সংখ্যালঘুদের শিক্ষা (Education for minority) প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে। Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর:-
সংখ্যালঘুদের শিক্ষা : শিক্ষা হল জীবনব্যাপী ও গতিশীল একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যা মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশসাধনের মাধ্যমে তার সুপ্ত সম্ভাবনাগুলির প্রকাশ ঘটায় এবং সেইসঙ্গে সমাজের ঐতিহ্য রক্ষা ও উন্নয়নে সাহায্য করে। এটি ব্যক্তিকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে ও পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে এবং সমাজের বিভিন্ন দায়িত্বপালনের উপযােগী করে তােলে। এই কারণে সমাজের সব ধরনের মানুষের শিক্ষার প্রয়ােজন হয়।
সংবিধানে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার: ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের মধ্যে শিক্ষার দায়িত্ব বণ্টন ও আইন প্রণয়নের অধিকার সংক্রান্ত তালিকাগুলি ছাড়াও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত যে তালিকা আছে, তারমধ্যে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করার কথা বলা হয়েছে। যেহেতু সুগঠিত জনমত হল গণতন্ত্রের প্রধান ভিত্তি তাই রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হল দেশের জনগণকে অশিক্ষা, কুসংস্কার, অজ্ঞতা, ধর্মান্ধতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত করা একমাত্র প্রকৃত শিক্ষাই পারে মানুষের মন থেকে এগুলি দূর করতে।
সংবিধানের ধারার বক্তব্য : ভারতীয় সংবিধানের 29 এবং 30 নং ধারায় সংস্কৃতি ও শিক্ষা সম্পর্কিত অধিকার ঘােষিত হয়েছে। এই অধিকারের মাধ্যমে ভারতবর্ষের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির স্বার্থ সংরক্ষণের পাশাপাশি এই কথা ঘােষণা করা হয়েছে যে রাষ্ট্র পরিচালিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার থেকে যােগ্য ব্যক্তিকে ধর্ম, বংশ, জাতি অথবা ভাষার অজুহাতে বঞ্চিত করা যাবে না।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় : সংখ্যালঘু (Minorities) বলতে শুধু ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের কথাই বােঝানো র না—ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, ভাষা প্রভৃতি যে-কোনাে দিক থেকে সংখ্যালঘুদেরই বােঝানাে হয়।
যেমন পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা যেহেতু বেশি সেহেতু চন্দরা হল সংখ্যাগুরু এবং মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা যেহেতু তুলনামূলকভাবে কম, সেই কারণে এরা এখানে ধর্মীয় সখ্যালঘু শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত হয়। তেমনই ভাষাগত দিক থেকেও এক শ্রেণির নাগরিককে ভাষাগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা যায়।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষায় সমতা : ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের ক্ষেত্রে শিক্ষায় সমতা বা সাম্য বজায় রাখার জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন, তা হল —
[1] ভারতীয় সংবিধানের বক্তব্য অনুযায়ী সরকার বিশেষ কোনাে সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা কোনাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারে না । কিন্তু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন নিজেদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে। এই জাতীয় উদ্যোগ সবদিক থেকেই সমর্থন যােগ্য।
[2] ভাষাগত সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করলে, তাদের পক্ষে পঠনপাঠন অপেক্ষাকৃত সহজ হবে।
[3] সংখ্যালঘুদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ও অন্যান্য সহকারী পুস্তক রচনা করলে, তারা শিক্ষাগ্রহণে বেশি করে আগ্রহী হবে।
[4] সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ ধরনের পাঠক্রম চালু করতে পারলে, তাদের মধ্যে জাতীয়চেতনার বিকাশ দ্রুততর হবে।
[5] সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বা তাদের ভাবাবেগকে আহত করে, এমন কোনাে বিষয়কে পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
[6] সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্য থেকে হীনম্মন্যতাবােধ কাটানাের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।