তুলনামূলক শিক্ষায় আধ্যাত্মিক উপাদান আলোচনা করো

তুলনামূলক শিক্ষায় আধ্যাত্মিক উপাদান আলোচনা করো

উত্তর :

তুলনামূলক শিক্ষায় আধ্যাত্মিক উপাদান

বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপদ্ধতির ওপরে ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক উপাদান প্রভাব বিস্তার করে। এই আধ্যাত্মিক উপাদানগুলি হলাে — 1) দার্শনিক উপাদান (Philosophical factors), 2) ধর্মীয় উপাদান (Religious factors), 3) নৈতিক উপাদান (Most factors)।

তুলনামূলক শিক্ষার দার্শনিক উপাদান:

দর্শনকে মানবজীবনের সামগ্রিক ধারণা বলা যেতে পারে। শিক্ষাপদ্ধতির ওপরে এর একটি বিশেষ প্রভাব আছে। শিক্ষা জীবনদর্শন থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। কারণ জীবনের প্রয়ােজনীয়তা পরিপূর্ণ করাই দর্শনের কাজ। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল গ্রিস দেশের শিক্ষাপদ্ধতিকে তাঁদের প্রবর্তিত দর্শনের মাধ্যমে প্রভাবিত করেছিলেন এবং দেশের শাসন ব্যবস্থাকেও প্রভাবিত করেছিলেন। চিনের শিক্ষাপদ্ধতি কমিউনিস্ট দর্শন দ্বারা প্রভাবিত। প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাও বেদের দার্শনিকতত্ত্ব, গুরুকূল প্রথার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। বৌদ্ধ যুগের শিক্ষাপদ্ধতি বৌদ্ধদর্শন দ্বারা পরিচালিত হতাে ‘বিহার’ ও ‘মহাবিহারগুলিতে। আধুনিক ভারতেও Anglo-Vedic College গুলি আর্যসমাজের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ঋষি অরবিন্দের দর্শন ও পরবর্তী যুগে বিবেকানন্দ ও রামকৃয় মিশনের দর্শনও শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। গান্ধিজির ‘সর্বোদয় সমাজ গঠনের দর্শন আধুনিক ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। সুতরাং তুলনামূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে দার্শনিক উপাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। শিক্ষাকে জীবনের দর্শন থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়। কারণ দর্শনের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণতা লাভ সম্ভব।

ধর্মীয় উপাদান :

ধর্ম প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। ইতিহাস পর্যালােচনা করলেই আমরা জানতে পারি, ধর্মের জন্য বহু মানুষ আত্মত্যাগ করেছে। যেকোনাে দেশেরই শিক্ষারীতি ধর্মীয় অনুশাসন থেকে মুক্ত নয়। প্রাচীন ভারতের শিক্ষাপদ্ধতি ধর্মীয় অনুশাসন থেকে মুক্ত ছিল না। প্রাচীন ভারতের শিক্ষাপদ্ধতি ধর্মীয় অনুশাসন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। ইউরােপ, আমেরিকা ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশের ক্ষেত্রে একথা বহুলাংশে প্রযােজ্য। যদিও উনিশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের শুরুতে ধর্ম বিষয়টি শিক্ষাপদ্ধতির ওপরে আর ততখানি আধিপত্য রাখতে পারেনি। মানবতাবাদী দর্শন ও যুক্তিবাদী জ্ঞানবিজ্ঞান প্রয়ােগ ও বিচারের পথ যত বেশিভাবে শিক্ষার প্রণালী ও পাঠক্রমে প্রবেশ করেছে, ততই ধর্মীয় সংস্কারের ভিত্তিকে দৃঢ় রাখবার জন্য শিক্ষার মূল্যবােধ ও পাঠক্রম নির্ধারিত হয়েছে। অপরদিকে ধর্মবােধ এক সাংস্কৃতিক ভাবধারায় জন্ম দেয়; এই ভাবধারা থেকে সঞ্চারিত হয় কিছু সমাজনৈতিক মূল্যবােধ, যা সকল ধর্মের মূল শিক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই মূল্যবােধ স্বতঃস্ফুর্ত শিক্ষাপ্রণালীর গতিপথকে নিয়ন্ত্রিত করে। যদিও শিক্ষা ধর্মীয় অনুশাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেয়েছে। একথা বলা যায় না।

নৈতিক উপাদান :

নৈতিকতা ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রকৃতপক্ষে ধর্মের মূল উদ্দেশ্যই হলাে মানুষের নৈতিক মানকে উন্নত করার জন্য বারে বারে উপদেশ দেওয়া। নৈতিকতার ধারণা শিক্ষাপদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। যেসব দেশ তাদের নীতিগত ঐতিহ্যে। বিশেষ মর্যাদা দেয় তারা চেষ্টা করে শিক্ষাও যেন তাদের নাগরিকদের নৈতিক মানকে উচ্চায়িত করার কাজে সহায়ক হয়ে ওঠে। যেকোনাে গণতান্ত্রিক দেশের শিক্ষাব্যবস্থা রচিত হয় নৈতিকতার মানদণ্ডে। জাপান, সুইজারল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, আমেরিকা প্রভৃতি গণতান্ত্রিক দেশেই শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণে নৈতিকতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলক শিক্ষায় এই নৈতিক উপাদান তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment