শিখনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরের নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও

শিখনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরের নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

শিখনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর এবং তাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

শিখনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল— 

[1] জ্ঞানার্জন (Acquiring knowledge), [2] সংরক্ষণ বা ধারণ (Retention), [3] পুনরুদ্রেক (Recall) ও প্রত্যভিজ্ঞা (Recognition)। শিখনের এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে দেওয়া হল— 

[1] জ্ঞানার্জন: শিখনের প্রথম স্তর হল জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন। কোনাে ব্যক্তি প্রথাগত বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে| এই জ্ঞান বিভিন্নভাবে অর্জন করা যায়। ব্যক্তি বই পড়ে, শিক্ষক, অভিভাবক বা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণােদিতভাবে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বিভিন্ন গণমাধ্যম, যেমন—সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, যাত্রা, নাটক ইত্যাদির সাহায্যেও ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে। 

[2] সংরক্ষণ বা ধারণ : শিখন বা অভিজ্ঞতাগুলিকে মনের মধ্যে ধরে। রাখাকে সংরক্ষণ বলা হয়। সংরক্ষণের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব না হলেও, এর জন্য অনুকূল পরিস্থিতির উল্লেখ করা যায়। যেমন—

i. যে-কোনাে বিষয় ভালােভাবে বুঝে নেওয়া এবং বিষয়টিকে বারবার অনুশীলন করা। 

ii. বিষয়টি যত সাম্প্রতিক হবে সংরক্ষণও তত ভালাে হবে।

iii. বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকলে সংরক্ষণ উত্তম হয়।

iv. শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য উত্তম সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজন। | অর্থপূর্ণ বিষয়, অনুশীলন, আগ্রহ, অতিশিখন, দেহ ও মনের সুস্থতা ইত্যাদি সংরক্ষণের সহায়ক। এ ছাড়াও ছন্দ সহকারে পাঠ, সংকেতের ব্যবহারের ফলেও সংরক্ষণের উন্নতি ঘটে। 

[3] পুনরুদ্রেক ও প্রত্যভিজ্ঞা : শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল পুনরুদ্রেক। সংরক্ষিত অভিজ্ঞতাকে যদি ঠিক সময় ঠিক জায়গায় পুনরুদ্রেক করা না যায়, তাহলে শিখন সম্পূর্ণ হয় না। পূর্ব-অভিজ্ঞতাকে পুনরায় মনে করাকে পুনরুদ্রেক বলে| পুনরুদ্রেক প্রধানত দুই প্রকারের। যথা— 

i. প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক : যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার ক্ষেত্রে কেবল তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য গ্রহণ করা হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। 

ii. পরােক্ষ পুনরুদ্রেক : যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে পুনরুদ্রেক করার জন্য তার সঙ্গে পরােক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে পরােক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। আধুনিক মনােবিজ্ঞানীরা পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে তিনটি সূত্রের কথা। উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল—

 i. সান্নিধ্যের সুত্র: পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে যখন একটি ঘটনা আর-একটি ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়, তখন তাকে সান্নিধ্যের সূত্র হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- রসগােল্লার কথা মনে আসলেই তার। মিষ্টত্ব এবং রসের কথা মনে হয়। 

ii. সাদৃশ্যের সূত্র : পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে দুটি বিষয়ের মধ্যে বেশি মিল থাকলে একটির কথা মনে হলেই অপরটির কথা মনে আসে| যেমন—রামায়ণের গল্পে লবের কথা মনে পড়লে কুশের কথাও মনে পড়বে। 

iii. বৈসাদৃশ্যের সূত্র: বৈসাদৃশ্যও পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলেও তা সহজে আমাদের মনে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—আলাের কথা মনে হলেই অন্ধকারের কথা মনে হয়। রােগা লােকের কথা মােটা লােককে মনে করিয়ে দেয়। প্রত্যভিজ্ঞা: প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বােধ যা না থাকলে শিখনকে সফল বলা যায় না | প্রত্যভিজ্ঞা কথাটির প্রকৃত অর্থ হল ‘চিনে নেওয়া’ | পূর্বে প্রত্যক্ষ করা অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে বর্তমানে চিনে। নেওয়ার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় প্রত্যভিজ্ঞা| মনােবিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যভিজ্ঞা হল একটি পরিচিতির বােধ বা চেতনা, যার অভাব ঘটলে শিখন ক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!