শিক্ষায় সমসুযােগের ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে। অথবা, শিক্ষায় সমসুযােগ কী কী ভাবে সম্ভব?

শিক্ষায় সমসুযােগের ধারণাটি ব্যাখ্যা করাে। অথবা, শিক্ষায় সমসুযােগ কী কী ভাবে সম্ভব?    Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:-

শিক্ষীয় সমসুযােগের ধারণ : গণতান্ত্রিক শিক্ষার লক্ষ্য হল প্রতিটি ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ ও সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধন। রাষ্ট্রীয় খরচে সকলের প্রয়ােজনমতাে সর্বোত্তম শিক্ষার সুযােগসৃষ্টিই শিক্ষার সম-অধিকারের মূল কথা | এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে কোঠারি কমিশন আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছে যাতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমস্ত ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগ্রহণের সমসুযােগ লাভ করতে পারে।

কোঠারি কমিশন লক্ষ করেছে যে, ভারতে যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তাতে জাতিগত বিভেদ ও শ্রেণিবৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার পরিচালিত স্কুলগুলি অবৈতনিক হলেও এগুলির মান অনুন্নত এবং এগুলিতে দরিদ্র শ্রেণির ছেলেমেয়েরাই পড়াশােনা করে। অন্যদিকে বেসরকারি বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন ভালাে হলেও সেগুলির বেতন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এবং কিছুসংখ্যক ধনী সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরাই সেগুলিতে পঠনপাঠন করে।

মাধ্যমিক স্তরে অধিকাংশ উন্নত ধরনের স্কুলগুলি বেসরকারি এবং সেগুলিতে বেতনের পরিমাণ এত বেশি যে ধনী সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরাই শুধু সেগুলিতে পড়ার সুযােগ পায়। শিক্ষাজগতে এই শ্রেণিবৈষম্য ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং জাতীয় আদর্শের পরিপন্থী।

কমিশন আরও যেসব শিক্ষাগত সুযােগের সমতার অভাব লক্ষ করেছে, সেগুলি হল— 

[1] বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানের যথেষ্ট তফাত রয়েছে।

[2] বালকদের ও বালিকাদের শিক্ষাগত সুযােগের মধ্যে বিশেষ তারতম্য রয়েছে।

[3] তপশিলি জাতি এবং উপজাতিদের সঙ্গে সমাজের উচ্চ সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাগত সুযােগের মধ্যেও যথেষ্ট বৈষম্য রয়েছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে শ্রেণিবৈষম্য দূর করে সর্বস্তরের জনসাধারণ যাতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সামাজিক পদমর্যাদা নির্বিশেষে শিক্ষালাভের সমান সুযােগ-সুবিধা ভােগ করতে পারে, তারজন্য কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করে —

[1] ধীরে ধীরে শিক্ষার প্রতিটি স্তরকে অবৈতনিক করে তুলতে হবে ৷ 

[2] প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষার উপকরণ ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। 

[3] পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করতে হবে। এর পরবর্তী 10 বছরের মধ্যে উচ্চতর মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অবৈতনিক করতে হবে। 

[4] মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়ে বুক ব্যাংক’ গড়ে তুলতে হবে। 

[5] শিক্ষার প্রতিটি স্তরে শিক্ষার্থীদের বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে। 

[6] জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীকে শিক্ষালাভের সমান সুযােগ দেওয়ার জন্য সাধারণ বিদ্যালয় প্রথা (Common School System)র প্রবর্তন করতে হবে। 

[7] মেয়েদের এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষার সুযােগ আরও বৃদ্ধি করতে হবে। 

কমিশনের অভিমত যে, শিক্ষাক্ষেত্রে সমসুযােগ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু ভারতের মতাে বহু সমস্যাজর্জরিত দেশে সরকারের পক্ষে শিক্ষার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করা আদৌ সম্ভব কি না তা আজ একটি বড়াে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের নিজস্ব চাহিদা, সামর্থ্য, পছন্দ-অপছন্দ অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাহলেই শিক্ষাক্ষেত্রে সমসুযােগ সৃষ্টির ধারণাটি বাস্তবায়িত হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment