প্রশ্নঃ নমুনায়নের উপযোগিতা নির্দেশ করো । সম্ভাবনা নির্ভর নমুনায়নের বিভিন্ন ধরনগুলি আলোচনা করো ।
উত্তরঃ-
নমুনায়নের উপযোগিতা :
ভুমিকাঃ
নমুনায়ন হচ্ছে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি যার সাহায্যে সমগ্রক থেকে প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা নির্বাচন করা হয়। বিশিষ্ট পরিসংখ্যাবিদ এস. পি. গুপ্ত এবং এম. পি. গুপ্ত তাঁদের “Business Statistics” গ্রন্থে নমুনায়নের সংজ্ঞায় বলেছেন,নমুনায়ন হচ্ছে একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে সমগ্রকের একটি ক্ষুদ্র অংশকে পরীক্ষা করে সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
নমুনায়নের উপযোগিতাঃ
বর্তমানে সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সমাজবিজ্ঞানীগণ নমুনায়নকে অধিক যুক্তিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। নমুনায়নের উপযোগিতা নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যায়।
১) মিতব্যয়ী পদ্ধতি: নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকে প্রতিনিধিত্বশীল স্বল্প সংখ্যক নমুনা একক থেকে তথ্য সংগ্ৰহ করা হয়। কাজেই আর্থিক মিতব্যয়ীতার বিবেচনায় নমুনায়ন পদ্ধতি বেশি সুবিধা জনক।
২) সীমিত সময়: সীমিত সংখ্যক নমুনা এককের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে সময় সীমিত হয়ে থাকে ।
৩) স্বল্প শ্রম: সমগ্রকের প্রতিটি একক পর্যবেক্ষণ করতে যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয় তার তুলনায় একটি ক্ষুদ্র অংশ পর্যবেক্ষণ করতে অনেক কম শ্রম দিতে হয়।
৪) দ্রুত ফলাফল: স্বল্প সংখ্যক নমুনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ এবং ফলাফল তৈরিতে কম সময় লাগে বলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
৫) তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা: নমুনায়নে সীমিত সংখ্যক নমুনা একক থেকে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অনুসন্ধানকারীর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে অনেক ভুল ত্রুটি এড়ানো যায়। ফলে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
৬) নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা: নমুনায়নের পরিসর ছোট হওয়ায় এর সার্বিক নিয়ন্ত্রণ রক্ষা করা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়।
৭) পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য: নমুনায়নে সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বকারী একক হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ফলে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিটি একক হতে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়।
৮) প্রশিক্ষণের সুবিধা: নমুনায়ন পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্ৰহ করার জন্য অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক গবেষণাকর্মীর প্রয়োজন হয়। সংখ্যাগত স্বল্পতার কারণে তাদেরকে সহজেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা যায়।
সম্ভাবনা নমুনায়ন:
যে নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্রকের অন্তর্ভূক্ত প্রতিটি এককের নমুনা হিসেবে। নির্বাচিত হওয়ার কিংবা নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমান সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে তাকে সম্ভাবনা নমুনায়ন বলে।
সম্ভাবনা নমুনায়নের চারটি প্রকারভেদ লক্ষ করা যায়। যথা –
ক) সরল নির্বিচারী নমুনায়ন: সরল নির্বিচারী নমুনায়নে সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় অর্ন্তভূক্ত হওয়ার সমান সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে। এই প্রকার নমুনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গবেষকের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা পক্ষপাতের কোন সযোগ থাকে না। অবাধে নির্বিচারভাবে নমুনা বাছাই করা হয়ে থাকে।
খ) নিয়মানুগ নমুনায়ন: যে পদ্ধতিতে সমগ্রক হতে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় এককগুলোর প্রথমটিকে নির্বিচারভাবে বাছাই করে অন্যান্য এককগুলোকে নমুনা ব্যবধানের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী বাছাই করা হয় তাকে নিয়মানুগ বলা হয়।
গ) স্তরিত নমুনায়ন: স্তরিত নমুনায়ন দুইস্তর বিশিষ্ট নমুনায়ন পদ্ধতি। এতে সমগ্রকের আওতাভুক্ত বিভিন্ন একককে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পৃথক পৃথকভাবে স্তরে সাজানো হয়। এই স্তরগুলো সমগোত্রীয় প্রকৃতির। প্রতিটি স্তরে অন্তর্ভূক্ত এককগুলোকে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয় এবং প্রতিটি স্তর থেকে কত সংখ্যক নমুনা বাছাই করা হবে তা স্থির করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিটি স্তর থেকে নির্বিচারভাবে কাঙ্খিত-সংখ্যক নমুনা বাছাই করা হয়। নমুনা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াকে স্বরিত নমুনায়ন বলা হয়ে থাকে।
ঘ) গুচ্ছ নমুনায়ন: গুচ্ছ নমুনায়ন দুই স্তর বিশিষ্ট নমুনায়ন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রথম স্তরে নমুনা হিসেবে গুচ্ছ নির্বাচন করা হয় এবং দ্বিতীয় স্তরে নির্বাচিত গুচ্ছগুলোর মধ্য থেকে নমুনা বাছাই করা হয়। যথন সমগ্রক প্রাকৃতিকভাবে ভৌগলিক দিক দিয়ে কতিপয় গুচ্ছ বিভক্ত থাকে তখন গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। গুচ্ছগুলো সাধারণত দেশ, অঞ্চল, গ্রাম, পাড়া ইত্যাদিতে বিভক্ত থাকে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।