Class 12 Class 12 Education শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক আলােচনা করাে

শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক আলােচনা করাে

শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক আলােচনা করাে Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক

শিক্ষা হল শিক্ষার্থীর এক জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা তাকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে ও পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং সমাজের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের উপযােগী করে তােলে। অন্যদিকে, বুদ্ধি হল একটি সামগ্রিক ক্ষমতা যা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্রিয়া করতে, যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে এবং সার্থকভাবে পরিবেশের সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করে।

শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধির একটি নিবিড় সম্পর্ক বর্তমান| বস্তুত, কোনাে ব্যক্তির বুদ্ধি না থাকলে শিক্ষা বা নির্দেশনাই সার্থক হতে পারে না| এখন প্রশ্ন হল, বুদ্ধি ও বুদ্ধির অভীক্ষা কীভাবে শিক্ষা ও শিক্ষার বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত, সে বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল— 

[1] বিদ্যালয়ে ছাত্র ভরতির ক্ষেত্রে :  বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভরতি নেওয়ার সময় তাদের বুদ্ধির বিষয়ে অর্থাৎ, বুদ্ধ্যঙ্ক সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া বিশেষ প্রয়ােজন। বুদ্ধির পরিমাপের পর ভরতির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে অসুবিধায় পড়তে হয় না।

[2] শিক্ষার্থীদের বিভাগীয়করণের ক্ষেত্রে : বর্তমানে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে একই শ্রেণিতে অসংখ্য শিক্ষার্থী পঠনপাঠন করে। একই শ্রেণিতে পাঠরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুদ্ধ্যঙ্ক বা মেধার বৈষম্য বেশি হলে পঠনপাঠনে বেশ অসুবিধা হয়। সমমেধার বা সমবুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের একত্রে পাঠদান করলে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উভয়েরই সুবিধা হয়। 

[3] শিক্ষার সীমারেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে: বুদ্ধির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনের ক্ষমতার একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা টানা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে— 

i. যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 50-70-এর মধ্যে, সেইসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করলে 10-11 বছর পর্যন্ত প্রথম শ্রেণিতেই থাকে| অধিক সুযােগসুবিধা পেলে তাদের মধ্যে কয়েকজন 14-15 বছরে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ হতে পারে। 

ii. যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 70-90-এর মধ্যে, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন করতে পারে৷ 

iii. যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 90-100-এর মধ্যে, তারা অনুশীলন ও পরিশ্রমের ফলে স্নাতক ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশােনা করতে পারে৷ 

iv. যাদের বুদ্ধ্যঙ্ক 110-এর অধিক তারা সুযােগসুবিধা পেলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশােনা করতে পারে। 

[4] পাঠক্রম নির্দেশনার ক্ষেত্রে শিক্ষার ক্ষেত্রে: বিভিন্ন ধরনের পাঠক্রম লক্ষ করা যায়—কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ইত্যাদি। বুদ্ধ্যঙ্ক অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম গ্রহণ করা উচিত। কোন্ শিক্ষার্থী কী ধরনের পাঠক্রম নিলে ভবিষ্যতে সাফল্য পাবে, তা বুদ্ধির পরিমাপের দ্বারা নির্ধারণ করা উচিত। 

[5] বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে : প্রতিটি দেশে যেমন কিছু প্রতিভাবান শিক্ষার্থী থাকে, তেমনি কিছু শিক্ষার্থী অল্পবুদ্ধিসম্পন্নও হয়। পিছিয়ে-পড়া বা অল্পবুদ্ধি সম্পন্নদের খুঁজে বের করে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে সমাজের উপকার হয়। মােটকথা, বিশেষ শিক্ষার ক্ষেত্রে বুদ্ধির পরিমাপ করা বিশেষভাবে প্রয়ােজন। 

[6] আশানুরূপ ফললাভে অসমর্থদের ক্ষেত্রে : আমাদের দেশের বহু শিক্ষার্থীর উপযুক্ত মেধা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন মানসিক কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে তারা আশানুরূপ ফললাভ করতে পারে না। এইসব ‘আন্ডার অ্যাচিভার’ (Under achiever) বুদ্ধি অভীক্ষার দ্বারা বাছাই করে ও সমস্যাসমা? সহায়তা করলে, তারা বিশেষভাবে উপকৃত হয়।

[7] শিক্ষকদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে: ‘শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বন্ধি অভীক্ষা প্রয়ােগ করা হয়।

[8] বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে: বর্তমানে, বহু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বৃতি (scholarship) প্রদানের ব্যবস্থা করে। বৃত্তিদানের ক্ষেত্রে শিক্ষাথীর। পারদর্শিতার পাশাপাশি তার বুদ্ধির পরিমাপ বা বুদ্ধ্যঙ্ক সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়ােজন।

[9] মানসিক রােগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে: মানসিক ব্যাধির সঙ্গে বুদ্ধির একটা সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনােচিকিৎসকগণ রােগীর অন্যান্য আচরণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি বুদ্ধির পরিমাপও করে। থাকেন।

[10] সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে: বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কোন প্রকার সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি গ্রহণ করবে, তার প্রকৃতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বুদ্ধির অভীক্ষার প্রচলন ঘটেছে।

[11] বৃতিগত নির্দেশনার ক্ষেত্রে: মনােবিদ বার্ট একটি গবেষণায় । বুদ্ধ্যঙ্কের পরিপ্রেক্ষিতে বৃত্তির শ্রেণিবিভাগ করেছেন। এর ফলে, শিক্ষাথীদের বৃত্তিগত নির্দেশনাদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে তাদের আগ্রহ, দক্ষতা, প্রবণতা, বিশেষ ক্ষমতা প্রভৃতির পাশাপাশি বুদ্ধ্যঙ্ক সম্পর্কে অবহিত। হওয়ার প্রয়ােজনীয়তাও উপলদ্ধি করা হচ্ছে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!