শৈশবে শিশুর চাহিদা গুলি উল্লেখ করো 4 + 4
উত্তর:
শৈশবকালীন বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শিশুর মধ্যে মােটামুটিভাবে তিন প্রকারের চাহিদা দেখা যায় — (1) জৈবিক চাহিদা, (2) মানসিক চাহিদা এবং (3) সামাজিক চাহিদা। এই চাহিদাগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হল।
জৈবিক চাহিদার মধ্যে উল্লেখযােগ্য চাহিদাগুলি হল :
[1] খাদ্যের চাহিদা : শিশুর দ্রুতগতিতে দৈহিক বৃদ্ধি হওয়ার জন্য খাদ্যের চাহিদা অত্যন্ত প্রকটভাবে দেখা যায়।
[2] ঘুমের চাহিদা ; এই বয়সে যেহেতু সঞ্চালনমূলক বৃদ্ধি খুব বেশি হয় তাই ঘুমের চাহিদা দেখা যায় প্রবলভাবে।।
[3] নিরাপত্তার চাহিদা : এই বয়সে শিশুরা যেহেতু সর্বদা পিতামাতার সান্নিধ্যে থাকে সেহেতু তাদের মধ্যে এই চাহিদা সৃষ্টি হয়।
[4] সক্রিয়তার চাহিদা : শিশুরা এই সময়ে স্বাধীনভাবে দৌড়ানাে, নড়াচড়া, ঘােরাফেরা করে, এই কাজে বাধা পেলে। এইরূপ চাহিদার সৃষ্টি হয়।
[5] পুনরাবৃত্তির চাহিদা : একই কথা বারবার বলা, একই কাজ বারবার করার প্রবণতা থেকে এই চাহিদা সৃষ্টি হয়।
মানসিক চাহিদার মধ্যে উল্লেখযােগ্য চাহিদাগুলি হল :
[1] অনুকরণের চাহিদা : শিশু এই সময়ে পিতামাতা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অনুকরণ করে। ফলে এই চাহিদার উদ্রেক ঘটে।
[2] জানার চাহিদা : জগতের বস্তু, ব্যক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে ওঠে না সেজন্য সে যা যা পর্যবেক্ষণ করে। সেগুলি সম্বন্ধে জানার কৌতূহল তীব্র হয়। যেমন—কোনাে খেলনা দিলে তা তৎক্ষণাৎ ভেঙে টুকরাে করে তার ভেতরে কী আছে তা জানতে চায়।
[3] কল্পনার চাহিদা : এই সময়ে শিশুরা অবাস্তব রূপকথার রাজ্যে বিচরণ করে।
[4] আধিপত্যের চাহিদা: এইসময়ে শিশুর মধ্যে আপন-পর এই ধারণা থাকে না, ফলে সে সব কিছুকেই নিজের অধিকারে আনতে চায়।
সামাজিক চাহিদার মধ্যে উল্লেখযােগ্য চাহিদাগুলি হল :
[1] দলবদ্ধ হওয়ার চাহিদা : এই বয়সে শিশু কখনােই। একা থাকতে চায় না। তাই এই চাহিদা দেখা যায়।
[2] প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাহিদা : সমবয়স্ক শিশুরা একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। অনেক সময়ে সমবয়সি ভাই-বােনের মধ্যেও এই চাহিদা দেখা যায়।।
[3]সহযােগিতার চাহিদা : এইসময়ে যেহেতু শিশু নিরাপও হীনতা অনুভব করে, তাই সবসময় সকলের সহযােগিতা পেতে চায়। উপরে বর্ণিত চাহিদাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, শৈশবকাল। হল এক অনুভূতিপ্রবণ সময়কাল এবং পরবর্তী জীবনের যাবতীয় সু-অভ্যাসের স্ফুরণ এই সময়েই ঘটে। তাই শৈশবকালীন এই চাহিদাগুলি পুরণে পরিবার এবং সমাজ যদি ব্যর্থ হয় তবে শিশুর জীবনে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় শিশু নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করতে করতে একাকিত্বতায় অগ্রস। হয়। অর্থাৎ শিশুর মধ্যে তখন আর প্রাণােচ্ছলতা দেখা যায় না। এই আচরণ সঞ্চালনমুলক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
শিশুদের মধ্যে জানার চাহিদা যদি তৃপ্ত না-হয় তবে অনেক সময় জানার চাহিদাকে তৃপ্ত করতে আক্রমণাত্মক আচরণ করে। অন্যতম চাহিদা হিসেবে শিশুর জীবনে ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক চাহিদাগুলি। এই চাহিদাগুলির অতৃপ্তিতে ভবিষ্যতে স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক এক নাগরিকে পরিণত হতে পারে যা সমাজ ও দেশের পক্ষে কখনােই মঙ্গলকর নয়। এ ছাড়া, ব্যক্তিগতভাবেও শিশুর মধ্যে সমবেদনা, সহানুভূতি এই প্রক্ষোভগুলি গড়ে উঠবে না। ফলে পরিবার ও শিশুর চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি হবে, যা ভবিষ্যতে সমাধান করা খুবই কষ্টকর হয়ে উঠবে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।