স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশনটি কী নামে পরিচিত? এই কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশগুলি আলােচনা করাে। অথবা, স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন কোনটি? কমিশনের উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সুপারিশগুলি আলােচনা করাে। Class 12 | Education | 8 Marks
উত্তর:
স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন
স্বাধীন ভারতের স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষাকমিশন প্রথম শিক্ষার কমিশনটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন বা রাধাকৃষণ কমিশন নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা রাধাকৃষ্মণ কমিশনের সুপারিশ 1948 সালে ভারত সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রয়ােজনীয় সংস্কার ও উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে এক কমিশন গঠন করে। ওই কমিশনের সভাপতি ছিলেন ড. সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। তার নাম অনুসারে ওই কমিশনের নাম হয় রাধাকৃষণ কমিশন। 1949 সালে কমিশনের রিপাের্ট প্রকাশিত হয়। ওই কমিশনের মূল সুপারিশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল—
[1] শিক্ষার উদ্দেশ্য : রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের মতে, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হল— i. সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের উপযােগী ব্যক্তি গড়ে তােলা, ii. শিক্ষার গুণগত মানােন্নয়ন, শিক্ষার্থীর কাছে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন, iv. উন্নত ধরনের কলা, বিজ্ঞান, কারিগরি, চিকিৎসা ও কৃষিবিদ্যার প্রসারসাধন, v. মানব চরিত্রের উন্নতিসাধন, vi. ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্য বজায় রাখা, Vii. আন্তর্জাতিকতাবাদ ও বিশ্বনাগরিকতা অর্জনের শিক্ষাদান, viii. গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, ix, অর্থনৈতিক বিকাশসাধন, X. গণতন্ত্রের সার্থক রূপায়ণ, xi, প্রজ্ঞার যথাথ বিকাশসাধন ইত্যাদি।
[2] পাঠক্রম: কমিশনের মতে, কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ পাঠক্রমের পাশাপাশি পেশাগত শিক্ষার পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর স্নাতক স্তরে তিন বছরের পাস বা অনার্স কোর্সে ভরতি হতে পারবে। শিক্ষার্থীদের পছন্দমতাে বিষয়ে পাঠগ্রহণ এবং ডিগ্রি লাভের জন্য উপযুক্ত পাঠক্রম প্রণয়ন করতে হবে। পেশাগত শিক্ষার ক্ষেত্রে কমিশন কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষাবিজ্ঞান, কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা, আইন ও চিকিৎসাশাস্ত্র—এই ছয়টি বিষয়ের সুপারিশ করে।
3] শিক্ষক: কমিশনের মতে, যােগ্য ও প্রতিভাবান শিক্ষকের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মান নির্ভর করে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার ও পুনর্বিন্যাসের উদ্দেশ্যে যােগ্য সুশিক্ষক নিয়ােগের ব্যবস্থা করতে হবে। যােগ্য শিক্ষকের গুরুত্ব ও তার দায়িত্বকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
[4] শিক্ষার মাধ্যম : প্রাথমিকভাবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাই শিক্ষার মাধ্যম হবে। কেননা ইংরেজি ভাষা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বাহন। তবে আঞ্চলিক ভাষায় বিষয় পরিবেশন করা যাবে। রাষ্ট্রভাষার ব্যবহারেও স্বীকৃতি থাকবে।
[5] শিক্ষার মান: i. উচ্চশিক্ষার মানােন্নয়নের জন্য কমিশন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষার্থীসংখ্যা নির্দিষ্ট রাখার সুপারিশ করেন। কলেজের সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীসংখ্যা হবে 1500 জন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীসংখ্যা হবে 3000 জন। ii. কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের দিনের সংখ্যা হবে বছরে কমপক্ষে 180 দিন | iii. শিক্ষার্থীর কাছে পাঠদানকে হৃদয়গ্রাহী করার জন্য টিউটোরিয়াল ক্লাস ও গ্রন্থাগারের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে।
[6] ধর্মশিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষা: কমিশনের সুপারিশ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ধর্মীয় চেতনা ও নৈতিকতার বিকাশের জন্য স্নাতক পর্যায়ের প্রথম বর্ষে ধর্মগুরুদের জীবনীপাঠ, দ্বিতীয় বর্ষে ধর্মগ্রন্থগুলির বাণী পর্যালােচনা ও তৃতীয় বর্ষে ধর্মতত্ত্বের মূল সমস্যা সম্পর্কে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[7] নারীশিক্ষা : কমিশন নারীশিক্ষার সুযােগ বৃদ্ধির বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করে| সহশিক্ষা সমন্বিত মহাবিদ্যালয়ে নারীদের জন্য অতিরিক্ত কতকগুলি বিষয় যেমন গাৰ্হস্থ্য বিজ্ঞান, গৃহ প্রশাসন, গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইত্যাদির পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
[8] ছাত্রকল্যাণ ও শরীরচর্চা; বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকল্যাণ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে। এ ছাড়া বছরে কমপক্ষে একদিন বিনা খরচে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে| শিক্ষার্থীরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীরচর্চার সুযােগ পায়, তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
[9] পরীক্ষাব্যবস্থা : কমিশন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে রচনাধর্মীর সঙ্গে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন সংযােজনের পক্ষে মতামত দেয়। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য। বহিঃপরীক্ষার সাথে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার বিষয়টিকেও অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করে।
[10] কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা: কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিগবেষণাগার এবং কৃষিখামার গড়ে তােলার পক্ষে কমিশন মূল্যবান সুপারিশ নথিভুক্ত করে। কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষারও সুপারিশ করা হয়।
[11] প্রশাসন : কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ব্যবস্থার আমূল। সংস্কারসাধনের কথা বলে। অর্থবরাদ্দ, সুযােগসুবিধা ও সমন্বয়, জাতীয় নীতি নির্ধারণ ইত্যাদি ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সম্পর্কস্থাপনের প্রসঙ্গেও কমিশন সুপারিশ করে। অর্থবরাদ্দের সুবিধার জন্য পৃথক ইউজিসি গঠনের ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করে।
[12] গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়: কমিশনের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য একটি সুপারিশ হল গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা| গ্রামপ্রধান ভারতে গ্রামীণ মানুষেরা। যাতে শহরের লােকেদের মতাে শিক্ষাগত সুযােগসুবিধা সমানভাবে পেতে পারে, তার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তােলার কথা বলে।
[13] রিপাের্টের মূল্যায়ন: উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে রাধাকৃয়ণ কমিশনের সুপারিশগুলি খুবই সময়ােপযােগী ও প্রগতিশীল। কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতীয় শিক্ষার সামগ্রিক পুনর্গঠন সম্ভব না হলেও সুপারিশগুলিকে আংশিকভাবে কার্যকারী করার চেষ্টা করা হয়। যেমন— i. দেশে বহু সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তােলা হয়। ii. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মানােন্নয়নে 1956 খ্রিস্টাব্দে UGC স্থাপন করা হয়। iii. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষিকাদের চাকুরির শর্ত ও বেতনের সুযােগসুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। iv. কয়েকটি গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।
Thank you
Thank you ☺️