স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া কী? এর চারটি স্তরের বর্ণনা দাও Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks
উত্তর: স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়া হল এক বিশেষ
প্রকার মানসিক প্রক্রিয়া | অধীত বিষয়বস্তুকে মনে রাখা এবং প্রয়ােজনমতাে তাকে অবিকল স্মরণ করাকেই স্মৃতি বলে।
স্মৃতির চারটি স্তর
আধুনিক মতবাদ অনুযায়ী, স্মৃতি বা স্মরণক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করলে পরম্পর সম্পর্কযুক্ত চারটি স্তরের সন্ধান পাওয়া যায় | এই স্তরগুলিকে নীচে চিত্রের সাহায্যে বর্ণনা করা হল —
অভিজ্ঞতা অর্জন (স্মৃতির প্রথম স্তর)
কোনাে বিষয় স্মরণে রাখতে হলে সর্বপ্রথম যে মানসিক প্রক্রিয়ার সাহায্য নিতে হয়, তাই হল শিখন।
ধারণ বা সংরক্ষণ (স্মৃতির দ্বিতীয় স্তর)
সংরক্ষণ বা ধারণ হল এমন এক প্রক্রিয়া যার দ্বারা শিখনজাত নানাপ্রকার বিষয় বা অভিজ্ঞতা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিবর্তিত হয়। বাস্তবে মানুষ শিখন প্রচেষ্টার দ্বারা যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তার। অনেক অংশই স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ধারণ বা সংরক্ষণের শর্তাবলি
অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের ধারণ বা সংরক্ষণ কয়েকটি শর্তের ওপর নির্ভর করে। ওই শর্তগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—
i. উত্তম শিখন এবং অনুশীলন: সংরক্ষণের প্রথম শর্ত হল উত্তম শিখন। বিষয়বস্তুটিকে খুব ভালাে করে অর্থবহ করে তুলে শেখা প্রয়ােজন।এক্ষেত্রে বিষয়টির বাস্তব প্রয়ােজনীয়তা আছে কিনা তা বিচার ক দরকার। ধারণ বা সংরক্ষণের জন্য বিষয়টি বারবার অনুশীলন ক প্রয়ােজন।
ii. মনােযােগ: কোনাে বিষয় স্মৃতিতে ভালােভাবে ধরে রাখতে গেলে গভীর মনােযােগের প্রয়ােজন।
iii. আগ্রহ: কোনাে বিষয়ের প্রতি অনুরাগ বা আগ্রহ সেই বিষয়টিকে ভালােভাবে অনুশীলন করতে এবং দীর্ঘদিন মনে রাখতে সাহায্য করে।
iv. দেহ ও মনের সুস্থতা: ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে |
v. অতিশিখন: সংরক্ষণের জন্য বিষয়টির অতিশিখন প্রয়ােজন। অতিশিখন বলতে বােঝায় বিষয়টি আয়ত্ত করার পরেও শিখন। চালিয়ে যাওয়া।
vi. পুনরাবৃত্তি : সংরক্ষণের জন্য মাঝেমাঝেই বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করা। প্রয়ােজন। আবৃত্তি যেভাবে পুনরুদ্রেক করা হবে, সেইভাবে পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
vii. বিশ্রাম: সংরক্ষণের জন্য শিখনের পরে বিশ্রামের প্রয়ােজন। এর ফলে পশ্চাৎমুখী প্রতিরােধ কম হয়। বিশ্রাম শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুগুলিকে সংগঠিত করতে সাহায্য করে, যা সংরক্ষণের সহায়ক।
viii. কৌশল প্রয়ােগ : সংরক্ষণের জন্য কিছু কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন—সূর্যের সাতটি রং মনে রাখার জন্য ‘VIBGYOR’ কথাটির ব্যবহার। এখানে ধারণের বিষয়টির অন্তর্গত শব্দগুলির প্রথম অক্ষরগুলিকে একত্র করা হয়।
ix. বহুমাধ্যমের ব্যবহার : পরীক্ষায় দেখা গেছে একাধিক মাধ্যমের (multimedia) সহযােগিতায় শিক্ষাদান কাজটি সম্পন্ন হলে সংরক্ষণের উন্নতি ঘটে।
পুনরুদ্রেক (স্মৃতির তৃতীয় স্তর)
স্মৃতির বা স্মরণক্রিয়ার তৃতীয় স্তর হল পুনরুদ্রেক। কারণ যে বিষয়টি বা যেসব অভিজ্ঞতা সংরক্ষণ করা হয়, তা যদি ঠিক সময়ে, ঠিক জায়গায় এবং সঠিকভাবে পুনরুদ্রেক করা না যায়, তাহলে স্মৃতির কাজটি সম্পূর্ণ হয় না | পুনরুদ্রেক প্রধানত দুই প্রকার—প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ
[1] প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক : যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে মনে করার সময় কেবল তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। যেমন—রাম ও হরি দুই বন্ধু৷ রামের কথা বললে যদি হরির কথা মনে পড়ে, তবে তা প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক।
[2] পরােক্ষ পুনরুদ্রেক : যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে মনে করার জন্য তার সঙ্গে পরােক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে পরােক্ষ পুনরুদ্রেক বলে। যেমন—রাম ও হরি দুই বন্ধু। হরির ভাই শিব। এক্ষেত্রে যদি রামের নাম মনে করার সময় হরির ভাই শিবের নাম মনে পড়ে, তাহলে বলা হয় সেটি পরােক্ষ পুনরুদ্রেক।
পুনরুদ্রেকের শর্তাবলি : উত্তম পুনরুদ্রেকের জন্য যেসব নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়ােজন, তাদের পুনরুদ্রেকের শর্ত বলে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—
i. উত্তম শিখন ও সংরক্ষণ : কার্যকরী শিখনপদ্ধতির ব্যবহার শিখতে হবে ও উত্তম সংরক্ষণের শর্তগুলি মেনে চলতে হবে।
ii. দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা: দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে হবে| দৈহিক অসুস্থতা ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা পুনরুদ্রেকের পক্ষে ক্ষতিকর।
iii. পুনরনুশীলন এবং পুনরাবৃত্তি : বিষয়বস্তুকে মাঝে মাঝে অনুশীলন এবং আবৃত্তি করা প্রয়ােজন।
iv. আত্মবিশ্বাস: নিজের ওপর আস্থা রাখতে হবে, অহেতুক ভয় পেলে চলবে না।
v. পরিবেশের সমতা: যে পরিবেশে শিখন হয়েছে, সেই পরিবেশ বা সেই ধরনের পরিবেশ পুনরুদ্রেকের সহায়ক।
vi. সংকেত দেওয়া : অনেক সময় দেখা যায়, কিছু সংকেত দিলে আপাতত ভুলে যাওয়া বিষয় মনে পড়ে যায়। একে ‘Prompt করা বলে | প্রয়ােজনমতাে ‘প্রম্পট’ করে পুনরুদ্রেককে সম্ভব করতে হবে।
প্রত্যভিজ্ঞা (স্মৃতির চতুর্থ স্তর)
পূর্বাৰ্জিত অভিজ্ঞতা যখন তার প্রতিরূপের সাহায্যে পুনরুত্থাপিত হয়, তখন তাকে প্রত্যভিজ্ঞা বলে। প্রত্যভিজ্ঞা কথাটির প্রকৃত অর্থ “চিনে নেওয়া’ | পূর্বে প্রত্যক্ষ করা অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানকে বর্তমানে চিনে নেওয়ার প্রক্রিয়াকেই প্রত্যভিজ্ঞ বলা হয়। প্রত্যভিজ্ঞা প্রক্রিয়াটি পুনরুদ্রেক প্রক্রিয়ার থেকে অনেক বেশি সরল l
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।