সিরাজদ্দৌলা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (নাটক) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Suggestion 2022। Class 10 Bengali Suggestion 2022

সিরাজদ্দৌলা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (নাটক) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Suggestion 2022। Class 10 Bengali Suggestion 2022“ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক মাধ্যমিক পরীক্ষা (Madhyamik / WB Madhyamik / MP Exam Class 10 Exam / West Bengal Board of Secondary Education – WBBSE Madhyamik Exam / Madhyamik Class 10th / Class X / Madhyamik Pariksha) পরীক্ষায় এখান থেকে কিছু প্রশ্ন অবশ্যই থাকবে । সে কথা মাথায় রেখে Wbshiksha.com এর পক্ষ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দের জন্য় মাধ্যমিক বাংলা – সিরাজদ্দৌলা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত অতি আবশ্যক কিছু প্রশ্নোত্তর এবং সাজেশন

নাটক

সিরাজদ্দৌলা

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

সিরাজদ্দৌলা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (নাটক) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Suggestion 2022। Class 10 Bengali Suggestion 2022
কমবেশি ১৫০টি শব্দে উত্তর লেখাে – প্রশ্নের মান ৫ 

১। সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজ-উদ-দৌলার চরিত্র বিশ্লেষণ করাে।

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত দশম শ্রেণির পাঠ্যাংশে সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র সিরাজ-উদ-দৌলা। পাঠ্যাংশের পরিসর স্বল্প ও ঘটনাবহুল। তবে নাট্য চরিত্রগুলির ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে নাট্যকার সিরাজ চরিত্রের মৌলিক দিকগুলি তুলে ধরেছেন।।

চারিত্রিক দৃঢ়তা – সিরাজ চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কঠোর দৃঢ়তা। নাটকের শুরুতেই দেখা যায় সভাসদ পরিবৃত্ত ও রাজসভায় উপবিষ্ট নবাব কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসনকে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযােগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং চিরতরে দরবার ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।

স্পষ্টবক্তা ও দুরদর্শীতা – স্পষ্টবক্তা সিরাজ ওয়াটসনকে নবাবের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের কারণ জিজ্ঞাসা করেছেন। প্রাণদন্ড না দিয়ে সভাত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনা এবং পরবর্তী সময়ে সভাসদদের সঙ্গে কথােপকথনে তাঁর চারিত্রিক কোমলতা ও দূরদর্শীতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

বাস্তববাদীতা –  সিরাজ দৌলা ছিলেন বাস্তববাদীশাসক চিরকালের মিত্র ফরাসিদের সাহায্য করতে না পারার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। জগৎশেঠ, রায়বল্লভ, মীরজাফর প্রমুখের বিশ্বাসঘাতকতার কদর্যরূপ উন্মােচিত হওয়ার পরেও তাদের সঙ্গে কটুব্যবহার করেন নি, ক্ষমাশীল হয়ে দেশের দুর্দিনে। তাদের সাহায্য প্রার্থনা করেছেন।

আত্মসমালােচক ও সম্মানপ্রদানকারী নবাব নিজের ভুলভ্রান্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি কাটিয়ে ওঠার সচেষ্ট এবং সভাসদদের, মাসি ঘসেটি বেগমের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ন ব্যবহার না করে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন।

মােটকথা চারিত্রিক দৃঢ়তা-কোমলতা, দূরদর্শীতা, বুদ্ধিমত্তা, আত্মসমালােচনায়। এবং সহৃদয়তায় সিরাজদৌলা চরিত্রটি নাটকে রক্তমাংসের চরিত্র হয়ে উঠেছে।

২। “জানাে এর শাস্তি কী?” – বক্তা কে? কাকে উদ্দেশ্য করে এই উক্তি? এর’ বলতে কোন কাজের কথা বলা হয়েছে? উক্ত কাজের জন্য কোন শাস্তি নির্ধারিত হয়েছিল? 

উত্তর – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত “সিরাজদ্দৌলা নাটক থেকে উদ্ধৃত প্রশ্নের হলেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসনকে উদ্দেশ্য করে উক্ত উক্তি করেছেন।

আলিনগরের সন্ধির শর্তাবলী যাতে যথাযথভাবে পালিত হয় তা দেখভালের জন্য কোম্পানি ওয়াটসন সাহেবকে নিযুক্ত করেন। কিন্তু তিনি নিজ দায়িত্ব পালন না করে নবাবের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রাসাদ চক্রান্তে লিপ্ত হন। এমনকি নবাবের সামনেই সভাসদদের নবাবের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তােলেন এবং কলকাতার ইংরেজদের উপদেশ দেন চন্দননগর আক্রমণ করার জন্য। সেটা ছিল। নবাবের আদেশ লঙ্ঘন করা। উদ্ধৃত উক্তিতে ‘এর’ বলতে নবাবের বিরুদ্ধে সংগঠিত।

এই চক্রান্তের কথাই বলা হয়েছে।

নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর বিরুদ্ধে সংগঠিত চক্রান্তের জন্য ওয়াটসনকে দায়ি করেন। শাস্তিস্বরূপ দরবার থেকে ওয়াটসনকে বহিস্কৃত করেন। বহি:স্কারের পাশাপাশি তাকে জানিয়ে দেন যে তিনি ভবিষ্যতে আর কখনাে নবাবের দরবারে স্থান পাবেন না।

৩। “আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন” – বক্তা কে? কার প্রতি তিনি এই উক্তি করেন? বক্তার এই উক্তির কারণ উল্লেখ করাে। অথবা, “আপনাদের কাছে ভিক্ষা যে, আমাকে শধ এই বিশ্বাস দিন।” বক্তা কে? কাদের প্রতি এই আহ্বান ? বক্তার এই উক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ  করাে। 

সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে উদ্ধৃত উক্তিটির বকা হলেন বাংলার নাবাব সিরাজদ্দৌলা।

বক্তা মীরজাফরের প্রতি এই উক্তি করেছেন।

সিরাজদ্দৌলা নবাব হবার পরপরই সৌকত জঙগ, ঘসেটি বেগম, জ শেঠ, মীরজাফর প্রমুখর দ্বারা নবাব বিরােধী একটি চক্রান্ত গড়ে ওঠে। ইংরেজ কর্মচারী ওয়াটসন তাদের সঙ্গী হন। যে কারণে সিরাজ ওয়াটসন সাহেবকে প্রাসাদ থেকে বহিস্কার করেন। পরে মীরজাফরকে লেখা ওয়াটসনের চিঠি দেখান এবং বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সেই প্রশ্ন তােলেন। মীরজাফর তখন প্রশ্ন তােলে যে নবাব প্রকাশ্য দববাবে তার বিচার করতে চান কিনা। প্রত্যত্তরে নবাব সিরাজদ্দৌলা উক্ত উক্তি করেছেন। কারণ তিনি মনে করেন বাংলার দুর্দিনে বাংলার মান-মর্যাদা, স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সভাসদদের একসঙ্গে বাংলার পক্ষে প্রতিরােধ গড়ে তােলা দরকার। আর এর জন্য প্রয়ােজন ভেদাভেদ, বিদ্বেষ, পারস্পরিক দোষারােপ ভুলে সকলের মধ্যে সৌহাদ্য স্থাপন।

৪। “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না” —দুর্দিনের কারণ কী? কীভাবে এই দুর্দিনের হাত থেকে মুক্তির পথ খুঁজেছে? অথবা, “বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা” – কোন কারণে “বাংলার ভাগ্যাকাশে ঘনঘটা নেমে এসেছিল তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করাে। অথবা, বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয় – মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি এই বাংলা” – বক্তা কে? প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করাে। 

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের উক্ত উদ্ধৃতাংশের বক্তা । হলেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা।

নবাব আলিবর্দির মৃত্যুর পর সিরাজ সিংহাসন লাভ করেন। কিন্তু সওকত জঙ্গ ছিলেন সিংহাসনের এক দাবীদার। পারিবারিক বিবাদের কারণে ঘসেটি বেগম, মীরজাফর, রাজবল্লভ সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। একদিকে সংকত জঙ্গের সঙ্গে সংগ্রাম, অন্যদিকে ইংরেজরা সিরাজের আদেশ অমান্য করে চন্দননগর দখল করে। নানারকম চক্রান্তে সিরাজের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার ইংরেজদের ক্ষমতা দখল বাংলার জন্য সুখের ছিল না। সিরাজ এই পরিস্থিতিকে দুর্দিন বলেছেন।

রাজবল্লভ, মীরজাফর প্রমুখ নানা কারণে সিরাজের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। তারা মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে আপসের পক্ষে মত দেন। কিন্তু সিরাজ কোম্পানির ঔদ্ধত্যকে সহ্য করতে পারেন নি। তাই বাংলার মান মর্যাদা, স্বাধীনতা। রক্ষার জন্য সব সভাসদদের এক সঙ্গে বাংলার পক্ষে প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান করেন। তিনি মনে করেন সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরােধ গড়ে তুললে। বাংলা বিপদমুক্ত হবে।

৫। “আমি আজ ধন্য; আমি ধন্য” – বক্তা কে? বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

উত্তর – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশের উক্ত উদ্ধৃতাংশের বক্তা। হলেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা।।আলিবর্দীর মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব , কিন্তু সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন আরাে দু’জন – ঘসেটি বেগম ও পুর্ণিয়ায় শাসক সৌকত জঙ্গ। নিঃসন্তান ঘসেটি বেগমের পালিত পুত্র সৌকত জগতে বাংলার নবাব করতে চাইলে সিরাজের সঙ্গে তাদের বিরােধ বাধে।

ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে মীরজাফর, জগৎ শেঠ, রায়দুর্লভ, ইয়ার লতিফ প্রমুখর মিলিত প্রয়াসে একটি চক্রান্তগােষ্ঠী গড়ে ওঠে। ইংরেজরা এদের শরিক হবার ফলস্বরূপ ওয়াটসনকে নবাব প্রাসাদ থেকে বহিঃস্কার করেন। জগৎ শেঠ, মীরজাফর প্রমুখর সঙ্গে মীরমদন, মােহনলাল ও নবাবের বাক্য বিনিময় চলে।

একসময় দোষ স্বীকার করে মীরজাফর সর্বক্ষেত্রে সহায়তা করার প্রতিজ্ঞা করেন। অপরদিকে মােহনলাল, মীরমদন ও সিপাইশালার মীরজাফরের সকল নির্দেশ মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে।আনন্দিত নবাব প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন। 

৬। “দুর্দিন না সুদিন” – বক্তা কে? এখানে দুর্দিন ও সুদিন বলতে কী বােঝানাে হয়েছে? অথবা, “সিরাজের নবাবির এই পরিণাম” – বক্তা কে? প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করাে।

সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে উধৃত উক্তির বক্তা হলেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার জ্যেষ্ঠা মাসি ঘসেটি বেগম।

নবাব আলিবর্দীর মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব হন। কিন্তু নিঃসন্তান জ্যেষ্ঠা মাসি ঘসেটি বেগম তার পালিত পুত্র তথা অপর ভগ্নিপুত্র সৌকত জঙ্গকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলেন। ফলে তাদের মদতে মীরজাফর, জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ প্রমুখকে নিয়ে সিরাজ বিরােধী গােষ্ঠী গড়ে ওঠে। চক্ৰী ঘসেটি বেগমকে সিরাজ তার প্রাসাদে বন্দী করে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি চেয়েছেন ইংরেজ বাহিনী সিরাজের বিরুদ্ধে আতথা করুক। ইতিমধ্যে ইংরেজ সেনাবাহিনী মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে। সিরাজের পক্ষে এটি ছিল দুর্দিন, যেটি মাসি ঘসেটি বেগমকে বলেছেন। অপরদিকে ঘটনাটি ঘসােয় কাছে ছিল সুদিন। কেন না প্রাসাদবন্দী ঘসেটি বেগম সবসময়ই মনে প্রাণে সিরাতে পতন চেয়েছিলেন। তাই তার কাছে এটি সুদিন ছিল এবং শেষে বলেছেন সিরাজের নবাবির এই পরিণাম।

৭। “তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা, জানি না, আজ কার রক্ত সেইপলাশি, রাক্ষস পলাশি। – বক্তা কে? পলাশি নামকরণের কা” লেখাে। উক্তিটির তাৎপর্য কী?

সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা।।

পলাশি গ্রাম পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভাগীরথী নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত। প্রবাদ অনুসারে জানা যায় যে ঐ স্থানে এক সময় প্রচুর পলাশ গাছ ছিল। ফলে লক্ষ লক্ষ পলাশ ফুলে অগ্নিবর্ণ ধারণ করতাে ঐ স্থান। সেই থেকেই এর নাম হয় পলাশি। অন্যদিকে বাংলার ভাগ্য নির্ধারণকারী ঐতিহাসিক পলাশি যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার জন্য এই স্থান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।।

নবাব সিরাজদ্দৌলা বুঝেছিলেন চক্রান্তকারী বিশ্বাসঘাতকদের সাময়িকভাবে নিজের পক্ষে রাখতে সম্ভব হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। উপরন্তু মাতৃসমা ঘসেটি বেগমের অভিশাপ প্রদান তাঁকে মানসিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল করে তুলেছিল। তাই ইংরেজ কোম্পানির সঙ্গে তার যুদ্ধ অবশ্যম্ভামী জেনে তিনি দোলাচলে ভুগছেন। যুদ্ধের ফল যাই হােক না কেন, যেই জিতুক না কেন পলাশির প্রান্তরে রক্তক্ষয় অনিবার্য সেটা তিনি উপলব্ধি করেছেন। মনের দ্বন্দ্ব, বিবাদের সঙ্গে নাট্যাংশের শেষ সংলাপে তাঁর মানসিক যন্ত্রণার কথা প্রকাশিত হয়েছে। তাই তিনি বলেছেন এক সময় পলাশি ফুলে রাঙা পলাশির লালের নেশা তার মেটেনি, সে রক্তের পিয়াসী। নবাবের কণ্ঠে তাই ধ্বনিত হয়েছে – তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা, জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসি পলাশি। 

৮। সিরাজদ্দৌলা নাটকের নামকরণ কতটা সার্থক হয়েছে বিচার করাে।

সাহিত্যের যে কোনাে শাখার নামকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নামকরণের বিন্দুতে আমরা সিন্ধুর আস্বাদ পাই। সাহিত্যের নামকরণ প্রধানত তিন ভাবে হয়ে থাকে — চরিত্র কেন্দ্রিক, বিষয় কেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনা কেন্দ্রিক। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা নাটকের নামকরণ চরিত্রকেন্দ্রিক হয়েছে বলে মনে হয়।

‘সিরাজদ্দৌলা নাটকের সূচনা সিরাজের দরবারের দৃশ্য দিয়ে। সিরাজ সিংহাসনে উপবিষ্ট, সভাসদের মাঝে মীরজাফর, মােহনলাল, মীরমদন, রায় দুর্লভ একদিকে; অন্যদিকে রাজবল্লভ, জগৎ শেঠ, ওয়াটস, মসিয়ে লা দন্ডায়মান।

নাটকটি বাংলার শেষ নবাব সিরাজদ্দৌলার যেন জীবনালেখ্য। নাটকের শুরু, শেষ, বিভিন্ন চরিত্রের আসা-যাওয়া, কথােপকথন, ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত সবকিছুই আবর্তিত হয়েছে সিরাজদ্দৌলাকে কেন্দ্র করে। নাটকের সমগ্র স্থান জুড়েও সিরাজদ্দৌলা । সিরাজদ্দৌলার হাত ধরেই বাংলার ভাগ্য ইতিহাস নির্ধারিত হয়েছে ।

প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সিরাজ চরিত্রটি সক্রিয় রয়েছে। অর্থাৎ নাট্যাংশে সিরাজের বিচক্ষণতা, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা প্রধান হয়ে উঠেছে। তাই নাট্যাংশের নামকরণ সার্থক।

৯। সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে যে দুটি নারী চরিত্র রয়েছে ঘসেটি ও লুৎফা তাদের তুলনামূলক আলােচনা করাে। অথবা, “মনে হয় ওর নিঃশ্বাস বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ সঞ্চালনে ভূমিকম্প”—কার সম্পর্কে বলা হয়েছে? তার চরিত্রটি আলােচনা করে উক্তিটির যথার্থতা বিচার করাে।

সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে দুটি নারী চরিত্র রয়েছে – একটি ঘসেটি বেগম অপরটি লুফা। এই দুই নারী যেন নবাবের পতন ও সহানুভূতির প্রতীক হয়ে। উঠেছে।

ঘসেটি বেগম ছিলেন নবাব আলীবর্দির জ্যেষ্ঠা কন্যা সিরাজের মাতৃসমা। রাজত্ব নিয়ে বৈরিতায় সিরাজ ও ঘসেটি প্রতিদ্বন্দ্বী। আলােচ্য নাট্যাংশে দেখা যায়। সিরাজ তার মতিঝিল অধিকার করে তাকে প্রাসাদে নজরবন্দী করে রাখেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ঘসেটি সিরাজের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে থাকে এবং সিরাজের পতন কামনা করতে থাকেন – “এই প্রতিহিংসা আমার পূর্ণ হবে সেই দিন, যেদিন তােমার এই প্রাসাদ অপরে অধিকার করবে।”

ঘসেটি বেগমের পাশে প্রাসাদে থেকে লুৎফা বুঝতে পরেছে যে চক্রান্তে লিপ্ত ঘসেটির যেন নিঃশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সালনে। ভূমিকম্প। অর্থাৎ বাইরে ও ভিতরে চক্রান্তের ফলে যে টানাপােড়েন সৃষ্টি হয়। তা যেন দুটি নারী চরিত্রের মধ্যে দিয়ে প্রতীয়মান হয়েছে আলােচ্য নাট্যাংশে।

১০। ‘আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, এ কথা তাঁদের মনে রাখা উচিত’ – নিমক খাওয়ার তাৎপর্য কী? 

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে আলােচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজদ্দৌলার সভাসদ মীরমদন। উদ্ধৃতাংশে তিনি নিমক খাওয়া বলতে। সিরাজদ্দৌলার প্রতি অন্তরের ভালােবাসা ও কৃতজ্ঞতাকে বােঝাতে চেয়েছেন। যেহেতু তিনি সিরাজের বেতনভুক্ত কর্মচারী, তাই তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই মীরমদনের মতে যথাযথ কাজ।

মীরমদন সৎ ও চরিত্রবান সৈনিক। রাজদরবারের সংখ্যাগরিষ্ঠের দুনীতি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও পরিশীলিত হওয়া সত্ত্বেও স্থানবিশেষে কাঠিন্য প্রদর্শন করতেও পিছপা হন না। তাই সর্বসমক্ষে মীরজাফরকে অপ্রিয় সত্য কথাটি বলতে তিনি দ্বিধাবােধ করেনি। এ তাঁর চারিত্রিক দঢ়তার দৃষ্টান্ত। কিন্ত কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ নবাবের প্রতি মীরমদনের আনুগত্য প্রশ্নাতীত। বীর মীরমদন নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন। তাই নবাবের অন্যান্য সভাসদদের নবাবের প্রাত দুর্ব্যবহার ও স্পর্ধা লক্ষ্য করে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রুখে দাঁড়ান। কৃতজ্ঞতা, ভালােবাসা, আনুগত্য মীরমদনের চরিত্রে এনে দিয়েছে নম্রতা, নম্বতা, দৃঢ়তা ও বিশ্বস্ততাবােধ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

1 thought on “সিরাজদ্দৌলা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (নাটক) প্রশ্ন ও উত্তর | Madhyamik Bengali Suggestion 2022। Class 10 Bengali Suggestion 2022”

Leave a Comment