সর্বশিক্ষা অভিযান
ভূমিকা : সবার জন্য শিক্ষাই সর্বশিক্ষা। এই সর্বশিক্ষাকে অভিযানের স্তরে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন ভারত সরকার। এই উদ্যোগ সাধুবাদের যােগ্য হলেও এ অভিযান জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় দিককেও ইঙ্গিত করে, কারণ স্বাধীনতার মুহূর্তেই সকলের জন্য খাদ্য, পােশাক, বাসভূমি ও শিক্ষার কথা অঙ্গীকার করেছিল সরকার। স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরেও সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। তাই সর্বশিক্ষা অভিযানকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।
আন্তজাতিক উদ্যোগ : অশিক্ষার অন্ধকার দূর করবার জন্যই সর্বশিক্ষা অভিযান। এমন নয় অশিক্ষা শুধু ভারতবর্ষের আকাশকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে। গােটা পৃথিবীজুড়েই অশিক্ষা মানবসভ্যতার অভিশাপ রুপে দেখা দিয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে নিরক্ষরতা দূর করবার জন্য রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দকে বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘােষণা করেছে। শুধু তাই নয় এরপর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইউনেসকো-এর মতাে নানা আন্তর্জাতিক সংস্থাও যৌথ উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করে নিরক্ষরতা দুরীকরণের লড়াইতে শামিল হয়েছে।
ভারতবর্ষে সর্বশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা : স্বাধীনতার পরবর্তীকালে ভারতবর্ষজুড়ে শিক্ষাবিস্তারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তবু প্রয়ােজনের তুলনায় তা অনেকটাই কম। অথচ ন্যূনতম শিক্ষা না-থাকলে মনের চলাচল সম্ভব হয় না। রবীন্দ্রনাথ তাই একসময় বলেছিলেন, “আমি কিন্তু সবচেয়ে কম করিয়াই বলিতেছি কেবলমাত্র লিখিতে পড়িতে শেখা, তাহা কিছু লাভ নহে, তাহা কেবলমাত্র রাস্তা … রাস্তাটা না হইলে মানুষ আপনার কোলে আপনি বন্ধ হইয়া থাকে” (লােকহিত)। তিনি ভেবেছিলেন আমাদের সংবিধান রচয়িতারাও। সংবিধানের ৪৫নং ধারায় শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে সংবিধান প্রবর্তনের দশ বছরের মধ্যে ১৪ বছর বয়সি সমস্ত শিশু ও কিশাের-কিশােরীর অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা যায়নি। তাই স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরেও ‘সকলের জন্য শিক্ষা’—এই দাবি মুখে নিয়ে মানুষকে মিছিল করতে হয় মহানগরীর রাজপথে।
মানুষ আজ ক্রমশই শিক্ষার হাত ধরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে চাইছে। মানুষ বুঝতে শিখেছে শিক্ষা মানুষের মন থেকে কুসংস্কার দূর করে তার মনে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়, মানবিক মূল্যবােধ গড়ে তােলে।
সর্বশিক্ষার উদ্যোগ : সর্বশিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেছেন বর্তমান মানুষ। বুঝতে শিখেছে দারিদ্র্যের কারণেই মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে স্কুলের ছেলেমেয়েদে বিনামুল্যে বই দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অঙ্গনওয়াড়ির মহিলারা, শিশুরা যাতে বিদ্যালয়মুখী হয় তার চেষ্টা করছেন। স্কুলে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সর্বশিক্ষা অভিযানের মাধ্যমে নারীকেও শিক্ষার আলাের তলায় নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু হয়েছে। শিশুশ্রমিককেও এই অভিযানের মাধ্যমে মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করছে সরকার।
উপসংহার : সর্বশিক্ষা অভিযান বর্তমানে একটি জাতীয় আন্দোলন হয়ে উঠেছে। বিদ্যালয়ের গৃহ, ছাত্রছাত্রীদের বসবার সুবন্দোবস্ত, শিক্ষকের সংখ্যা—সমস্ত দিকগুলিকেই এই অভিযানে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বিজ্ঞানের মাধ্যমেও জনসচেতনতা বাড়াবার চেষ্টা শুরু হয়েছে। এখন শুধু দেখতে হবে এই বিজ্ঞাপনে যেন প্রকৃত উদ্দেশ্যর মুখ ঢেকে না যায়। তা হলে সর্বশিক্ষা অভিযান ব্যর্থ হবে আবার শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করলে চলবে না। তাকে করে তুলতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত, আনন্দময়।
আরো পড়ুন
মিড-ডে মিল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ছাত্রজীবনে খেলাধূলোর গুরুত্ব | বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ছাত্রজীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ইনটারনেট এবং আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।