Bengali Bangla Prabandha Rachana তোমার প্রিয় ঋতু – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় ঋতু  – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় ঋতু

ভূমিকা : আমাদের এক বাঙালি কবি প্রিয় জন্মভূমির সৌন্দর্য দেখে অভিভূত ও মােহিত হয়ে লিখে গেছেন, “সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।” –এখানে লিখিত একটি শব্দও অতিশয়ােক্তি নয়। আমাদের এই বাংলার ঋতুচক্র ঋতুতে ঋতুতে আমাদের বঙ্গমাতাকে যে নতুন নতুন পােশাকে সাজিয়ে দেয়, তা সকল দেশের সকল রানির ঐশ্বর্যকে সহজেই হার মানায়। এমন পরিবর্তিত ঐশ্বর্য কখনও কি কোনাে দেশ পেয়েছে? না।

জিজ্ঞাসা : যদি প্রশ্ন করা হয়, বঙ্গমাতাকে রানির সাজে সাজাতে কোন্ ঋতুর ঐশ্বর্যটি সেরা ? বলা বাহুল্য, এই প্রশ্নের জবাব দিতে হলে একসঙ্গে ছ-টি বিষয়ের জবাব বেরিয়ে আসবে। বাংলার ঋতুর বৈভব এবং কোনটি সেরা ঋতু।

বাংলার ঋতু : বাংলাদেশে ছ-টি ঋতু। গ্রীষ্ম-বর্ষাশরৎ-হেমন্ত-শীত-বসন্ত। এরা যখন যখন এসে দেখা দেয়, তখন প্রকৃতির রং বদলায়, বদলায় বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন। দেখা দেয় বিচিত্র ফুলের বাহার। ফলে-ফুলে রঙে রঙে শােভিত হয় বঙ্গজননী তখন বঙ্গজননীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যেন আশ মেটে না।

শীত ঋতু : ঋতুচক্রের ক্রমে তাল রেখে প্রথমে শীত ঋতু দিয়েই আলােচনা আরম্ভ করা যাক। শীতের দেশে শীত যেমনটি হয়, এই বাংলা দেশে তা কিন্তু হয় না। দিনের-পর-দিন কুয়াশায় ঢাকা থাকে শীতের দেশ। দেখা দেয় তুষারপাত। গােমড়ামুখাে আকাশ থেকে ঝরে পড়ে তুষার আর তুষার। জীবকুলের সঙ্গে মানুষও ঠান্ডার জন্য অস্বস্তিতে পড়ে। তবে এখানে শীত ঋতুটি একদম আলাদা। না আছে এর বরফের কামড় বা কুয়াশা। এখানে কদাচিৎ শীতের আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। নইলে সব সময়টাই ঝকঝকে রােদুর ‘রােদের সােনা ছড়িয়ে পড়ে মাটির আঁচলে। কিংবা ‘আমলকীর ডালে ডালে লাগে শীতের হাওয়ার নাচন। চারদিকে গােলাপ-গাঁদা ইত্যাদি মরশুমি ফুলের ছড়াছড়ি। এই শীত ঋতুতেই সােনার ধানে আমাদের শস্যভাণ্ডার ভরে যায়। বঙ্গরানি তখন কেবল রানি নন, তিনি হয়ে যান দেবী অন্নপূর্ণা।

বসন্ত আসিল দ্বারে : শীতের পর আসে বসন্ত ঋতু। এই ঋতুতে, জন্মভূমি বঙ্গরানির পােশাক ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। শিমুলে-পলাশে আগুন লাগে। মল্লিকা-মালতীর গন্ধে বাতাস হয়ে ওঠে ভারী। বকুলগন্ধে বার্তা আসে। আসে বসন্ত বাতাসে ফাগুনের উত্তাল রাত। শােনা যায় মধুপের গুঞ্জন, কোকিলের ডাক। এই বসন্তের আবেগে ভেসে কবিরা রচনা করেন কবিতা। রচনা করেন গান—অনেকে এই বসন্তকালকে মানুষের যৌবনের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। আমাদের জন্মভূমির কাছে বসন্তের বৈভব হল এক মহার্ঘ ঐশ্বর্য।

গ্রীষ্মের দাবদাহ : বসন্তের পরে ঋতুচক্রের আবর্তনে চলে আসে গ্রীষ্মকাল। এই গ্রীষ্মকে আপাতদৃষ্টিতে রুক্ষ বলে মনে হলেও, এর বৈভব কিছু কম নয়। প্রচণ্ড দাবদাহ জড়িয়ে থাকে গ্রীষ্মকে, দারুণ গরমে গ্রীষ্মের দুপুর দুঃসহ। তবে রাত্রিটা অনেকটাই আরামের। পাকা আমের বৈভব রয়েছে গ্রীষ্মকালে। রয়েছে কালােজামের নিবিড় সুধারস। আকাশ-বাতাস কাপিয়ে গাছগাছালির উপর ঝড় তুলে এই গ্রীষ্মে হঠাৎ এসে হাজির হয় ‘কালবৈশাখী। এই ঝড় বিস্তর তাণ্ডব বাধায়। গাছের ডাল ভাঙে। উড়িয়ে দেয় চালাঘর। নদীর বুকে নৌকাডুবি ঘটায়। রকমে ও বৈচিত্র্যে এই ঋতু বঙ্গজননীর এক বিশেষ ঐশ্বর্য বই-কি।

বর্ষা ও শরৎ : গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। ছায়া উত্তরীয় উড়িয়ে দিয়ে বর্ষা আসে জলভরা মেঘ নিয়ে। দাবদাহের ক্লান্তি মুহূর্তে ঘুচিয়ে দেয়। আকাশে বাতাসে বাজে বর্ষা-সংগীত। রিমঝিম্ রিমঝিম্‌, বর্ষার জলধারায় ভরে যায় নদীনালা। চারিদিক হয়ে ওঠে সবুজ। মাঠে মাঠে শুরু হয়ে যায় চাষবাস। বঙ্গজননী হয়ে ওঠে শস্যশামলা। এই বর্ষা ঋতুটি কবিদের বড়াে প্রিয়। মেঘমেদুর অম্বর নিয়ে রচিত হয় কাব্য। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ও গানে বর্ষা নিত্যনতুনভাবে প্রতিফলিত হয়। এরপরে আসে শরৎকাল। তখন আকাশ নির্মেঘ। সােনার রং লাগে শরতের রােদুরে। শেফালির গন্ধে বাতাস হয় মাতােয়ারা। কুমুদে-ক্যুরে শােভা পায় বঙ্গজননীর পােশাক। এরপর আসে ক্ষণস্থায়ী বসন্ত। পাকাধানের বৈভবে তখন ভরে ওঠে বঙ্গজননীর শস্যভাণ্ডার।

কোন ঋতুটি প্রিয় এবং কেন? এতক্ষণ ধরে যে ঋতুগুলির বর্ণনা দেওয়া হল, এই বর্ণনার পর জিজ্ঞাসা, কোন ঋতুটিকে আমাদের প্রিয় বলে চিহ্নিত করতে পারি—কোনটি কে? কোনােটিকেই বলতে দ্বিধা নেই, রুচিভেদে এবং ব্যক্তিভেদে কারও কাছে প্রিয় হয় শীত, কারও কাছে বসন্ত। গ্রীষ্মকালকেও অনেকের প্রিয় বলে মনে হওয়া অসম্ভব নয়। আমার কাছে কিন্তু বর্ষা ঋতুটিই প্রিয়। সব ঋতুরই বৈভব আছে, আছে রং-বেরঙের বাহার। বর্ষা এদিক থেকে কারও থেকে কম নয়। 

বর্ষার আছে ‘রিমঝিম’ সংগীত, এ সংগীত আর কারও নেই। তাই বর্ষা হল আমার প্রিয় ঋতু এবং এটিকে বঙ্গজননীর সেরা পছন্দও বলা যায়—“আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে/জানিনে জানিনে …’

আরো পড়ুন

একটি ফুটবল ম্যাচের স্মৃতি – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

বইপড়া – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

লেখাপড়ার অবসরে খেলা আর গল্পের বই – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

গ্রন্থাগার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

Read More »

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!