প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এই আর্টিকেলে আমরা Class 11 এর তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর নিয়ে এসেছি। তোমাদের একাদশ শ্রেনীর Semester 2 -তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প রয়েছে। গল্পের থেকে ৫ নম্বরের সম্ভাব্য সমস্ত প্রশ্ন উত্তর গুলি আমরা এখানে দিয়ে দিলাম। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
তেলেনাপোতা আবিষ্কার
প্রেমেন্দ্র মিত্র
তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রশ্ন উত্তর | Telenopota Abishkar Question Answer
৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
তেলেনাপোতা যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে লেখক একে আবিষ্কার বলেছেন কেন আলোচনা করো। ৫
উত্তর : কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে কথক দৈনন্দিন কাজের একঘেয়েমি দূর করার জন্য এবং বড়শি দিয়ে পুকুর থেকে মাছ তোলার উদ্দেশ্যে তেলেনাপোতায় যাত্রা করেছিলেন ।
আবিষ্কার হল কোনো বস্তু বা ঘটনাকে প্রথম প্রকাশ করা, যা আগে কেউ করতে পারেনি বা হয়নি। আমাদের পাঠ্যে বর্ণিত তেলেনাপোতাও এমন একটি গ্রাম, যেখানে কথক ও তাঁর বন্ধুরাই প্রথম মৎস্যশিকারের উদ্দেশ্যে গেছেন। তেলেনাপোতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে বাংলার দরিদ্রতম একটি গ্রাম তথা সেখানকার জনজীবন। অর্থাৎ গ্রামের কথা তুলে ধরতে গিয়ে লেখক সেখানকার জীবনযাত্রার বাস্তব তথ্যকে আলোর সামনে এনেছেন যা অভূতপূর্ব, যে-জীবনের পরিচয় আগে জানা যায়নি, তাকে সকলের চোখের সামনে তুলে ধরাই তো আবিষ্কার। গ্রামের অন্ধকারাচ্ছন্ন রূপ, ভগ্নপ্রায় জীর্ণ অট্টালিকা ও রহস্যাবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশ শহুরে মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অচেনা। সেইসঙ্গে যামিনী ও তার বৃদ্ধা মা-এর প্রতীক্ষিত জীবন যেন তেলেনাপোতার আলো-আঁধারি পরিপার্শ্বেরই সম্প্রসারণ— এও তো এক আবিষ্কার। তাই একে অবশ্যই আবিষ্কার বলা যায়।
“… হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন’—কোন্ পরিস্থিতিতে এমনটি সম্ভব বলে লেখক মনে করেছেন? ৫
উত্তর : কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র তাঁর ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা আবিষ্কারের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেছেন। লেখক মনে করেছেন কাজের ব্যস্ততার মধ্যে বা মানুষের কোলাহলে হাঁপিয়ে উঠলে যদি কোনোক্রমে দু-দিনের ছুটির ব্যবস্থা হয়ে যায় কিংবা শনি ও মঙ্গলে যোগাযোগ হয়, সেইসঙ্গে কেউ যদি উসকে দেয় যে পৃথিবীর কোনো এক আশ্চর্য পুকুরের সরলতম মাছেরা বড়শিতে হৃদয়বিদ্ধ করার জন্য উৎসাহী হয়ে অপেক্ষা করছে; আবার কেউ যদি জীবনে কয়েকটি পুঁটিমাছ ছাড়া অন্য কিছু জল থেকে টেনে তোলার সৌভাগ্য অর্জন করতে না-পারে তাহলে সেই সৌভাগ্যের অংশীদারি হওয়ার জন্য হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন।
তেলেনাপোতা আবিষ্কার করার জন্য একদিন বিকেলবেলার পড়ন্ত রোদে জিনিসে মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাসে আপনাকে উঠতে হবে। তারপর রাস্তার ঝাঁকানির সঙ্গে মানুষের গুঁতো খেতে খেতে ভাদ্রের গরমে ঘামে ধুলোয় চটচটে শরীর নিয়ে ঘণ্টা দুয়েক বাদে আচমকা রাস্তার মাঝখানে নেমে পড়তে হবে। তারপরে গোরুর গাড়ি করে তেলেনাপোতায় গিয়ে উপস্থিত হবেন।
‘গোরুর গাড়িটি তারপর যে-পথে এসেছিল, সেই পথে অথবা নালায় ফিরে চলতে শুরু করবে। – গোরুর গাড়িতে যাঁরা চড়েছিলেন তাঁদের বর্ণনা অনুযায়ী গোরুর গাড়ি যাত্রার বর্ণনা দাও।
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে উল্লিখিত গোরুর গাড়িতে গল্পকথক এবং তাঁর নিদ্রাবিলাসী ও পানরসিক দুই বন্ধু চেপেছিলেন।
কথক ও তাঁর দুই বন্ধু, ঘণ্টা-দুই ভিড়ে ঠাসা বাসে যাওয়ার পর রাস্তার মাঝখানে চারিদিকে অন্ধকার আর জনমানবহীন এক স্যাঁতসেঁতে নালার সামনে গিয়ে দাঁড়ান । মশাদের কামড় উপেক্ষা করে কিছুক্ষণ ধৈর্যের পরীক্ষা দেওয়ার পর অবশেষে সেই কাদাজলের নালা থেকে এক শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ তাঁদের কানে আসে। অবশেষে আবছা অন্ধকারের মধ্য থেকে একটি গোরুর গাড়ির ক্ষুদ্র সংস্করণকে দেখা যায়। বেশি কথা না বাড়িয়ে সেই গোরুর গাড়ির ছইয়ের মধ্যে তিন বন্ধু উঠে বসেন। গোরুর গাড়িটি তারপর অত্যন্ত ধীর গতিতে এগিয়ে চলে। বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ বাধে, তারপর ধীরে ধীরে কথক বুঝতে পারেন চারধারের গাঢ় অন্ধকারে চেতনার শেষ অন্তরীপটিও নিমজ্জিত হয়ে গেছে। মনে হয় পরিচিত পৃথিবীর বাইরে অনুভূতিহীন এক জগৎ কথকের চারধারে, আর সময় সেখানে স্তব্ধ ও স্রোতহীন। আচ্ছন্নতার মাঝে একসময় ক্যানেস্তারার আওয়াজে ঘুম ভাঙে, গাড়োয়ানকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় নিতান্ত নির্বিকারভাবে সে জানায়, উদ্দেশ্য বাঘ তাড়ানো। বাঘের কথা ভাবতে ভাবতেই কথকরা বিশাল একটি মাঠ পেরিয়ে যান। এভাবে যেতে যেতে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের স্তিমিত আলোয় তাঁরা দেখেন প্রাচীন অট্টালিকাগুলির ধ্বংসাবশেষ যেন মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে। আর জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে কথকেরা যেন অতীতের কোনো কুয়াশাচ্ছন্ন স্মৃতিলোকে এসে পৌঁছেছেন। অবশেষে দু-তিনবার মোড় ঘুরে গোরুর গাড়ি থামে এবং তাঁরা পুতুলের মতো আড়ষ্টভাবে নেমে পড়েন। তাঁদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্য একটা কটু গন্ধ সেখানে অনেকক্ষণ ধরেই উপস্থিত ছিল।
‘জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনো কুজ্ঝটিকাচ্ছন্ন স্মৃতিলোকে এসে পড়েছেন বলে ধারণা হবে।—কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করা হয়েছে? গল্পকথকের এমন ধারণার কারণ আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও ৷ ২ + ৩ = ৫
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক গল্পে কথক ও তাঁর সঙ্গীরা তেলেনাপোতা নামক এক গ্রামে গিয়েছিলেন, যা ছিল মহানগরী থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে। সেই স্থানের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি যেন চলমান সভ্যতা থেকে অনেক অনেক পিছনে পড়েছিল। সেই প্রসঙ্গেই লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন।
→ কথকের এমন ধারণার পিছনে গল্পমধ্যে যে কয়েকটি কারণের উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলি হল—
* যানবাহনের অভাব : মহানগরী থেকে স্থানটি খুব বেশি দূরে নয়, তবু একটি মাত্র জীর্ণপ্রায় গোরুর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যান চোখে পড়েনি সেখানে। গাড়িটির মতোই ছিল গোরুগুলি। মনে হয় পাতালের কোনো বামনের দেশ থেকে উঠে এসেছে সেটি।
* সংকীর্ণ ও বন্ধুর পথ : জঙ্গলময় সংকীর্ণ ও নালার মতো পথ ধরে গোরুর গাড়িটি ধীর-মন্থর গতিতে চলছিল, কারণ পথ অতি বন্ধুর। তাই গাড়িতে উপবিষ্ট যাত্রীগণের মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ বাধবে।
* সীমাহীন অন্ধকার : দুর্ভেদ্য অন্ধকার পথ পার হতে হয়েছে কথকদের। পথে যেতে যেতে মনে হয়েছে চারিদিকের গাঢ় অন্ধকারে চেতনার শেষ অন্তরীপটিও নিমজ্জিত হয়ে গেছে।’
* ব্যাঘ্রসংকুল স্থান : গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানের ক্যানেস্তারা পেটানোর কারণে জানা যায় চিতাবাঘ তাড়াতেই ক্যানেস্তারা পেটানো। বোঝা যায় যে স্থানটি ব্যাঘ্রসংকুল।
* প্রকৃতির রহস্যময়তা : আবছা আলোতে প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষকে মৌন প্রহরী বলে ভুল হয়, এই দৃশ্য শরীরে শিহরন সৃষ্টি করে, নৈশ-প্রকৃতি হয়ে উঠেছে রহস্যময়ী ।
এসব কারণেই কথক উদ্ধৃত ধারণা করেছেন।
“আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না।—আসল উদ্দেশ্যের উল্লেখসহ সেই উদ্দেশ্যসাধনে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করলেন আলোচনা করো।
উত্তর : ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে আসল উদ্দেশ্য বলতে মৎস্যশিকারের লক্ষ্যে কথকের তেলেনাপোতায় আসার কথা বলা হয়েছে।
মৎস্যলুব্ধ কথকের আসল উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা। তাই পূর্ব রাত্রের সমস্ত ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে জনমানবহীন তেলেনাপোতায় সকালে যখন পাখির কলরবে ঘুম ভাঙে, তখন তাঁর মনও রোমাঞ্চিত হয়। নিজের লক্ষ্যে অবিচল কথক যথাযথ ব্যবস্থাসহকারে শ্যাওলাঢাকা ভাঙা ঘাটের একধারে বসে, গুঁড়িপানায় ভরা সবুজ জলের মধ্যে যথোচিত নৈবেদ্যসহ বড়শি নামিয়ে দেন। বেলা বাড়তে থাকলেও মাছের দেখা পাওয়া যায় না। পুকুরের ওপর ঝুঁকে পড়া একটি বাঁশের ডগা থেকে মাছরাঙা পাখি ক্ষণে ক্ষণে তার বর্ণোজ্জ্বল পাখার ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়ে পুকুরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মৎস্যশিকারের উল্লাসে কথককে দুর্বোধ্য ভাষায় বিদ্রুপ করতে থাকে। কথককে সন্ত্রস্ত করে ভাঙা ঘাটের ফাটল থেকে একটি মোটা সাপ বেরিয়ে এপার থেকে ওপারে সাঁতরে গিয়ে উঠবে। দুটি ফড়িংয়ের পাল্লা দিয়ে ফাতনার ওপর বসার চেষ্টায় কথকের মনোযোগ নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুঘুর ডাকও তাঁকে আনমনা করে তোলে। ঠিক সেইসময় নিথর জলে ঢেউয়ের শব্দে কথক সংবিৎ ফিরে পেয়ে দেখেন একটি মেয়ে পিতলের কলশিতে পুকুর থেকে জল ভরছে। কথক মেয়েটির মুখের শান্ত-করুণ গাম্ভীর্য লক্ষ করেন। শেষে যাওয়ার সময় মেয়েটি কথককে বসে না-থেকে ছিপে টান দিতে বলে যায়। অথচ আকস্মিক এই চমকে কথক ছিপে টান দিতে ভুলে যান। পরে ছিপ তুলে দেখেন বড়শিতে টোপ নেই।
শেষপর্যন্ত হতাশ হয়ে সাজসরঞ্জাম নিয়ে কথক উঠে পড়েন। মৎস্যশিকারের উদ্দেশ্যসাধনের জন্য কথক এমন কাজই করেছিলেন।
‘এই জনহীন ঘুমের দেশে সত্যি ওরকম মেয়ে কোথাও আছে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না। মেয়েটি কে? এই জনহীন ঘুমের দেশে পৌঁছোনোর পথের এবং জীর্ণ অট্টালিকার বর্ণনা দাও ৷ 2 + 3 = 5
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশে প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের কথকের পুকুরঘাটে দেখা সেই মেয়ে তথা গল্পের অন্যতম নারীচরিত্র যামিনীর কথা বলা হয়েছে।
→ কথকের কথায়, “জনহীন ঘুমের দেশ” তেলেনাপোতা গ্রাম। সেখানে পৌঁছোনোর পথ মোটেও মসৃণ নয়। পড়ন্ত বিকেলে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি এক বাসে উঠে রাস্তার ঝাঁকুনি ও ক্রমাগত মানুষের গুঁতো খাওয়ার ঘণ্টা দুই পরে গলদঘর্ম হয়ে রাস্তার মাঝে নেমে পড়া; সে-জায়গাটি দিনের বেলাতেই প্রায় অন্ধকার এবং পাখিহীন নির্জন। এরপর স্যাঁতসেঁতে ভিজে ভ্যাপসা আবহাওয়ায় দুজন বন্ধুসহ মশার কামড় উপেক্ষা করে; একটি নালার কাছে অপেক্ষার পালা। অবশেষে ক্ষীণ আশা জাগিয়ে একটি ক্ষীণ আলোর রেখা দেখা যায়। সেটি আসলে একটি ছোট্ট গোরুর গাড়ি। সে গাড়ির স্বল্পতম স্থানে তিনজন কোনোরকমে প্রবেশ করে এবং অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ করতে করতে দু-তিনবার মোড় ঘোরার পর ব্যাঘ্রসংকুল পথ অতিক্রম করে সেই জনহীন ঘুমের দেশ অর্থাৎ তেলেনাপোতায় পৌঁছোনো যায়।
কথকদের গোরুর গাড়ি একটি নাতিক্ষুদ্র পুকুরের কাছে গিয়ে থামে। তারই পাশে জ্যোৎস্নালোকের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দুর্গের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকা এক জীর্ণ অট্টালিকা দেখতে পাওয়া যায়। যার ছাদ ভাঙা, দেয়াল ধসে পড়ছে আর জানালাগুলি চক্ষুছাড়া কোটরের মতো পাল্লাহীন। ঘরগুলি ঝুল, জঞ্জাল ও ধুলোয় পূর্ণ, ছাদ আর দেয়ালের জীর্ণ পলেস্তারা থেকে থেকে খসে পড়ছে। ছাদের আলিসা ভেঙে ধূলিসাৎ। ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী ষড়যন্ত্রের শিকড় চালিয়ে যেন তার ধ্বংসের কাজকেই এগিয়ে রেখেছে।
‘মা তো কিছুতেই শুনছেন না।— কোন্ প্রসঙ্গে এমন উক্তি? বক্তার মা কিছুতেই কী শুনতে চাইছেন না ? ৩+২ = ৫
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন গল্পের অন্যতম প্রধান নারীচরিত্র যামিনী। যামিনীর জ্ঞাতি সম্পর্কিত দাদা মণি তাঁর দুই সঙ্গীকে নিয়ে নির্জন তেলেনাপোতায় তাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। মণিদাদের কথা শুনে যামিনীর মৃত্যুপথযাত্রী অন্ধ মা ভাবেন, তাঁর দূরসম্পর্কিত বোনপো নিরঞ্জন এসেছে। কারণ বৃদ্ধার আশা, যামিনীকে বিয়ে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নিরঞ্জন একদিন না এসে পারবে না। তাই কথকদের আসার খবর পাওয়ার পর থেকেই ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠা মায়ের অবস্থার কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে যামিনী এমন মন্তব্য করেছে।
→ “মা তো কিছুতেই শুনছেন না”—উক্তিটির মধ্যে যামিনীর আক্ষেপের ভিতর তার মায়ের নাছোড় মনোভাব ফুটে ওঠে। কাহিনি থেকে জানা যায়, বছর চারেক আগে নিরঞ্জন নামধারী তাদেরই এক দূরসম্পর্কের বোনপো তার মা-কে কথা দিয়েছিল যে, সে যামিনীকে বিয়ে করবে। যদিও পরবর্তীতে সে আর ফিরে আসেনি। এখন বিয়ে-থা করে সে ঘোর সংসারী। এ কথা যামিনীরও অজানা নয়। তাদের এই প্রতারিত হওয়ার কথা যামিনী মেনে নিলেও, বৃদ্ধা মানতে নারাজ। তাই কথকদের পদশব্দ শুনে তাঁর কঙ্কালসার চেহারার মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। তিনি বলে ওঠেন “কে, নিরঞ্জন এলি?” আসলে যামিনীর মা এই সরল সত্যটি শুনতে চাইছেন না যে, নিরঞ্জন আর ফিরে আসবে না। সেইসঙ্গে এটিও ঠিক যে, তাঁকে এই নির্মম বাস্তবতাটি জানিয়ে কেউই পাপের ভাগীদার হতে চায় না ।
‘কে নিরঞ্জন এলি?—নিরঞ্জন কে? কোন্ পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন? 2 + 3 = 5
উত্তর : ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নিরঞ্জন হল গল্পের অন্যতম চরিত্র যামিনীর মায়ের দূরসম্পর্কের বোনপো। সে অসহায় বৃদ্ধা মহিলার কন্যাকে অর্থাৎ যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
→ গল্পকথক এক বিশেষ পরিস্থিতিতে আবেগবিহ্বল হয়ে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর তেলেনাপোতায় আগমনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মৎস্যশিকার। তাই নিজের লক্ষ্যপূরণ করতে তিনি ভগ্নপ্রায় বাড়িসংলগ্ন পানাপুকুরে যান। কিন্তু বহু আয়োজন সত্ত্বেও তাঁর মাছ ধরার সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। হতাশ কথক ঘরে ফিরে বন্ধুদের উপহাসের পাত্র হন। তিনি বোঝেন সমস্ত সংবাদ ইতিমধ্যেই বন্ধুদের কর্ণগোচর হয়েছে; আর এসবের মূল কারিগর পুকুরঘাটের সেই মেয়েটি। তখন তিনি এও জানতে পারেন যে, মেয়েটির নাম যামিনী এবং সে পানরসিক বন্ধুর জ্ঞাতি-স্থানীয়া ৷ কথক বন্ধুদের কাছে আরও শোনেন যে, সেদিনের দুপুরের খাবার আয়োজন তাদের বাড়িতেই হয়েছে। পরে খাওয়া শেষে কথক যখন বন্ধুদের সঙ্গে বিশ্রাম করছিলেন, তখন যামিনী সেখানে গিয়ে অত্যন্ত কাতর স্বরে বিপন্নভাবে মণিদাকে যা বলেছিল, তা তাঁদের দুজনেরই কানে আসে। পরে প্রকৃত ব্যাপারটি মণিদার কাছে জেনে, কথক মণিদাকেই জিজ্ঞাসা করেন, “নিরঞ্জন কি এখনো বিদেশ থেকে ফেরেনি?” প্রত্যুত্তরে নিরঞ্জনের বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনি বলেন মণিদা। এরপর মণিদা যামিনীর মৃতপ্রায় মা-কে সান্ত্বনা দিতে দোতলার ঘরের দিকে যেতে উদ্যত হলে কথক মণিদার সঙ্গী হন। কথকদের পায়ের শব্দ শুনে যামিনীর মায়ের কঙ্কালসার চেহারার মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সেখানে অন্ধ-মৃতপ্রায় বৃদ্ধার করুণ আর্তি শুনে কথকের হৃদয়ে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে মণিদা ও যামিনীকে স্তম্ভিত করে দিয়ে তিনি আচমকা নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
‘আমার কথার নড়চড় হবে না—বক্তার কথার কি নড়চড় হয়েছিল— আলোচনা করো।
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন নিরঞ্জন-রূপী গল্পকথক ।
গল্পকথক মৃত্যুপথযাত্রী যামিনীর মা-কে যে-কথা দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়নি। কথক তেলেনাপোতা নামক নির্জন গ্রামে এক বিশেষ পরিস্থিতিতে পানরসিক সঙ্গী মণিদার সঙ্গে তারই এক জ্ঞাতি-স্থানীয়া বোন যামিনীদের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে যামিনীর অন্ধ-কঙ্কালসার মৃতপ্রায় মায়ের; অবিবাহিতা কন্যা যামিনীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ও করুণ আর্তি অনুভব করে কথক আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন। পরিস্থিতির রসায়নে মোহিত কথক যামিনী ও বন্ধু মণিকে বিস্ময়ে স্তম্ভিত করে দিয়ে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় শুরু করেন। “না মাসিমা, আর পালাব না।”–আচমকা কথকের এই কথায় বৃদ্ধা আশার আলো দেখেন এবং বলেন যে, তাঁর শেষ কথা না-পেলে তিনি মরেও শান্তি পাবেন না। তখন কথক বৃদ্ধাকে নিশ্চিন্ত করতে বলেন যে, “আমার কথার নড়চড় হবে না”। এভাবে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধা এবং যামিনীকে আশ্বস্ত করে তিনি শহরে ফিরে যান। তাঁর স্মৃতি ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। দুরারোগ্য ম্যালেরিয়া থেকে সুস্থ হয়ে উঠে তিনি দেখেন, দেহ ও মনে অনেক ধোয়া-মোছা ঘটে গেছে। তেলেনাপোতার স্মৃতি তখন চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন। এভাবেই আসলে লেখক আবেগতাড়িত নাগরিক মধ্যবিত্তের শ্রেণিচরিত্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও পলায়নী মনোবৃত্তিকে কৌশলে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।
‘না মাসিমা, আর পালাব না–কে, কাকে ডাক্তটি করেছে ? উক্তিটির আলোকে বক্তার মানসিকতার পরিচয় দাও। 2 + 3 = 5
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক গল্পে নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয়রত নায়ক তথা কথক যামিনীর অন্ধ ও মৃত্যুপথযাত্রী মা-কে এ কথাগুলি বলেছিলেন।
→ আলোকিত উজ্জ্বল এক শহর থেকে পাণ্ডববর্জিত তেলেনাপোতায় হঠাৎ একদিন কথক ও তার দুই বন্ধু বেড়াতে আসেন। তাঁদের মধ্যে কথক মৎস্যলুব্ধ, অন্য দুজনের একজন নিদ্রাবিলাসী আর অপরজন পানরসিক। তাঁরা প্রায় অন্ধকার গ্রামীণ পরিবেশের রোমান্টিকতায় মুগ্ধ হয়ে পড়েন।
পরিস্থিতির আকস্মিকতায় কথক বন্ধুর জ্ঞাতি যামিনীর মা-কে কথা দিয়ে ফেলেন যে, তিনি অবশ্যই যামিনীকে বিবাহ করবেন। অর্থাৎ শহরে ফিরে গেলেও তিনি আবার তেলেনাপোতায় ফিরে আসবেন। তাঁর এমন আচরণের মধ্যে তাঁর সহৃদয়তা ও সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে। একজন অসহায় মায়ের ব্যথা সত্যিসত্যিই কথকের হৃদয়কে ব্যথাতুর করেছে এবং বিদায়কালেও কথকের হৃদয় যে যামিনী ও মা-র প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, তা তাঁর উক্তিতেই ধরা পড়ে—“এবারে পারিনি বলে তেলেনাপোতার মাছ কি বারবার ফাঁকি দিতে পারবে ?”
গল্পকথক আসলে যামিনীদের দুঃখের চলচ্চিত্রে ঢুকে পড়ে এক মুহূর্তের বিহ্বলতায় তার মায়ের বিশ্বাসভাজন বোনপো নিরঞ্জন হয়ে ওঠেন এবং প্রশ্নোক্ত সান্ত্বনা বাক্যটি উচ্চারণ করে ফেলেন। বাস্তব আর কল্পনার মধ্যে যে আকাশপাতাল তফাত, তা তিনি সেই মুহূর্তে অনুভব করেননি। তাই নাগরিক জীবনে ফিরে এসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দেহমনের অনেক কিছু ধোয়া-মোছা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যামিনীর মা-কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে যেতে তাঁর অসুবিধা হয়নি।
কথকের আলোচ্য প্রতিশ্রুতিতে সহৃদয়তা থাকলেও শেষে তা মানবজীবনের এক গভীর ফাকিকেই তুলে ধরেছে।
‘আপনি শুধু নিজের হৃৎস্পন্দনে একটি কথাই বারবার ধ্বনিত হচ্ছে শুনবেন ‘ফিরে আসব, ফিরে আসব।—এখানে ‘আপনি’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? ‘ফিরে আসব, ফিরে আসব-র তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। 2 + 3 = ৫
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্প থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত। এক্ষেত্রে লেখক গল্পে ‘আপনি’ বলতে তেলেনাপোতা অভিযাত্রী পাঠককে বুঝিয়েছেন।
→ কর্মক্লান্ত একটানা শহুরে জীবন থেকে বেরিয়ে একটু মুক্তির স্বাদ পেতে সপ্তাহের শেষে কথকরা পৌঁছোন এক জনমানবহীন গ্রামে। সেখানকার স্তব্ধতা ; আরকের মধ্যে মৃতদেহ থাকার মতো। সেই রোমান্টিক পরিবেশে মধ্যবিত্ত বাঙালি মননের অধিকারী কথকের সঙ্গে পরিচয় হয় এক ভাগ্যবিড়ম্বিতা রমণীর। সে আবার কথকের সঙ্গী মণিদার জ্ঞাতি-স্থানীয়া। তার নাম যামিনী। এই নিঃসঙ্গ যুবতির বিড়ম্বিত জীবনের ট্র্যাজেডি হল, তার মা নিরঞ্জন নামের এক দূরসম্পর্কীয় বোনপোর সঙ্গে তার বিয়ে পাকাপাকি করলেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নিরঞ্জন তাদের প্রতারিত করে। ফলে যামিনীর মৃত্যুপথযাত্রী মা দুশ্চিন্তায় খুবই পীড়িত হন কিন্তু সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে আশা ছাড়তে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে আবেগপ্রবণ কথক নিরঞ্জন-রূপী পরিত্রাতার ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যামিনীর মা-কে আশ্বস্ত করে বলেন, “আমার কথার নড়চড় হবে না”। এ কথায় যামিনীর চোখের মধুর সকৃতজ্ঞ হাসি, শরতের শুভ্র মেঘের মতো কথকের হৃদয়-দিগন্তকে স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে ভেসে যায়। এরপর শহুরে কথক গোরুর গাড়ি করে ফিরে আসার সময় সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে তাঁর হৃদয়ে একটিই কথা বারবার অনুরণিত হতে শোনেন, “ফিরে আসব, ফিরে আসব।” যদিও এই ফেরার আগ্রহ খুব বেশিদিন তাঁর আর থাকে না ৷ আসলে মধ্যবিত্ত পলায়নবাদী মননকে তুলে ধরতেই কৌশলে এমন উক্তি।
‘মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই।- এ কথা কার, কেন মনে হবে? এই মনে হওয়ার কারণ কী? 2 + 3 = 5
উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক গল্প থেকে গৃহীত। উক্তিটির বক্তা গল্পের শহুরে নায়ক তথা কথক। তেলেনাপোতা থেকে ফিরে অসুস্থতার দরুন তাঁর দেহ ও মনে অনেক ধোয়া-মোছা চলে, ফলে সেখানকার স্মৃতি ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসে। তখন কথকের এমন কথা মনে হয় l
→ মৎস্যশিকারের উদ্দেশ্যে কথক তেলেনাপোতায় গেলেও ঘটনাচক্রে তিনি উক্ত গ্রামের অসহায় বৃদ্ধা যামিনীর মা-কে কথা দেন যে, যামিনীকে তিনি গ্রহণ করবেন। এরপর পড়ন্ত বেলায় ভারাক্রান্ত মনে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে শহরে ফিরে আসেন। শহরের আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে কয়েকদিন কাটানোর পরে ছোটোখাটো দু-একটি বাধা পেরিয়ে যখন তিনি তেলেনাপোতা যাবেন বলে স্থির করেছেন—তখনই তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
অনেকদিন পরে যখন বাইরের মুক্ত পরিবেশে কথক বেরিয়ে আসেন—তখন অনুভব করেন যে, দেহমনের অনেক কিছু ধোয়া-মোছা হয়ে গেছে। ম্যালেরিয়ার অসুস্থতা মানবশরীরে গভীর প্রভাব ফেলে— কথকেরও তাই হয়েছে। তখন তেলেনাপোতার স্মৃতি বিলীন হয়ে যাওয়া তারার মতো অবলুপ্ত। তেলেনাপোতা বলে যে কোনো গ্রামে তিনি গিয়েছিলেন তাও তাঁর মন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। বাস্তবের দুনিয়ায় পৌঁছে কল্পনার ফানুস গেছে ধ্বংস হয়ে। এই কারণেই “মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথায় কিছু সত্যি নেই ।”
তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে যামিনী চরিত্রটি আলোচনা করো। ৫
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্পের একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হল যামিনী। আলোচ্য কাহিনিতে যামিনীর চরিত্রের
লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
* সহজ ও সংকোচহীনা : যামিনীর চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল সহজসরল ও সংকোচহীনা। তেলেনাপোতায় আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে তার আচরণে অহেতুক লজ্জা-সংকোচের প্রকাশ ঘটেনি। এমনকি পুকুরঘাটে অপরিচিত কথককে মাছ শিকার করতে দেখেও সে ত্রস্ত হয়নি বরং মাছ টোপ খেয়ে পালাচ্ছে দেখে আড়ষ্টতাহীন যামিনীই কথককে ছিপে টান দিতে বলেছে।
* স্থিতধী নারী : শত দারিদ্র্য যামিনীর ধৈর্যকে টলাতে পারেনি। নিরঞ্জন তাকে প্রতারণা করলেও জীবনযুদ্ধ থেকে সে হারিয়ে যায়নি বরং পরম ধৈর্যের সঙ্গে বিরুদ্ধ পরিস্থিতিকে মানিয়ে চলেছে। মা-এর কটূক্তি অবলীলায় সহ্য করেছে।
* সেবাপরায়ণা : যামিনী সেবাপরায়ণা নারী। প্রায়ান্ধ, অসুস্থ, বৃদ্ধা মা-কে সে অশেষ যত্নের সঙ্গে সেবা করে চলেছে। তাদের বাড়িতে আগত অতিথিদের জন্যও যামিনী যথাসাধ্য সেবার আয়োজন করেছে।
* প্রেমপূর্ণ হৃদয় : যামিনীর অন্তরে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নের কুসুম যে সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়নি, তা প্রকাশ পায় নতুন পরিস্থিতিতে। কথকের প্রতিশ্রুতিতে তার চোখে ফুটে উঠেছে মধুর কৃতজ্ঞ হাসির ছটা, সেই হাসি শরতের শুভ্র মেঘের মতো স্নিগ্ধ।
* কর্তব্যবোধ : অসুস্থ মায়ের প্রতি কর্তব্যপালনে যামিনী সচেষ্ট থেকেছে সর্বদা। মা-এর অস্থিরতা কমাতে সে মণিদার সাহায্য প্রার্থনা করেছে। এসবই মা-এর প্রতি ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধের দৃষ্টান্ত।
আলোচ্য গল্পে যামিনীর চরিত্রের পূর্বোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় ।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে যামিনীর মায়ের চরিত্র আলোচনা করো। ৫
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে গ্রামজীবনের রুঢ় বাস্তবতার পটভূমিতে যামিনীর মা-এর চরিত্রটি উপস্থাপিত।
* মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় উৎকণ্ঠিতা : যামিনীর মা-কে এই গল্পে আমরা বাংলা দেশের চিরায়ত মায়ের মূর্ত প্রতীক রূপেই দেখতে পাই। বাংলা দেশের মায়েরা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্না থাকেন তাঁদের অনুঢ়া মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে যামিনীর মৃত্যুপথযাত্রী, কঙ্কালসার দেহের অধিকারিণী মা-ও এর ব্যতিক্রম নন। কন্যাস্নেহ ও তার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার সুরাহা না-হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন কিছুতেই মরতে পারছিলেন না।
* সহজসরল বিশ্বাসের অধিকারিণী : অসহায় এই রমণী মেয়ের ছেলেবেলাতে এক দূরসম্পর্কের বোনপো নিরঞ্জনের সঙ্গে তার সম্বন্ধ ঠিক করেছিলেন। বছর চারেক আগে নিরঞ্জন বৃদ্ধাকে কথা দিয়ে যায় যে, বিদেশের চাকরি থেকে ফিরেই সে যামিনীকে বিয়ে করবে। যদিও তেলেনাপোতার পথ আর না-মাড়িয়ে সে ইতিমধ্যেই সংসারী হয়েছে। কথক যখন নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় করেন, তখন বৃদ্ধা কথককে নিরঞ্জনই মনে করেন—এমনই সহজসরল বিশ্বাসের অধিকারিণী ছিলেন তিনি।
* অস্থিরতা : নিদারুণ দারিদ্র্য, ঘরে অবিবাহিতা মেয়ে, রোগাক্রান্ত জীর্ণ শরীর, জনমানবহীন পরিবেশে বসবাসের নিরাপত্তাহীনতা কঙ্কালসার বৃদ্ধার মানসিকতাকে অস্থির করে তুলেছিল। তাই তিনি দিনরাত মেয়ের সঙ্গে খিটমিট করতেন।
* মমতাময়ী জননী : মেয়েকে পাত্রস্থ করার চিন্তায় তিনি যখন ব্যাকুলা, তখন কথকের (বৃদ্ধার চোখে নিরঞ্জন) দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন—“রাতদিন খিটখিট করে মেয়েটাকে যে কত যন্ত্রণা দিই, তা কি আমি জানি না।” এ থেকেই তার মাতৃমনের পরিচয় পাওয়া যায়।
আলোচ্য গল্পে যামিনীর বৃদ্ধা জননীর চরিত্রের উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রতিফলিত হয়েছে।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প অবলম্বনে গল্পকথকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দাও।
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামক ছোটোগল্পের সর্বাপেক্ষা সক্রিয় চরিত্র হল গল্পকথক। আলোচ্য গল্পে তাঁর চরিত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাই ।
* মৎস্যশিকারের নেশা : আলোচ্য কাহিনি থেকে জানতে পারি গল্পকথক কেবল মৎস্যশিকারের উদ্দেশ্যেই দুই সঙ্গীসহ ভাদ্রের এক পড়ন্ত বিকালে জিনিসে-মানুষে ঠাসাঠাসি একটি বাসে চেপে তেলেনাপোতা গ্রামে উপস্থিত হন এবং পরদিন মৎস্যশিকারে প্রবৃত্ত হয়ে ব্যর্থও হন।
* কৌতূহলী মানসিকতা : মৎস্যশিকারে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে যখন তিনি জানতে পারলেন যে, তার মৎস্যশিকারের নৈপুণ্যের ইতিহাস যামিনীর কাছ থেকে বন্ধুরা জেনে গেছে, তখন তিনি কৌতূহলী হয়ে যামিনীর পরিচয় জানতে চেয়েছেন। রাতে ছাদ থেকে দেখা রাস্তার ওপারের একটি জানলার ছায়ামূর্তিও তাকে কৌতূহলী করে তোলে।
* বাগ্বৈদগ্ধ্য : তেলেনাপোতা থেকে ফেরার মুহূর্তে যামিনীর কথার উত্তরে তিনি বলেন—‘এবারে পারিনি বলে তেলেনাপোতার মাছ কি বারবার ফাঁকি দিতে পারবে?’—এমন কথা থেকে কথকের বাগ্বৈদগ্যের পরিচয় পাওয়া যায়।
* সহানুভূতিশীলতা : যামিনীদের অসম্ভব দারিদ্র্য, অসহায়তা; নিরঞ্জন কর্তৃক তাদের প্রতারিত হওয়া কথকের হৃদয়কে আর্দ্র করে তোলে এবং পরিস্থিতির আকস্মিকতায় তিনি যামিনীর মৃত্যুপথযাত্রী মা-কে যামিনীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেন।
* প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : কথক চরিত্রের একমাত্র ত্রুটি হল তিনি যামিনীর মা-কে দেওয়া প্রতিশ্রুতি শেষ অবধি রাখতে পারেননি। এভাবেই আলোচ্য গল্পে কথক চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি আসলে আত্ম-আবিষ্কারের গল্প—বিষয়বস্তুর নিরিখে বক্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি গঠনকৌশলের দিক থেকে বাংলা ছোটোগল্পের ইতিহাসে অভিনবত্বের দাবি রাখে। ভাববাচ্যে মধ্যমপুরুষে লেখা গল্পটিতে কোনো ব্যক্তিচরিত্রকে প্রাধান্য না-দিয়ে লেখক যেন একটি সমকালীন সত্যকে উদ্ঘাটিত করতে চেয়েছেন। গল্পের রোমান্টিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য লেখক সমস্ত গল্পটিকে একটি অন্ধকার ছায়াচ্ছন্নতায় আবৃত রাখার কৌশল গ্রহণ করেছেন। মহানগরের কর্মব্যস্ত মানুষরা দু-এক দিনের অবকাশ পেলে ‘পৃথিবীর সরলতম’ মাছেদের সন্ধানে তেলেনাপোতার মতো গ্রামে পৌঁছে যায়। পরিবেশের প্রভাব তাদের মনে আবেগ ও অনুভূতির জন্ম দেয়। মণিদার বন্ধু তথা গল্পকথকের মনে নির্জন ভগ্নগৃহে বসবাসকারী মৃত্যুপথযাত্রী যামিনীর মা ও যামিনীর প্রতি মহৎ আবেগ ও অনুভূতির সৃষ্টি হয়, যা অস্বীকার করা যায় না। সেই আবেগের ছদ্মবেশেই ‘সাজানো’ নিরঞ্জন অর্থাৎ কথক যামিনীর মা-কে হতাশ করতে না-পেরে, “না মাসিমা, আর পালাব না” বলে কথা দিয়ে ফেলেন। আশ্বাস সুনিশ্চিত করার জন্য তিনি আরও বলেন, “আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না।” এরপরে নায়ক যথারীতি নাগরিক জীবনে ফিরে আসেন এবং দুরারোগ্য ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। তাই যামিনীকে উদ্ধার করা আর সম্ভব হয় না। কারণ কর্মব্যস্ত নাগরিক মধ্যবিত্তের মনে গ্রামের “সরলতম মাছেদের” স্মৃতি তো আর খুব জোরালো-গভীর নয়। তাদের পলায়নপ্রিয় মনে ক্ষণিকের দুর্বল মুহূর্তের প্রতিশ্রুতি আসলে “অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা মাত্র”। এই দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পটিকে মধ্যবিত্ত জীবনের আত্ম-আবিষ্কারের গল্প বলা যেতেই পারে ।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি একটি সার্থক ছোটোগল্প, বিশ্লেষণ করো। ৫
উত্তর : সংক্ষিপ্ত আয়তনে ঘটনার একমুখিনতায় মানবজীবনের কোনো এক গভীর সত্য কিংবা মহৎ প্রশ্নকে ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই ছোটোগল্পের সার্থকতা লুকিয়ে থাকে। ছোটোগল্পে কোনো তত্ত্ব বা উপদেশ ধ্বনিত হয় না। এখানে থাকে না বর্ণনার ছটা বা ঘটনার ঘনঘটা। আলোচনা করে দেখা যাক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি কতটা প্রতিফলিত হয়েছে।
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততাকে ছুড়ে ফেলে তিন বন্ধু অবসর বিনোদনের উদ্দেশ্যে তেলেনাপোতা নামক এক পাণ্ডববর্জিত গ্রামে যান। সেখানে ভিড় বাস ও গোরুর গাড়ির পথ অতিক্রম করে এক কৃষ্ণপক্ষের মায়াবী রাতে তাঁরা এক ভগ্নপ্রায় প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছোন। গভীর রাতে কথক ছায়াময় আলোয় এক নারীমূর্তিকে দেখেন। কিন্তু পরের দিন সূর্যের আলোয় ওই রহস্যময় নারীমূর্তি যামিনীর দারিদ্র্য, বিড়ম্বিত অবস্থা এবং নিরঞ্জন নামক জনৈক ব্যক্তির দ্বারা মিথ্যা আশ্বাসে প্রবঞ্চিত হওয়ার কথা শোনেন। শেষে যামিনীর মৃতপ্রায় অন্ধ মায়ের শোচনীয় দুরবস্থায় আবেগজর্জরিত হয়ে কথকের মনে জেগে ওঠে পরার্থপরতা ও সহানুভূতি। মুহূর্তে তিনি নিরঞ্জন সেজে যামিনীর মা-কে আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, “আমার কথার নড়চড় হবে না।” কিন্তু নাগরিক জীবনে পৌঁছে কথক তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান।
গল্পের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, গল্পটি শুরু থেকে শেষ অবধি একমুখিনতা পেয়েছে। এখানে কোনো ঘটনার অতিরিক্ত বর্ণনা নেই, তেমনই নেই অনেক শাখাকাহিনিও। তা ছাড়া গল্পশেষে কথকের আচরণ বা যামিনীদের ভাগ্যবিড়ম্বনা নিয়েও পাঠকের মনে অতৃপ্তি থেকেই যায়। ছোটোগল্পের এই বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচ্য গল্পে বিদ্যমান থাকায় গল্পটিকে আদর্শ ছোটোগল্প বলা যেতে পারে।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটির নামকরণ কতটা সার্থক আলোচনা করো।
উত্তর : নামকরণ হল সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। প্রধানত, নামকরণের মাধ্যমেই রচনার অন্দরমহলে প্রবেশ করে পাঠকসমাজ। নামকরণ নানাপ্রকার হতে পারে। যেমন—চরিত্রপ্রধান, বিষয়কেন্দ্রিক, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এখন আলোচনা করে দেখা যাক যে, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার ’ নামক গল্পের নামকরণ সার্থক কিনা ।
পাঠ্য গল্পে ‘আবিষ্কার’ শব্দটি ঘুরে-ফিরে নানাভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। কাহিনিতে দেখা যায় শহর থেকে মাত্র ত্রিশ মাইল দূরে এক গণ্ডগ্রামে কথক ও তাঁর দুই বন্ধু গিয়ে পৌঁছোন। তাঁদের কাছে গ্রামটির পরিবেশ ও মানুষ সবই অজ্ঞাত। মনে হয় শহরের এত কাছে হয়েও যেন এক গ্রহান্তর। গ্রামের অন্ধকারাচ্ছন্ন রূপ, পচা পানাপুকুরের পাশে অবস্থিত ভগ্নপ্রায় জীর্ণ অট্টালিকা এক রহস্যে পরিপূর্ণ স্বপ্নময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। শহুরে, নাগরিক সভ্যতার আলোকে বেড়ে ওঠা নাগরিকদের কাছে এমন দৃশ্য একেবারেই অচেনা। সেইসঙ্গে গল্পের দুই নারীচরিত্র যামিনী ও তার মৃতপ্রায় মা এবং তাঁর প্রতীক্ষা যেন তেলেনাপোতার আলোছায়াময় পরিপার্শ্বেরই সম্প্রসারণ। এও এক ‘আবিষ্কার’। কিন্তু এ সবই আসলে প্রতীকী। তেলেনাপোতায় একদিনের ভ্রমণকালে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজেডি হল নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজজীবনের এক চিরন্তন ট্র্যাজেডি। তেলেনাপোতা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে লেখক আসলে সেই চিরকালীন ট্র্যাজেডিকেই আবিষ্কার করেছেন। ‘তেলেনাপোতা’ এক কাল্পনিক গ্রাম। তবে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে এরকম গ্রাম অজস্র। তাই যে-কোনো দিন যে-কেউ তাকে আবিষ্কার করতে পারে। সেই গ্রামে নিঃসঙ্গ যামিনী ও তার বৃদ্ধা মায়ের অন্তিম বেদনায় আপ্লুত হয়ে নাগরিক বাস্তবতার হিসাবনিকাশকে ছুড়ে ফেলে আবেগমথিত কথক; নিরঞ্জনের ভূমিকায় অভিনয় করেন। বিহ্বল যামিনীকে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু শহরে ফিরে ম্যালেরিয়ায় ভুগে, জীবনের বাস্তবতায় অভ্যস্ত হওয়া মাত্রই তাঁর রোমান্টিক ভাববিলাসকে তিনি নিজেই খারিজ করে দেন। বস্তুত, তেলেনাপোতার হাতছানি থেকেই তিনি পালিয়ে বাঁচেন। মধ্যবিত্ত মনের এই ক্ষণিকের মোহ, বিভ্রান্তি এবং পলায়নী মানসিকতার উদ্ঘাটনই হল এখানে প্রকৃত ‘আবিষ্কার’। ফলে গল্পের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামকরণটি সার্থক ও তাৎপর্যপূর্ণ।
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে লেখক অসামান্যভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের রহস্যময়তাকে বিবৃত করেছেন, তা গল্পের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করো । ৫
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের অসামান্য একটি ছোটোগল্প ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’। গল্পের নানা স্থানে লেখকের বর্ণনায় পরিবেশের রহস্যময়তা উপস্থিত হয়েছে।
ঘন অন্ধকারময় জঙ্গলাকীর্ণ পথ থেকে ভেসে আসা শ্রুতিবিস্ময়কর এক ধ্বনি শুনে কথকদের মনে হচ্ছিল যেন জঙ্গল থেকে অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে বের করছে কেউ। গোরুর গাড়ি যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন মনে হচ্ছিল সেই অন্ধকার যেন দুর্ভেদ্য দেয়াল রচনা করেছে।
কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত চাঁদের স্তিমিত আলোয় দেখা যায় আবছা বিশাল মৌন প্রহরীগণ গোরুর গাড়ির দু-পাশে সরে সরে যাচ্ছে। আসলে সেগুলি ছিল দেউড়ির খিলান, মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সেদিকে তাকালে শরীরে শিহরন জাগে, মনে হয় জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কুজ্ঝটিকাচ্ছন্ন স্মৃতিলোকে প্রবেশ করা হয়েছে।
শ্যাওলা-ঢাকা ফাটলপূর্ণ পুকুরঘাটে কথক যখন মৎস্যশিকারের আয়োজন করেছেন তখন মন উদাস করা ঘুঘুর ডাক, মাছরাঙার বিদ্রুপ, ঘাটের ফাটল থেকে সাপ বেরিয়ে আসা—সবই সংশ্লিষ্ট পরিবেশকে রহস্যময় করে তুলেছিল।
রাতের ক্ষীণ আলোয় জীর্ণ প্রাসাদের ছাদ থেকে পাশের রাস্তার ওপারে একটি জানলায় মুহূর্তের জন্য কথকের চোখে ধরা দিয়েই অদৃশ্য হয় একটি ছায়ামূর্তি— যা রহস্যকে গভীর করে তুলেছে।
এইভাবে আলোচ্য গল্পে লেখকের বর্ণনায় প্রাকৃতিক পরিবেশের রহস্যময়তা অসামান্যতা লাভ করেছে।
Read Also
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।