শিক্ষার সঙ্গে শিখনের সম্পর্ক কী? শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি বিস্তারিতভাবে আলােচনা করাে

শিক্ষার সঙ্গে শিখনের সম্পর্ক কী? শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি বিস্তারিতভাবে আলােচনা করাে? Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষার সঙ্গে শিখনের সম্পর্ক

শিক্ষার ক্ষেত্রে শিখনের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিখন ছাড়া শিক্ষার আলােচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শিখন সারাজীবন ধরে চলে। শিশু শিখন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিবেশের সঙ্গে অভিযােজন করতে শেখে। শিখন হল একটি সংগতিবিধান প্রক্রিয়া, যা ব্যক্তিকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে শেখায়। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য শিশুকে সুনাগরিক করে তােলা। আর এই উদ্দেশ্য পূরণের অন্যতম হাতিয়ার হল লিখন। 

শিখনের স্বরূপ

শিখন বিষয়টি ভালােভাবে বুঝতে হলে তার স্বরুপ বা প্রকৃতি জানা প্রয়ােজন। নীচে শিখনের স্বরূপ সম্পর্কে আলােচনা করা হল— 

[1] আচরণের পরিবর্তন: আচরণের পরিবর্তন হল শিখনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শিখন ঘটলেই আচরণে কিছু না কিছু পরিবর্তন ঘটবে। মনে রাখতে হবে, এই পরিবর্তন সর্বদা ইতিবাচক তা নয়, নেতিবাচক পরিবর্তনও হতে পারে।

[2] নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন: শিখনের ফলে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়।। শিখন হল নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পুরােনাে আচরণ ত্যাগ করে পরিবর্তিত আচরণধারা শেখার প্রক্রিয়া। 

[3] নতুনত্ব: শিখনের ফলে যে আচরণের পরিবর্তন ঘটে তা বিশ্লেষণ করলে কিছু না কিছু নতুনত্ব দেখা যাবেই। যে শিশু পূর্বে জ্বলন্ত মােমবাতিতে। হাত দিয়েছিল, অভিজ্ঞতা অর্জন বা শিখনের পরে সে আর তাতে হাত দেবে। অর্থাৎ, তার আচরণে নতুনত্ব দেখা দেবে। 

[4] বিশেষ গতিপথ বা প্রেষণা: শিখনের ফলে আচরণের যে পরিবর্তন ঘটে তার একটি বিশেষ গতিপথ থাকে| শিখনের পূর্বে কোনাে প্রাণীর মধ্যে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয়, সেই প্রেষণা প্রাণীকে নির্দিষ্ট পথে নিয়ে গিয়ে তার মধ্যে পরিতৃপ্তি এনে দেয়। 

[5] উদ্দেশ্যমুখিতা: শিখন উদ্দেশমুখী এবং লক্ষ্যকেন্দ্রিক। কোনাে উদ্দেশ্য না থাকলে তাকে শিখন বলা যায় না। 

[6] অনুশীলনের প্রভাব: শিখনের ওপর অনুশীলনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। শিখনের ওপর অনুশীলনের প্রভাব বিষয়ে বহু পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রথম দিকের অনুশীলনে শিখনের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে৷ কিন্তু তারপর বৃদ্ধির হার হ্রাস পায় এবং এমন এক সময় আসে যখন শিখনের ওপর অনুশীলনের প্রভাব দেখা যায় না। একে শিখনে অধিত্যকা বলে। তবে প্রেষণা বৃদ্ধির ফলে বা শিখনপদ্ধতি পরিবর্তনের দ্বারা অধিত্যকাকে অতিক্রম করা যায়।

[7] সমস্যাসমাধানের তাগিদ : শিখনের ক্ষেত্রে আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমস্যা। সমস্যা না থাকলে প্রাণী কোনাে কিছুই শিখতে চায় না৷ সমস্যাসমাধানের তাগিদেই সে তার বর্তমান আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন আচরণ আয়ত্ত করার দিকে অগ্রসর হয়। 

[8] পরিণমনের গুরুত্ব : শিখন অনেক ক্ষেত্রেই পরিণমনের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিশুর জিভের জড়তা দূর না হলে তাকে ভাষা শিক্ষা দেওয়া যায় না। অর্থাৎ, পরিণমন ছাড়া শিখন ফলপ্রসু হয় না। 

[9] শিখন একটি প্রক্রিয়া: শিখন একটি প্রক্রিয়া যার পরিচয় ফলের মাধ্যমে পাওয়া যায়। 

[10] সর্বজনীন এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রকৃতি : শিখন সর্বজনীন এবং নিরবচ্ছিন্ন। প্রতিটি সজীব প্রাণীই শেখে। মানুষের শিখনের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ, জাতি বা সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতা নেই।

 [11] সঞ্চালনযােগ্য : গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে শিখন সঞ্চালনযােগ্য। একটি ক্ষেত্রের শিখন অন্য ক্ষেত্রে সঞ্চালিত হয়।

 [12] চর্চানির্ভর: শিখন চর্চা বা অনুশীলনের ওপর নির্ভরশীল| চর্চা বা অনুশীলনের অভাবে শিখনের শক্তি হ্রাস পায়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!