উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তা আলােচনা করাে

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তা আলােচনা করাে Class 12 | Education | 8 Marks

উত্তর:-

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষানীতি (1986)-তে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ

আমাদের দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষা যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতি কিছু বিরূপ সমালােচনা করেছে। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সে সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব করেছে, যা নীচে উল্লেখ করা হল— 

[1] উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহন: উচ্চশিক্ষার ব্যয় বহনের জন্য সরকার এবং উন্নয়নমূলক সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। 

[2] উচ্চশিক্ষায় ভরতির সুযােগ : স্নাতকোত্তর শিক্ষার ক্ষেত্রে কেবল উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ভরতির সুযােগ দেওয়া হবে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় যােগ্যতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীরাই ভরতির সুযােগ পাবে। 

[3] নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন: বিশেষ কারণ ছাড়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে না। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সংস্কার করা প্রয়ােজন। 

[4] মানােন্নয়নের জন্য বিশেষ সুযােগসুবিধা: উচ্চশিক্ষার মানােন্নয়নের জন্য প্রয়ােজনীয় কর্মসূচিগুলিকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষাকোর্সের কম্বিনেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে হবে। কাউন্সিল অব হায়ার এডুকেশনের মাধ্যমে রাজ্যস্থ পরিকল্পনা এবং উচ্চশিক্ষার মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে। শিক্ষা পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তনে প্রয়াসী হতে হবে। ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকের পারদর্শিতার মূল্যায়ন করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে সমস্ত পদ পূরণ করতে হবে। 

[5] বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযােগ : বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযােগ বৃদ্ধ এবং এর উচ্চমান বজায় রাখতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মধ্যে (বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে) এবং অন্যান্য সংস্থা কর্তৃক গবেষণার সঙ্গে সংযােগরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রান্ট কমিশন (UGC)-কে উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে স্বশাসিত কোনাে ব্যবস্থাপনায় জাতীয় গবেষণার সুযােগ সৃষ্টির অনুকুল প্রয়াসকে উৎসাহিত করা হবে।

[6] ভারত তত্বের গবেষণ: ভারত তত্ত্বের গবেষণায় মানবিক বিষয় ও সমাজবিজ্ঞান উপযুক্ত পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করবে| সমন্বয় এবং নীতির স্থায়িত্ব বৃদ্ধির স্বার্থে আন্তঃবিষয়সমূহের ওপর গবেষণার বিকাশ ও পারস্পরিক সুযােগসুবিধা বন্টনের জন্য সাধারণ কৃষি বিষয়ক, চিকিৎসা, প্রযুক্তি, আইন। ও অন্যান্য পেশার ওপর জাতীয় সংস্থা স্থাপন করতে হবে । 

[7] মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উচ্চশিক্ষার সুযােগ সবার। কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য NPE 1986-এ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা। উল্লেখ করা হয়। এই উদ্দেশ্যে 1985 সালে ইন্দিরা গান্ধি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। (IGNOU) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। IGNOU-এর সার্বিক উন্নয়নে নজর। দেওয়ার কথাও এই শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়াও, এই শিক্ষানীতিতে প্রতিটি রাজ্যে এই ধরনের মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় খােলার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করা হয়। এই ধরনের মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভরতির জন্য কোনাে বয়সের বাধা থাকবে না | শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পাঠদান করা হবে। চাকরিরত অবস্থায় অথবা যারা উচ্চশিক্ষার সুযােগ পাননি তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে অধ্যয়ন করতে পারবেন। 

[8] ডিগ্রিকে চাকরি থেকে বিচ্ছিন্নকরণ: 1968 সালে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়, একজনের কোন্ বিষয়ে কতটা জ্ঞান আছে, সেটি তার ডিগ্রি দেখে বলা সম্ভব নয়। সুতরাং, চাকুরির ক্ষেত্রে ডিগ্রি অবশ্য প্রয়ােজনীয় বলে বিবেচিত হবে না। চাকুরিতে নিয়ােগকর্তারা প্রয়ােজনমতাে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাই করে নেবেন।তবে অধ্যাপনা, গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসা, আইন ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলিতে ডিগ্রির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। মানবিক বিষয়, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের চাকরি ও পদের প্রয়ােজন অনুসারে ডিগ্রির মর্যাদা থাকবে। কাজের বিভিন্ন দিক খুলে গেলে উচ্চশিক্ষার ওপর চাপ কমবে ও পরীক্ষায় ব্যর্থতাজনিত অপচয়ও কম হবে৷ একমাত্র উপযুক্ত মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা নেওয়ার সুযােগ পাবে।

[9] গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়: গান্ধিজির চিন্তাধারা ও আদর্শ অনুসরণ করে নতুন ধারার গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। গান্ধিজির বুনিয়াদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া প্রয়ােজন৷

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment