূমিকা সম্পর্কে সব মনােবিজ্ঞানীই একমত। তাই শিক্ষা কর্মসূচির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আগ্রহের বিকাশ এবং বাঞ্ছিত আগ্রহ সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ। আগ্রহ বিকাশে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কর্মসূচি হল—
[1] শিক্ষার লক্ষ্য হল শিশুর শারীরিক, বৌদ্ধিক, সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশ-সহ আগ্রহ বিকাশে উপযুক্ত কর্মসূচি পরিকল্পনা করা।
[2] স্বতঃস্ফূর্ততা আগ্রহ বিকাশে বিশেষ সহায়ক। তাই শিশুকে যতটা সম্ভব স্বাধীনতা দিয়ে তার স্বতঃস্ফূর্ততাকে উৎসাহ দিতে হবে।
[3] শিশু যাতে পছন্দমতাে বিষয় নির্বাচন করতে পারে, সে ব্যাপারে তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। একইভাবে সে যাতে তার পছন্দমতাে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থাও করতে হবে।
[4] শিশুর আগ্রহের দিকটি লক্ষ করে বিভিন্ন পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে আগ্রহ বিকাশের অনুকুল পরিবেশ গঠন করা প্রয়ােজন।
[5] শিশুর আগ্রহের পরিধিকে বিস্তৃত করার জন্য তাকে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখােমুখি দাঁড় করানাে প্রয়ােজন।
বাঞ্ছিত আগ্রহ সৃষ্টিতে শিক্ষার ভূমিকা
শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীকে অভিযােজনে সাহায্য করা। সাহস অভিযােজনের জন্য বিভিন্ন দিকে আগ্রহের প্রয়ােজন হয়। তাই শিক্ষার্থীর মধ্যে বাঞ্ছিত আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করাই হল শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। এর জন্য প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলি হল—
[1] স্বাস্থ্যের বিকাশ: শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দৈহিক স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা, ব্যায়াম, যােগাসন প্রভৃতির ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একদিকে যেমন বৌদ্ধিক অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকবে, অন্যদিকে তেমনই বিভিন্ন রকমের বিনােদনমূলক উপকরণের যথাযথ ব্যবস্থা রাখা প্রয়ােজন।
[2] সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির প্রচলন: বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা, বিভিন্ন সহযােগিতামূলক কাজ, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ইত্যাদি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে প্রশাসনিক কাজে আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে। বিদ্যালয়ের বাৎসরিক পত্রিকা, দেয়াল পত্রিকায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে সাহিত্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব।
[3] বই পড়ায় উৎসাহদান: পঠনের প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই পড়তে উৎসাহ দেবেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশুর আগ্রহের প্রয়ােজনীয়তা শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশুর অনুরাগ বা আগ্রহ (interest) বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। শ্রেণিশিক্ষণ যদি শিশুর মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনের উপযােগী বিষয় সম্বন্ধে আগ্রহ বা অনুরাগ সঞ্চার করতে সক্ষম হয়, তাহলে শিক্ষার্থীর পক্ষে তা মঙ্গলজনক হয়। শিক্ষায় শিশুর আগ্রহের প্রয়ােজনীয়তার কয়েকটি দিক হল—
[1] শিক্ষণীয় বিষয়ে যদি শিশু আগ্রহ বােধ করে, সেক্ষেত্রে মনােযােগ স্বাভাবিকভাবেই দেখা দেয়। ফলে শিখন কার্যকরী হয়।
[2] আগ্রহ প্রেষণা সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আর এই প্রেষণা শিখনের অন্যতম।
[3] আগ্রহ শিশুকে সক্রিয় করে তােলে। সক্রিয়তা শিখনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
[4] শিশুর আগ্রহ বা অনুরাগ অনেক সময় শিশুকে নতুন কিছু সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করে। সৃজনশীল ব্যক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নতুন সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ।
[5] শিশুর অনুরাগ বা আগ্রহের ঠিকমতাে অনুশীলনই তাকে ভবিষ্যত জীবনে সফল হতে সাহায্য করে।
বর্তমানে শিক্ষাবিদরা শিশুর আগ্রহ বা অনুরাগকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পাঠ্যবিষয় হিসেবে যেমন বিভিন্ন ‘ঐচ্ছিক বিষয়’ কে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তেমনি বিভিন্ন রকমের সহ-পাঠক্রমিক কার্যসূচির সুযােগ করেছেন।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।