শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য কী l শিক্ষামনােবিজ্ঞানের গুরুত্ব বা তাৎপর্য লেখাে
উত্তর:
শিক্ষা মনােবিজ্ঞানের লক্ষ্য :
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের সাধারণ লক্ষ্য হল শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তথ্যগুলিকে এমন করে উপস্থাপিত করা, যাতে শিক্ষক তাঁর শিক্ষামূলক কাজের বিষয়ে সঠিক সহায়তা পেতে পারেন। নীচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য উল্লেখ করা হল
[1] সার্বিক বিকাশের সহায়তা : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের অন্যতম লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীকে তাদের বৃদ্ধি, বিকাশ, সামর্থ্য, ক্ষমতা ও চাহিদা অনুযায়ী সঠিকভাবে বিকশিত হতে সাহায্য করা।
[2] মানিয়ে নিতে সাহায্য করা ; পঠনপাঠনের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে কোনাে সমস্যা দেখা দিলে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান সেই সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করে। এককথায় বলা যায়, শিক্ষার্থীদেরকে বিকাশের ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যবিধানে বা মানিয়ে নিতে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান সহায়তা করে।
[3] পাঠদান কৌশল আয়ত্তকরণে সহায়তা : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে সাফল্যের সঙ্গে পাঠদানে সহায়তা করা।
[4] বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ শিক্ষা : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্রকে অনেকখানি বাস্তবভিত্তিক করে তােলে, সেক্ষেত্রে তত্ত্বগত দিকের থেকে ব্যাবহারিক দিক অধিক গুরুত্ব লাভ করে।
[5] সমন্বয়সাধনে সহায়তা করা : শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন দিকের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক দিককে যুক্ত করা এবং শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু, কৌশল ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা।
[6] শিক্ষামূলক গবেষণায় সহায়তা : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নতুন নতুন পদ্ধতির সন্ধান দেয়। বলা যায়—শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের দ্বারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের শিক্ষামূলক কাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণার সুযােগ পায়।
শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের গুরুত্ব/তাৎপর্য :
শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্বের ওপর নির্ভর করে শিক্ষা তার বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন ঘটাবার চেষ্টা করে এবং এগুলি শিক্ষাকে ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। শিক্ষার্থীর আচরণ, পর্যবেক্ষণ, শিক্ষাদান কৌশল নির্বাচন, শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ, পাঠক্রম প্রণয়ন, সময়তালিকা প্রস্তুতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। নীচে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের গুরুত্ব বা তাৎপর্য আলােচনা। করা হল
[1] শিশর সার্বিক বিকাশে সহায়তা : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের কাজ হল শিক্ষার্থী বা শিশু যেসকল সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে। এসেছে সেগুলির প্রকৃতি অনুধাবন করে সেগুলির সার্বিক বিকাশে সহায়তা দান করা।
[2] শিশুমনের প্রকৃতিনির্ধারণ:মনােবিজ্ঞান আচরণের বিজ্ঞান হলেও শিশুর আচরণ নির্ভর করে মূলত তার সহজাত ক্ষমতা, প্রবণতা, দক্ষতা ও সামর্থ্যের ওপর। শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শিশু মনের প্রকৃতি অনুধাবনে এবং সেই অনুযায়ী তার ব্যক্তিত্বের বিকাশে সহায়তা করা।
[3] আচরণ পরিবর্তনে সহায়তা : শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হল শিশুর আচরণ পরিবর্তনে সহায়তাদান করা, শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তনশীল পরিবেশের উপযােগী আচরণ করতে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
[4] মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানদান: যে-কোনাে ক্লাসে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বহুলাংশে নির্ভর করে শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীর মানসিক সুস্বাস্থ্যের ওপর। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানদান করে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান।
[5] শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনাদান : বিদ্যালয় শিক্ষার উন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনা। বিশেষভাবে প্রয়ােজন। যার মাধ্যমে বহু শিক্ষামূলক সমস্যার হাত থেকে শিক্ষাকে মুক্ত করে তাকে অনায়াসসাধ্য করে তোলা যায়। এই কাজে সহায়তা পাওয়া যায় শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান থেকে।
[6] চরিত্রগঠনের শিক্ষা : আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হল চরিত্রগঠন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন্ প্রক্রিয়ায় সুঅভ্যাস গঠন করা যায়, সে-ব্যাপারে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞানের জ্ঞান শিক্ষকশিক্ষিকাকে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে।
[7] পাঠক্রম নির্ধারণের সহায়তা : শিক্ষাক্ষেত্রে পাঠক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্য সম্পাদনে শিক্ষা-মনােবিজ্ঞান শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের উৎসাহিত করে। পাঠক্রমে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে, কোন্ ক্রম অনুযায়ী সেগুলিকে সজ্জিত করা হবে, সে-সম্পর্কে পাঠক্রম প্রণয়নকারীরাও নতুন নতুন ধারণা লাভ করতে পারে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।