স্মৃতি কি ? স্মৃতির উপাদানগুলোর বিবরণ দাও । শিক্ষার্থীর স্মৃতির উন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা কী ?

স্মৃতি কি ? স্মৃতির উপাদানগুলোর বিবরণ দাও । শিক্ষার্থীর স্মৃতির উন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা কী ?

উত্তর:

স্মৃতির সংজ্ঞা

স্মৃতি কি এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক মনোবিজ্ঞানী, স্মৃতির সংজ্ঞা দিয়েছেন এইসব সংজ্ঞা সাধারণত বুদ্ধিতে স্মৃতি সম্বন্ধে যে ধারণা পাওয়া যায় তাকেই বোঝানো হয়েছে।
মনোবিজ্ঞানী উড ওয়ারথ ও মারকুইস মনে করেন অতীতে যা শেখা হয়েছে তাকে মনে করার মধ্যেই স্মৃতির অস্তিত্ব বর্তমান।
গিলফোর্ড বলেছেন স্মৃতি যে কোন প্রকার তথ্য সংরক্ষণ করা। আবার বিজ্ঞানী আই জাঙ্ক বলেছেন প্রাণীর পূর্ববর্তী শিখন প্রক্রিয়া অভিজ্ঞতা জনিত তথ্য সংরক্ষণ ও কোন উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তার পুনরুদ্রেক এর ক্ষমতা হল স্মৃতি।

স্মৃতির উপাদান

স্মৃতি কতকগুলো অঙ্গ বা অংশ নিয়ে গঠিত। স্মৃতির অঙ্গ প্রধানত চারটি, যথাঃ ধৃতি, পুনরুৎপাদন, প্রত্যভিজ্ঞা এবং স্থান-কাল নির্দেশ।

১) ধৃতি

সংবেদন, প্রত্যক্ষ, শিখন প্রভৃতি মনের সংগ্রাহক বৃত্তি। এদের সহায়তায় মন নতুন নতুন জ্ঞান আহরণ করে। এই আহৃত জ্ঞান অর্জিত হবার সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে গেলে জ্ঞানের বিকাশ বা বৃদ্ধি সম্ভব হত না। এটি মনে সংরক্ষিত থাকে বলেই, এর ভিত্তিতে উচ্চতর জ্ঞান লাভ সম্ভব হয়। অবশ্য আহৃত জ্ঞানের সবটাই সব সময় সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে সংরক্ষিত থাকে না। ধৃতি মনের এই সংরক্ষণমূলক শক্তি। চেতনাকে স্পর্শ করে, তাই প্রতিরূপের আকারে মনে সংরক্ষিত থাকে।

২) পুনরুদ্রেক

কিন্তু প্রতিরূপ মনে সংরক্ষিত থাকলেই এদের স্মরণ হয় না। নানা অভিজ্ঞতার ফলে নানা প্রতিরূপই তো মনে হয়েছে। যে বিষয়টি স্মরণ করতে হবে, তার প্রতিরূপগুলোকে এদের অব্যক্ত অবস্থা থেকে ব্যক্ত করা দরকার। মনে সংরক্ষিত অব্যক্ত প্রতিরূপ ব্যক্ত করাকে বলে পুনরুদ্রেক।

পুনরুদ্রেক সম্ভব হয় কোনো উদ্দীপক সূত্র বা অভিভাবের সাহায্যে। উদ্দীপক প্রতিরূপগুলোকে অতীত অভিজ্ঞতার ক্রম, সম্বন্ধ, বিন্যাস প্রভৃতি অনুযায়ী পুনরুপস্থাপিত করে। প্রতিরূপগুলোর মধ্যে যে সম্ভন্ধের ফলে উদ্দীপক এদের পুনরুস্থাপিত করতে পারে একে বলা হয় অনুষঙ্গ।

৩) প্রত্যভিজ্ঞা

শুধু পূর্ব-অভিজ্ঞতালব্ধ প্রতিরূপের ধারণ এবং পুনরুৎপাদন স্মরণের পক্ষে যথেষ্ট নয়। যে বিষয়টি পূর্ব অভিজ্ঞতার জ্ঞান হয়েছিল, পুনরুৎপন্ন প্রতিরূপ বলে চিহ্নিত করা বা পুনরায় জানা চাই। যে বিষয়টি পূর্বে জ্ঞানা হয়েছিল, তাই যে পুনর্বার জ্ঞাত হচ্ছে, এইরূপ জ্ঞানকে প্রত্যভিজ্ঞা বলা হয়।

পুনর্জ্ঞান বা প্রত্যভিজ্ঞা ছাড়া স্মরণক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হয়তো পূর্বজ্ঞাত বিষয়টির সঠিকভাবেই পুনরুৎপাদন হল, অথচ একে পূর্বজ্ঞাত বলে চিনতে পারা গেল না। কিংবা যে বস্তু বা বিষয়টি পূর্বে জেনেছিলাম, সেই বস্তু বা বিষয়টিকেই পুনরায় জানাচ্ছি বা স্মরণ করছি, এই প্রকারের প্রত্যভিজ্ঞতা ঘটল না। এইরূপ ক্ষেত্রে পূর্বজ্ঞান বিষয়ের পুনরুৎপাদন হওয়া আর না হওয়া সমান।

সুতরাং পুনর্জ্ঞান বা প্রত্যভিজ্ঞা স্মৃতির অপরিহার্য অঙ্গ।

৪) স্থান-কাল নির্দেশ

কোনো বস্তুর বা বিষয়ের প্রত্যভিজ্ঞতায় এর প্রতিরূপটি যে প্রতিরূপ, এই প্রকার বোধ অনিবার্য। প্রতিরূপের স্থান-কাল নির্দেশ না হলে, এই প্রকারের প্রত্যভিজ্ঞা সম্ভব হয় না। শুধু সংরক্ষিত বস্তুর বা বিষয়ের পুনরুৎপাদন হলেই হল না। বস্তুটি বা বিষয়টি কোথায়, কবে বা কখন জ্ঞাত হয়েছিল, সেই স্থান-কাল জ্ঞানেরও পুনরুৎপাদন হওয়া চাই। স্থান-কাল নির্দেশসহ বস্তুর বা বিষয়ের পুনরুৎপাদন না ঘটলে এর পরিচিতিবোধ, যাকে টিশনার প্রত্যভিজ্ঞার প্রাণরূপে আখ্যায়িত করেছেন, তা ঘটে না। দূর থেকে একটি লোককে দেখে তাকে যেন চিনি বা জানি বলে মনে হয়। কিন্তু এই সংশয়মিশ্রিত জ্ঞান প্রত্যভিজ্ঞা নয়। প্রত্যভিজ্ঞা হয় তখনই, যখন ওই লোকটিকে কোন স্থানে কবে বা কোন সময় দেখেছিলাম, এই স্থান-কাল-নির্দেশ ঘটে।

সুতরাং স্মৃতি বলতে বোঝায় সেই স্মরণ করবার ক্ষমতা, যা পুর্ব-অভিজ্ঞতালব্ধ প্রতিরূপের সংরক্ষণ, পুনরুৎপাদন, প্রত্যাভিজ্ঞা এবং স্থান-কাল-নির্দেশের ফলে ঘটে।

শিক্ষার্থীর স্মৃতির উন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা

বিদ্যালয়ের শিখন লব্ধ জ্ঞানকে পরীক্ষার জন্য যেমন সঞ্চয় করতে হয় তেমনি ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সঞ্চয় করতে হয়। সেই কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের অভিজ্ঞতার সঞ্চয় করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা শিক্ষকের অন্যতম কর্তব্য । এক্ষেত্রে শিক্ষক যা যা করতে পারেন তা হল – 

  • পাঠ্য বিষয়বস্তু কে সবসময় অর্থপূর্ণ করে তুলতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা ও দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত বিষয় উপস্থাপন করলে শিখন ও ধারণ বেশি পরিমাণে সফল হয়।
  • কোন পাঠ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে তার সম্পর্কে একটি সামগ্রিক আলোচনা ভালো স্মৃতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
  • উপযুক্ত শিখন পদ্ধতি এবং শিক্ষামূলক প্রদীপন ব্যবহার করতে হবে ও উপযুক্ত শিখন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। (Strategies of good Memorization | কিভাবে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়)
  • শিক্ষার্থীর বয়স ক্ষমতা চাহিদা অতীত অভিজ্ঞতার সাথে সম্পর্কিত বিষয়বস্তু নির্বাচন এবং পাঠদান করতে হবে।
  • বিষয়বস্তুর ছন্দ ও আবৃত্তির উপর শিক্ষক গুরুত্ব দেবেন।
  • বিষয়বস্তু শিখনের সময় শিক্ষার্থীদের দিয়ে বেশিরভাগ পুনরাবৃত্তি করাবেন।
  • বিষয়বস্তুর প্রকৃতি কাঠিন্য তার দিক দিয়ে লক্ষ্য রেখে শিক্ষক সময় নির্বাচন করবেন। আলোচনা দীর্ঘ হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্লান্তি আসে। (Strategies of good Memorization | কিভাবে স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়)
  • পাঠ্য বিষয় বস্তুর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষার্থীরা বিষয় বস্তুর প্রতি মনোযোগী হয়।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment