সমস্যা-সমাধান বলতে কী বােঝ ? সমস্যামূলক শিখনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি লেখাে। প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন তত্ত্বটি লেখাে। Class 12 | Education (শিক্ষার কৌশল) | 8 Marks
উত্তর:-
সমস্যা সমাধান
মনােবিদ গেটস্-এর মতে, সমস্যা সমাধান হল এক বিশেষ ধরনের শিখন পদ্ধতি যেখানে শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া বা সাড়াটিকে আবিষ্কার করতে হয়। মনােবিদ গ্রে-র মতে, কোনাে লক্ষ্যপূরণের পথে যেসব অসুবিধা বা বাধা দেখা যায়, সেগুলিকে অতিক্রম করার প্রক্রিয়াকে বলে সমস্যা সমাধান। বংশধারা ও পরিবেশের কারণে মানবজীবনে নানা ধরনের চাহিদার সৃষ্টি হয়। চাহিদার তাড়নায় ব্যক্তি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগােতে থাকে। এই লক্ষ্যপূরণে তাকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাধা অতিক্রম করতে সে বিভিন্ন বিকল্প প্রতিক্রিয়ার মধ্য থেকে সঠিক প্রতিক্রিয়াটি নির্বাচন করে এবং তার প্রয়ােগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে। এর ফলে যে শিখন হয়, তাকে সমস্যা-সমাধান শিখন বলে।
সমস্যামূলক শিখনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি
প্রতিটি ব্যক্তির সমস্যামূলক পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি বিষয় লক্ষ করা যায়, যথা— i. চাহিদা, ii. চাহিদাপূরণে সক্ষম এমন লক্ষ্য বা আকাঙ্ক্ষিত বস্তু এবং iii. চাহিদা ও লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে বাধা। এখানে সমস্যা হল চাহিদা ও লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে বাধা। এই বাধা দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক, অর্থনৈতিক নানা প্রকারের হতে পারে। বিভিন্ন প্রকার সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ব্যক্তি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যার ফলে তার আচরণের পরিবর্তন ঘটে। অনেকের মতে, সমস্যা সমাধান শিখন সর্বোচ্চ স্তরের শিখন, কারণ এখানে প্রতিক্রিয়াগুলি পুরােপুরিভাবে পূর্ব-অভিজ্ঞতা বা অনুবর্তনের ওপর নির্ভরশীল নয়। এখানে অভিজ্ঞতাগুলির পুনর্বিন্যাস করতে হয়। সমস্যা সমাধানে কমবেশি নতুন কিছু আবিষ্কার বা সৃষ্টি করতে হয়।
প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখনতত্ব
মনােবিদ ই এল থর্নডাইকের মতে, প্রাণীর সব ধরনের শিখনই হল উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়ার মধ্যে নির্ভুল সংযােগসাধনের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বারবার প্রচেষ্টা এবং ভুলের মাধ্যমে উদ্দীপক এবং প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সঠিক সংযােগ স্থাপিত হয়।
প্রাণী কোনাে সমস্যার সম্মুখীন হলে তার সমাধানের জন্য সে বারবার চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টাগুলির পিছনে কোনাে চিন্তা বা পরিকল্পনা থাকে না। প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে সে সঠিক প্রচেষ্টাগুলি নির্বাচন করে এবং ভুল প্রচেষ্টাগুলি বাতিল করে। এইভাবে এমন সময় আসে যখন প্রাণী সমস্যার সম্মুখীন হওয়ামাত্র সঠিক প্রতিক্রিয়া করে সমস্যার সমাধান করতে পারে। একেই শিখন বলে। আর যেভাবে শিখন সম্পন্ন হয়, তাকেই প্রচেষ্টা ও ভুল পদ্ধতি (trial and error method) বলে।
খুব নিখুঁত ও বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষার মাধ্যমে থর্নডাইক এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি প্রথমে নিম্নতর প্রাণীর (বিড়াল, ইঁদুর) ওপর এই পরীক্ষা করেন। পরবর্তী সময়ে মানুষের ওপর পরীক্ষা করেও তিনি এই পদ্ধতির সার্থকতা দাবি করেন।
পরবর্তী সময়ে এই তত্ত্বটির অনেক বিরূপ সমালােচনা হয়। বিশেষ করে শারীরতত্ত্ববিদরা এই তত্ত্ব সম্বন্ধে যে প্রধান সমালােচনাগুলি করেছেন, তা হল— i. তত্ত্বটি অত্যন্ত যান্ত্রিক, ii. সমস্ত প্রকৃতির শিখনকে এই তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না, iii. শিক্ষায় পরিস্থিতি যদি উন্মুক্ত থাকে এবং শিক্ষার বিষয়টি যদি শিক্ষার্থীর ক্ষমতার মধ্যে হয় সেক্ষেত্রে চেষ্টা ও ভ্রান্তির প্রয়ােজন হয় না।
এসব সত্ত্বেও, এই তত্ত্বটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন শিক্ষাজগতে আলােড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে এই সমালােচনাগুলি থর্নডাইককে প্রচেষ্টা ও ভ্রান্তি তত্ত্ব সংশােধনে বাধ্য করে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।