তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আলােচনা করাে

তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আলােচনা করাে

উত্তর : 

তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি

তুলনামূলক শিক্ষা তার সমগ্র পরিসরের মধ্যে অবস্থিত সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য খুঁজে বার করে। তুলনামূলক শিক্ষা বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির গণ্ডি পেরিয়ে তাদের শিক্ষাপদ্ধতি, পাঠক্রম, পঠনপাঠন প্রক্রিয়া এবং শিক্ষা ও শিক্ষাদর্শন সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে তালিকাবদ্ধ করে। তুলনামূলক শিক্ষার প্রধান কাজ হলাে তুলনা পদ্ধতিকে ব্যবহার করে সমস্ত দেশের (আলােচনার অন্তর্ভুক্ত) শিক্ষাব্যবস্থার দিকগুলির একটি সামগ্রিক রূপ তুলে ধরা। তুলনামূলক আলােচনা নির্ভর করে ঘটনার বিশ্লেষণ, আলােচনার পদ্ধতি, ব্যাখ্যা ও মূল্যবােধের উপর। এই সমস্ত বিষয়গুলি সংগ্রহ করা হয় নির্ভরযােগ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে। এই সমস্ত পদ্ধতি কেবলমাত্র পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে না। কতকগুলি বৈজ্ঞানিক ধাপের মাধ্যমে একটি তুলনামূলক আলােচনায় পৌছায়। এছাড়াও এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলি বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, নৈতিক দিকগুলি, ক্ষমতাশীল সরকারের আদর্শ, সাংবিধানিক জটিলতা প্রভৃতি তাদের আলােচনার অন্তর্ভুক্ত করেছে। তুলনামূলক পদ্ধতির কয়েকটি নির্দিষ্ট স্তর রয়েছে। সেই স্তরগুলি হলাে—(ক) সমস্যার সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং সমস্যা লিপিবদ্ধকরণ। (খ) সমস্যার বিশ্লেষণ,(গ) সীমা নির্দেশকরণ, (ঘ) বস্তুর সংজ্ঞায়িতকরণ, (ঙ) তথ্য সংগ্রহ—চিহ্নিতকরণ ও নির্ধারণ (প্রাথমিক, গৌণ ও সাহায্যকারী উৎস থেকে) এবং প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক সমালােচনা, (চ) তথ্যের সংগঠন ও প্রাপ্ত তথ্যের ব্যাখ্যা। (ছ) সিদ্ধান্তকরণ।

তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একজন গবেষকের বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা থাকা প্রয়ােজন। তিনি শুধুমাত্র কোনাে নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক কোনাে প্রতিবেদন পেশ করতে পারবেন না। এই কাজের জন্য সমগ্র বিশ্বের তথ্যের প্রয়ােজন। ব্যক্তিগত পরিদর্শনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। জাতিগত ভাষায় জ্ঞানার্জন এতে অনেক সময় প্রয়ােজন। গবেষক কখনােই তার নিজস্ব ধারণা থেকে সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করতে পারবেন না।। | বিভিন্ন তুলনামূলক পদ্ধতিকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা— @ আঞ্চলিক আলােচনা, ® তুলনামূলক আলােচনা, ® সমস্যা সমাধান। সর্বশেষে আর একটি পদ্ধতি আছে যাকে বলা হয় সামগ্রিক বিশ্লেষণ।

1) আঞ্চলিক আলােচনা (Area Studies): একটা কাজ শুরু করতে গেলে ছাত্রদের তুলনামূলক শিক্ষার মধ্যে যুক্ত থাকতে হবে এবং কিছু কাজ সম্পর্কিত তুলনামূলক শিক্ষা জানতে হবে। বিভিন্ন দেশের বা একটি মাত্র দেশের শিক্ষার পদ্ধতির উপর জায়গা বিশেষে। তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বিভিন্ন কারণে এর চাহিদা ক্রমাগতই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর সত্যতা যাচাই করার জন্য দু’টি Approach-এর উপর নির্ভর করতে হয়। আর সেগুলি হলাে— বর্ণনা, গু এবং ব্যাখ্যা

2) তুলনামূলক আলােচনা (Comparative Studies) : কতকগুলি তথ্য প্রয়ােজন এবং তা প্রাথমিক, গৌণ ও সাহায্যকারী উৎস থেকে সংগ্রহ করে তার প্রকৃত। অর্থ, ঘটনার বিশদ বিবরণ তুলনামূলক শিক্ষার গবেষণার কাজকে আরও সুদৃঢ় করে। তােলে এবং যা পরবর্তীতে ছাত্রদের প্রয়ােগ করে সুফল পাওয়া যায়। এছাড়া তুলনা ও বিবৃতির মাধ্যমে শিক্ষার উন্নতিসাধন করা হয়।

3) সমস্যা পদ্ধতি : তুলনামূলক শিক্ষার মধ্যে Problem Approach হলাে সম্ভাব্য। নীতি। সমস্যা সাধারণভাবে Scope, Significance ও resource-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—শিক্ষক শিক্ষণে তুলনামূলক গবেষণা দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলাে 1990 সালে গ্রহণ করে। দেখা যায় জাপান, চিন ও ভারতে দ্বিতীয় ভাগ হিসাবে ইংরেজি শিক্ষা অথবা বয়স্কশিক্ষার বিকাশে আমেরিকা রাশিয়ান শিক্ষার থেকে। অনুপ্রাণিত হয়েছিল।

Problem Approach একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। Problem identification, Framing hypothesis, during conclusion | Stating recommendation 62169 এই তুলনামূলক গবেষণা শুরু হয়। এটি অনুসরণ করে তথ্যসংগ্রহ, তথ্যের সমালােচনা, প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের বিবৃতি মানচিত্র প্রভৃতি তৈরি হয়। পাশাপাশি স্থাপন ও তুলনা করা হলাে সীমিত পথ। Interpretation-এর গবেষণার ফল এই Approach-কে সাহায্য

4) সামগ্রিক বিশ্লেষণ : সমগ্র বিশ্লেষণ হলাে গােটা বিশ্বের বিশ্লেষণ। এই গবেষণার জন্য সাধারণ নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। প্রত্যেকটি জাতি শিক্ষার উন্নতিসাধনের জন্য সচেষ্ট। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য অনেক জাতি শিক্ষাগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। সমগ্র বিশ্লেষণ গবেষকের Anthentic এবং যত্ন সহকারে অধ্যয়নের উপর। নির্ভর করে। মাত্র দেশের শিক্ষার পদ্ধতির উপর বিশেষ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। বিভিন্ন কারণে এর। চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এর সত্যতা যাচাই করার জন্য দুটি approach-এর উপর নির্ভর করতে হয়। আর সেগুলি হলাে— বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা।

তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির বর্ণনা :

বর্ণনামূলক পদ্ধতির প্রাথমিক কাজ হলাে—শিক্ষা প্রক্রিয়ার বর্ণনা তথা শিক্ষা প্রক্রিয়া চালানাের উপযুক্ত প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা, জীবনব্যাপী শিক্ষার। প্রকৃতি বা গুণগত মান, শিক্ষার সাংস্কৃতিক প্রভাব, বিদ্যালয়ে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের। ভাষা শিক্ষায় বাধা, শিক্ষায় সমসুযােগ এবং বিভিন্ন দেশের শিক্ষা পুনর্গঠনের ভিত্তি সম্পর্কে আলােচনা করা।

তুলনামূলক শিক্ষাবিদরা শিক্ষাগত তথ্য সংগ্রহের জন্য কতকগুলি উৎসের কথা বলেছেন। যেমন—পাঠ্যবিষয়সমূহ, বিভিন্ন গ্রন্থাগারে সঞ্জিত পুস্তক, বেতার ও দূরদর্শন, বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের ফলে প্রাপ্ত ঘটনাপঞি, বাস্তব ঘটনা, ঐতিহাসিক ঘটনাপঞ্জি প্রভৃতি। তুলনামূলক শিক্ষার সাহিত্য অন্যান্য বিষয়ের মতােই প্রধানত তিনটি উৎসের উপর নির্ভর করে। প্রাথমিক উৎস, @ গৌণ উৎস, ® সাহায্যকারী উৎস।

1) প্রাথমিক উৎস : প্রাথমিক উৎস হলাে প্রত্যক্ষ দর্শনের ফলে লিখিত বিষয়। কয়েকটি প্রাথমিক উৎস হলাে—ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কর্তৃক লিখিত কোনাে তথ্য, কমিশনের রিপাের্ট, লিফলেট, প্রশাসনিক মেমাে, সার্কুলার নির্দেশ, জনমত দ্বারা প্রকাশিত হওয়া বই, প্রত্যেক দিনের সংবাদপত্র, জার্নাল, ম্যাগাজিন, সরাসরি ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত তথ্য সম্বলিত চিত্র এবং মানবীয় সম্পর্কের তথ্য। 

2) গৌণ উৎস : গৌণ উৎস বলতে বিভিন্ন বই, সংগৃহীত অনুচ্ছেদ এবং অন্যান্য বিষয়বস্তু। এখানে শিক্ষার্থীদের একটি বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে—যেন তারা। ভুল তথ্যের দ্বারা পরিচালিত না হয়। সেইজন্য তথ্য সংগ্রহ করার পর পুনরায় সেগুলির যথার্থতা বিচার করতে হবে। তাই সংগৃহীত তথ্যগুলিকে একটি সাম্যাবস্থায় আনার জন্য শিক্ষার্থীকে দেশীয় ব্যক্তিবর্গের লেখার সঙ্গে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের লেখাকে তাদের কাজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

3) সাহায্যকারী উৎস : বই, অনুচ্ছেদ এবং অন্যান্য লিখিত তথ্য যেগুলি সরাসরি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত নয় তাদের সাহায্যকারী উৎস বলে। লিখিত তথ্যগুলি বাদেও বৈদ্যুতিক মাধ্যমের দ্বারা সংগৃহীত তথ্যগুলিও যথেষ্ট উপযােগী।

এই সমস্ত উৎস থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে তা লিখতে হবে। তারপর প্রতিবেদনে লিখতে হবে ঘটনা, কারণ, প্রক্রিয়া, কার্যকলাপ, সমস্যা, সংস্কৃতির গুরুত্ব, শিক্ষকের বৃত্তিমূলক বা পেশামূলক জীবন প্রভৃতি সম্বন্ধে। প্রতিবেদনটি হতে হবে সঠিক ও নির্ভুল।। এই প্রতিবেদনে ধাপে ধাপে তথ্যগুলােকে ঐতিহাসিক, ভৌগােলিক, সামাজিক, এবং

 রাজনৈতিক পরিবেশের নিরিখে বিচার করে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পাঠক্রম ও শিখনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, মূল্যায়নের পদ্ধতি, শিক্ষাব্যবস্থার পরিকাঠামাে, শিক্ষার শিখন প্রভৃতির নিরিখে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপদ্ধতি আলােচনা করতে হবে।

তুলনামূলক বিবৃতি প্রস্তুত করার ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের পঠনপাঠনের মানচিত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয়ের জনসংখ্যার শতকরা হার, পৃথিবীতে প্রাথমিক শিক্ষার হার, শিক্ষক- শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রভৃতি জানা যায়। | তুলনামূলক গবেষণার ক্ষেত্রে বর্ণনাই হলাে প্রাথমিক বিষয়। বিবৃতি বা বর্ণনা তথ্যগুলির প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবিচার করে থাকে। তবে এই বিবৃতিমূলক তথ্যগুলি 50 পৃষ্ঠার অধিক হওয়া উচিত নয়। তাই এই ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য সংগ্রহের গুরুত্ব অপরিসীম।

তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা :

তথ্যের বিবৃতি তুলনামূলক গবেষণার শেষ নয়। এটি শুধুমাত্র কাজ শুরু করে। এরপর Interpretation বা ব্যাখ্যা গভীরভাবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। বিবৃতি পৌছে দেয় উত্তর থেকে ‘What type’ প্রশ্নে। একজন ছাত্র ‘How’ এবং why এই প্রশ্নের ভিত্তিতে তুলনামূলক শিক্ষার মূল্যায়ন ঘটাবে বা সত্যতা নিরূপণ করবে। তুলনামূলক শিক্ষায় প্রতিটি ছাত্রকে শিক্ষার সমস্ত দিকের অর্থাৎ সমাজতত্ত্ব, মনঃস্তত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, মানব যােগাযােগ, প্রশাসন ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে বিশদভাবে জানতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment