সর্বশিক্ষা অভিযান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উত্তর:
সর্বশিক্ষা অভিযান
জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশসাধনের ক্ষেত্রে শিক্ষার কোনাে বিকল্প নেই। অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে শিক্ষা আমাদের জীবনকে জ্ঞানের আলােয় উদ্ভাসিত করে তােলে। শিক্ষাবর্জিত জীবন পদে পদে বাধাগ্রস্ত, নানান সংকীর্ণতা আর সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আবদ্ধ। তাই মানুষের প্রাথমিক প্রয়ােজন হিসেবে আহার বস্ত্র বাসস্থান যেমন অপরিহার্য, তেমনি শিক্ষাও অত্যাবশ্যক। এই একবিংশ শতাব্দীতে কোনাে মানুষ লিখতে পড়তে জানে না, একথা যে-কোনাে শিক্ষিত সমাজের কাছে চরম লজ্জার। অথচ এখনও বহু মানুষ শিক্ষার আলােক থেকে বঞ্চিত, এখনও অনেক শিশু যথাসময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না গিয়ে হয়ে উঠছে শিশু শ্রমিক। এই অবস্থার অবসান ঘটানাে দরকার। তাই চাই শিক্ষার বিস্তার, চাই শিক্ষাবিস্তারের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ। শিক্ষাবিস্তারের একটি ব্যাপক উদ্যোগের নাম সর্বশিক্ষা অভিযান।
সকলের জন্য শিক্ষা দরকার, কেউ যেন শিক্ষার আলাে থেকে বঞ্চিত না হয় এবং নিরক্ষরতা যেন আমাদের সমাজকে গ্রাস করতে না পারে—এই লক্ষ নিয়েই পশ্চিমবঙ্গে সর্বজনীন শিক্ষার যে আয়ােজন, তারই নাম সর্বশিক্ষা অভিযান। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে, অর্থাৎ বিশ্ব সাক্ষরতা দিবসে সর্বশিক্ষ অভিযানের সূচনা হয়। বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাকে মডেল হিসেবে ধরে শুরু হয় অভিযানটি।
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলায় সাক্ষরতার যে অভিযান শুরু হয়, ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতেও। সর্বশিক্ষা অভিযানের প্রাথমিক পর্বটি দুটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্যায়টি ছিল বেসিক লিটারেসি সেন্টার বা বিএলসি এবং দ্বিতীয় পর্যায়টি ছিল পােস্ট লিটারেসি সেন্টার বা পিএলসি। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় সর্বশিক্ষা অভিযানের দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র এবং মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষাবিস্তারের কর্মসূচি গৃহীত হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রয়ােজনের তুলনায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম। সেই অভাব পূরণ করার ব্যাপক চেষ্টা লক্ষ করা যায়। এই কর্মসূচিতে। গ্রাম পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধানে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলির প্রত্যক্ষ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রামশিক্ষা কমিটির ওপর। এই কমিটির শতকরা ৭৫ ভাগ সদস্য অভিভাবকদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হন। কেন্দ্রের সহায়িকা বা শিক্ষিকা নিয়ােগের ব্যাপারটি ছিল চুক্তিভিত্তিক। আর এই সহায়িকাদের নির্বাচন করা হয় চল্লিশাের্ধ মহিলাদের মধ্যে থেকে। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে নির্ধারিত হয় শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের পাঠক্রম এবং পাঠ্যপুস্তক। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার প্রসারের জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গৃহীত হয় এই অভিযানে। মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে তৈরি হয় পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। এক্ষেত্রেও শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতেও শিক্ষকশিক্ষিকা নিয়ােগ করা হয় চুক্তির ভিত্তিতে।
এই সর্বশিক্ষা অভিযান সারা দেশে যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছে। শিক্ষা সংক্রান্ত প্রচারের মাধ্যমে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষাসচেতনতা জেগে উঠেছে, তেমনি আর-একদিকে রূপায়িত হচ্ছে সর্বশিক্ষার কর্মসূচি। এই অভিযানের সুত্রে বহু শিশু প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আসছে, প্রাথমিক শিক্ষার পর্ব শেষ হলে তারা সুযােগ পাচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের। সর্বশিক্ষা অভিযানের সূত্রে লেখাপড়া শেখার পর্যাপ্ত সুযােগ পাচ্ছে বহু অনুন্নত পরিবারের শিশুরাও। বয়স্করাও এই সুযোেগ থেকে বঞ্চিত, নন। সর্বশিক্ষা অভিযানকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শিক্ষার একটা ব্যাপক আয়ােজন চলছে। শিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ যেভাবে বাড়ছে, যেভাবে বাড়ছে বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রবণতা, তাতে সর্বশিক্ষা অভিযানের সাফল্যের দিকটিই চোখে পড়ছে বেশি।
সর্বশিক্ষা অভিযান একটি মহৎ প্রচেষ্টার নাম। এই প্রচেষ্টা অশিক্ষার অন্ধকার মােচনের প্রচেষ্টা, মানুষকে আত্ম-উন্মােচনের সুযােগ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা। দেশের ও জাতির যথার্থ উন্নতি নির্ভর করে শিক্ষার ওপর। শিক্ষাহীন জাতির কোনাে গৌরব নেই। সর্বশিক্ষা অভিযান তাই দেশ ও জাতিকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করার একটি অনন্য সাধারণ উদ্যোগ। অদূর ভবিষ্যতে এ উদ্যোগ আরও সফল হবে, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মানুষ শিক্ষার আলােকে আলােকিত হবে।
আরো পড়ুন
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানসাধনায় ভারত – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
অবকাশযাপন | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভারতের জাতীয় সংহতি | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
উন্নয়ন বনাম পরিবেশ | মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।