সমাজতন্ত্র প্রসারে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান বর্ণনা করাে। কংগ্রেস থেকে তাকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল কেন? ৫ + ৩ = ৮ Marks/Class 10
উত্তর:-
সমাজতন্ত্রের প্রসারে সুভাষচন্দ্র : ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা বিকাশের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
সুভাষের সমাজতান্ত্রিক ভাবনার উৎস : বিবেকানন্দের মতােই সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস করতেন, ভারতবাসীর বড়াে অভিশাপ হল দারিদ্র্য এবং এই দারিদ্রের মূল কারণ ইংরেজদের সাম্রাজ্যবাদী শােষণ। তিনি মনে করতেন, সমাজতন্ত্রের উদ্ভব কার্ল মার্কস থেকে হয়নি, তার শিকড় নিহিত ছিল ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে।
সুভাষচন্দ্রের সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা : তিনি রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি সম্পদের সুষম বণ্টন ও সামাজিক অসাম্য দূর করার কথা বলেছিলেন। সুভাষচন্দ্র নিজেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী বলেছেন। সুভাষচন্দ্র চেয়েছিলেন, ভারতবর্ষের নিজস্ব সমাজতন্ত্র গড়ে উঠুক তার নিজের ভূগােল ও ইতিহাসের ভিত্তিতে, যা সমন্বয় সাধিত সমাজতন্ত্র গঠনে সহায়তা করবে।
হরিপুরা কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচন : কংগ্রেসের বামপন্থী গােষ্ঠীকে তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের হরিপুরা অধিবেশনে সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেস সভাপতির পদে আসীন করা হয়। মত ও পথের তীব্র সংঘাত সত্ত্বেও গান্ধিজি সুভাষকে সভাপতি করার প্রস্তাব দেন।
গান্ধি-সুভাষ বিরােধের সূত্রপাত : সুভাষচন্দ্র ভারতে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রীদলের কর্মপন্থাকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানান এবং সােভিয়েত রাশিয়ার ধাঁচে ভারতের পুনর্গঠনের জন্য প্ল্যানিং কমিশন গঠনের কথা বললে সভাপতিরূপে সুভাষের কার্যাবলি ও চিন্তাধারা গান্ধিজি অনুমােদন করতে পারলেন না। এইরূপ নানা প্রশ্নে গান্ধি-সুভাষের মতপার্থক্য প্রকট হয়ে উঠতে লাগল।
ত্রিপুরী অধিবেশন ও সুভাষচন্দ্র : ২৯ জানুয়ারি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ত্রিপুরা অধিবেশনে সভাপতি পদের নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র ২০৩ টি (সুভাষের পক্ষে ১৫০০ এবং বিপক্ষে ১৩৭৭) ভােটের ব্যবধানে গান্ধি মনােনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করেন। সুভাষচন্দ্রের বিজয়লাভে গান্ধিজি ও তার অনুগত দক্ষিণপন্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে সহযােগিতা না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২৯ এপ্রিল ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে সভাপতির পদে ইস্তফা দেন।
ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন : ৩ মে, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের ভেতরেই ফরওয়ার্ড ব্লক’ নামে এক নতুন দল গঠন করে নিজেই এই দলের সভাপতি হন। তিনি বামপন্থীদের সংঘবদ্ধ করার জন্য কংগ্রেসের উপদল হিসেবে ফরওয়ার্ড ব্লককে কাজে লাগাতে চাইলেও কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল, কমিউনিস্ট পার্টি ও মানবেন্দ্রনাথ রায়ের গােষ্ঠী—কেউই তার সঙ্গে একসঙ্গে চলতে রাজি হল না।
কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার : সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযােগ এনে ১১ আগস্ট ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্রকে তিন বছরের জন্য কংগ্রেসের কোনাে পদ গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এভাবেই কংগ্রেসের রাজনীতি থেকে সুভাষচন্দ্রের চিরবিদায় ঘটে। তিনি আর কোনাে দিন কংগ্রেসে ফিরে আসেননি।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।