সক্রিয় অনুবর্তনের উপযােগিতা ও সীমাবদ্ধতা আলােচনা করাে।
অথবা, শিশুর শিখনে অপারেন্ট অনুবর্তনের প্রভাব লেখাে।
অথবা, অপারেন্ট অনুবর্তনের শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষার কৌশল) | 8 Marks
উত্তর:-
শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তনের উপযােগিতা
সক্রিয় অনুবর্তন নীতি বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—i. পরিকল্পিত শিখন পদ্ধতি এবং ii. আচরণ সংশােধনের কৌশল।
[1] পরিকল্পিত শিক্ষণ পদ্ধতি: স্পিনারের সক্রিয় অনুবর্তন নীতিকে ভিত্তি করে এই যুগান্তকারী শিক্ষা পদ্ধতিটি রূপ পেয়েছে। পরিকল্পিত শিক্ষণ পদ্ধতি হল পরিকল্পিতভাবে পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্তরের মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছােনাে৷ যে বিষয়টি শিক্ষার্থীরা শিখবে, সেই বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের উপযােগী করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা হয়, একে ‘ফ্রেম’ বলে। প্রত্যেকটি ফ্রেম এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই নিজে পড়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। ওই ফ্রেমগুলি বইয়ের আকারে বা ভিডিয়াে টেপে ধরে রাখা হয়। শিক্ষার্থী প্রতিটি অংশ বা ফ্রেম পর্যায়ক্রমে শেখে। প্রতিটি অংশেই প্রশ্ন থাকে। একটি অংশ বা ফ্রেমের প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারলে পরবর্তী অংশ পড়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। আবার ওই অংশটিই পড়তে হয়। এইভাবে সমগ্র বিষয়টি শিক্ষার্থী শিখে ফেলে। বিভিন্ন শিখনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি আজ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দুরকমের প্রােগ্রাম আছে—সরলরৈখিক প্রােগ্রাম এবং শাখা প্রােগ্রাম। ভুলকে ভিত্তি করে শাখা প্রােগ্রাম ব্যবহৃত হয়।
[2] আচরণ সংশােধনের কৌশল: শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল আচরণ সংশােধন করা, যেমন—অবাঞ্ছিত আচরণের সংশােধন, ভুল বানান শুদ্ধ করা ইত্যাদি। সক্রিয় অনুবর্তনের অন্যতম নীতি হল ‘শেপিং’ (shaping)। এই নীতির দ্বারা শক্তিদায়ী উদ্দীপককে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীর অবাঞ্ছিত আচরণ ও অভ্যাস ধীরে ধীরে সংশােধন করা হয়।
উপরােক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অনুবর্তন প্রক্রিয়াকে দুভাবে প্রয়ােগ করা যেতে পারে। যেমন— i. শক্তিদায়ী উদ্দীপকের সাহায্যে শিক্ষাভীতিকে দূর করা যায়, ii. শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষিত আচরণকে তাৎক্ষণিক শক্তিদায়ী উদ্দীপকের মাধ্যমে শক্তিশালী করা যায়।
সক্রিয় অনুবর্তনের সীমাবদ্ধতা
অধিকাংশ মনােবিদ ব্যক্তির আচরণ সংশােধন এবং শ্রেণিকক্ষে শিক্ষণে সক্রিয় অনুবর্তনের কার্যকারিতা স্বীকার করেছেন। তবে কোনাে কোনাে মনস্তত্ত্ববিদ ল্যাবরেটরির বাইরে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ পােষণ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলেন নােয়াম চমস্কি (Noam Chomsky)।
চমস্কি সক্রিয় অনুবর্তনের যেসব সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন, সেগুলি হল—
[1] স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রয়ােগযােগ্যতার অভাব: চমস্কি বলেন যে, পরীক্ষাগারের মতাে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে শিখন সংক্রান্ত পরীক্ষায় যে ফল পাওয়া যায়, স্বাভাবিক শিখন পরিস্থিতিতে তার প্রয়ােগযােগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। পরীক্ষাগারে সক্রিয় অনুবর্তনের যে নীতিগুলি আবিষ্কৃত হয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার প্রয়ােগ সম্পর্কে প্রশ্ন থাকাই স্বাভাবিক। এর কারণ এখানে আচরণ ও তার নিয়ন্ত্রণকারী উদ্দীপকের সম্পর্কটি অনেক জটিল।
[2] বংশগত ও গঠনগত উপাদান উপেক্ষিত: স্কিনার ব্যক্তির বংশগত ও গঠনগত উপাদানগুলির ওপর কোনাে গুরুত্ব আরােপ করেননি, যদিও মনস্তত্ত্বের দিক থেকে ভাষার বিকাশে এর গুরুত্ব আজ সকলেই স্বীকার করেছেন।
[3] অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা: সক্রিয় অনুবর্তনে শক্তিদায়ী উদ্দীপক-ব্যবস্থা মানুষের স্বতঃস্ফুর্ততা, কৌতুহল এবং সৃজনশীলতার ব্যাখ্যা করতে সক্ষম নয়।
[4] সহজাত বৈশিষ্ট্য উপেক্ষিত: চমস্কি সহজাত বৈশিষ্ট্যাবলির কথা অস্বীকার করে বলেছেন যে, সমস্ত আচরণ মানুষের জীবনকালেই অর্জিত হয়। তবে মনােবিদগণ একথা স্বীকার করেন না।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।