শিক্ষা বিস্তারে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কি? উচ্চশিক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলােচনা করাে।

শিক্ষা বিস্তারে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব কি? উচ্চশিক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলােচনা করাে।

উত্তর:

শিক্ষা বিস্তারে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব

ঔপনিবেশিক আমলে ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা ছিলো – প্রাচ্য শিক্ষা বনাম পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব ১৮১৩ থেকে ১৮৩৯ খ্রিঃ পর্যন্ত প্রায় ২৬ বছর ধরে চলেছিলো। দ্বন্দ্বটি একদিকে যেমন ইংল্যান্ডের অভ্যন্তরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো, ঠিক তেমনই ভারতের ভিতরেও যথেষ্ট বিতর্ক তৈরি করেছিলো। দীর্ঘ সময় ধরে চলা, এই দ্বন্দ্বটি প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী নামে দুটো গোষ্ঠীর মধ্যে, প্রধানত বৌদ্ধিক বিতর্কের স্তরেরই সীমাবদ্ধ থেকেছিলো, কিন্তু কখনই এই দ্বন্দ্ব সংঘর্ষের বা যুদ্ধের রূপ নেয় নি।

উচ্চশিক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচে আধুনিক উচ্চতর শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে স্যার চার্লস উডের নির্দেশনামার ভিত্তিতে বড়লাট লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শুরু করে আজও এই প্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষার প্রসারে তার সদর্থক ভূমিকা পালন করে চলেছে।

উদ্দেশ্য : সূচনালগ্নে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ছিল অধীনস্থও অনুমােদিত স্কুল-কলেজগুলির পরীক্ষা গ্রহণ এবং ডিগ্রি প্রদান। যদিও পরবর্তীতে এই বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষণ-ধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

পরিসর : সূচনালয়ে সমগ্র উত্তর, পূর্ব ও মধ্যভারত, এমনকি বর্তমান মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কলেজগুলির শিক্ষা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হতাে।

পরীক্ষা গ্রহণ : বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় প্রথম বি.এ. পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮৫৮ সালে। মােট ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও যদুনাথ বসু স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর ২৬ বছর পর ১৮৮৩ সালে মহিলাদের মধ্যে প্রথম কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ও চন্দ্রমুখী বসু স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ৰমে গণশিক্ষার দ্বার খুলে দিতে থাকে।

স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায়ের তাৰদান : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে স্যার আশুতােষ মুখােপাধ্যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যােগদান করেন। তার কার্যকাল যথার্থই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ। এই সময় দ্বারভাঙা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাপাখানা, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজ এবং ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞান কলেজ স্থাপিত হয়। স্যার আশুতােষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ-বিদেশের বহু স্বনামধন্য পণ্ডিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে যােগদান করেন এবং এইভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যথার্থ অর্থেই এক আন্তর্জাতিক রূপ পায়।

মূল্যায়ন : বাস্তবিকই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে একটি Centre of excellence-এ পরিণত হয়েছে। অন্তত পাঁচজন নােবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব যথাক্রমে রােনাল্ড রস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সি. ভি. রমন, অমর্ত্য সেন এবং অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনাে না কোনাে সময় এই প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে যুক্ত থেকে এর গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment