উত্তরের সমভূমি অঞলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।  অথবা,ভারতের যে-কোনাে একটি প্রাকৃতিক বিভাগের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।

উত্তরের সমভূমি অঞলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও। 
অথবা,ভারতের যে-কোনাে একটি প্রাকৃতিক বিভাগের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও। Class 10 | Geography | 5 Marks

উত্তর:-

উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি :  উত্তরে হিমালয় পার্বত্যভূমি এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী এলাকায় গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রম্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে, তাকে বলা হয় উত্তরের সমভূমি অঞ্চল। স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে এই সুবিস্তৃত অঞলটিকে চারটি উপ-অঞলে ভাগ করা যায়—

1. রাজস্থান সমভূমি :
(i) আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমাংশের রুক্ষ ও শুষ্ক বালিপূর্ণ মরুময় সমতল এলাকাটি রাজস্থান সমভূমি নামে পরিচিত। এর পশ্চিম ভাগের বিস্তীর্ণ এলাকার নাম মরুস্থলী। এটি থর মরুভূমির অংশরূপে পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত হয়েছে। 
(ii) মরুস্থলীর প্রস্তরময় অঞ্চলের নাম হামাদা। সমান্তরাল বালিয়াড়িগুলির মধ্যবর্তী অবনমিত অংশে বায়ুপ্রবাহের অপসরণজনিত কারণে সৃষ্ট গহ্বরে লবণাক্ত জলের হ্রদ দেখা যায়। 
(iii) মরুভূমির চলমান বালিয়াড়িগুলিকে বলে ধ্রিয়ান
(iv) সমভূমির পূর্বভাগের অপেক্ষাকৃত কম বালুময় তৃণভূমি বাগার নামে পরিচিত। এখান দিয়ে লুনি নদী প্রবাহিত হয়েছে। 
(v) বাগারের পূর্বাংশে আরাবল্লি থেকে আগত ছছাটো ছােটো নদী তাদের দু-পাশে পলি সঞ্চয় করে যে প্লাবনভূমির সৃষ্টি করেছে, সেগুলিকে বলা হয় রােহি। 
(vi) জয়সলমেরের কাছের সমভূমিতে কয়েকটি ছােটো ছােটো পাহাড় দেখা যায়। 
(vii) থর মরুভূমির নীচু অংশে এবং জয়সলমের শহরে কয়েকটি লবণাক্ত জলের হ্রদ দেখা যায়। এখানকার সম্বর হ্রদ হল সমগ্র রাজস্থান সমভূমির বৃহত্তম হ্রদ।
(vii) যেসব স্থানে ভৌমজলস্তর ভূপষ্ঠের কাছাকাছি থাকে, সেখানে কিছু পরিমাণ খেজুর, পামজাতীয় গাছ ও তৃণ জন্মায়। এইসব স্থানকে মরুদ্যান বলে।

2. পাঞ্জাব বা শতদ্রু সমভূমি :
(i) রাজস্থান সমভূমির উত্তর-পূর্বে এবং যমুনা নদীর পশ্চিমে যে বিস্তৃত সমতল এলাকা আছে, তাকে বলা হয় পাঞ্জাব সমভূমি। এই সমভূমি পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির অন্তর্গত। 
(ii) সিন্ধুর উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী ও চন্দ্রভাগা পলি সঞ্চয় করে এই উর্বর সমভূমিটি তৈরি করেছে।
(iii)  সমগ্র সমভূমিটির গড় উচ্চতা প্রায় 200-240 মি।
(iv) এই সমভূমির দক্ষিণ, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু পাহাড়ি ভূমি আছে।

3. গঙ্গা সমভূমি :
(i) ঐ গঙ্গা সমভূমি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিস্তৃত। পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে শুরু করে পূর্বে গঙ্গা বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এই সমতলভূমিটি গঙ্গা এবং তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীর পলি সঞ্জয়ের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে। 
(ii) এই সমভূমির নদীতীরবর্তী কোনাে কোনাে এলাকায় প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি দেখা যায়। 
(iii) সমগ্র এলাকাটি পশ্চিম থেকে পূর্বে বা দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু।
(iv) এখানকার নতুন পলিগঠিত এলাকাসমূহকে বলা হয় খাদার এবং পুরােনাে পলিগঠিত এলাকাগুলিকে বলা হয় ভাঙ্গার। 
(v)  সমভূমির উত্তর প্রান্তে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নুড়ি ও বালিপূর্ণ সচ্ছিদ্র সংকীর্ণ অংশকে বলা হয় ভাবর
(vi)  ভাবরের দক্ষিণে জলাভূমিপূর্ণ, বন্যাপ্রবণ এবং জঙ্গলে ঢাকা যে সমতল ক্ষেত্রটি আছে তার নাম তরাইভূমি
(vii) গঙ্গা সমভূমির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গা বদ্বীপ গড়ে উঠেছে।
(viii)  গঙ্গা সমভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়— 1. উচ্চাঙ্গ সমভূমি (গঙ্গা সমভূমির উত্তরপ্রদেশের অংশ), 2. মধ্যগগা সমভূমি (উত্তরপ্রদেশের পর্বাংশ এবং বিহারের উত্তরাংশের সমভূমি) এবং 3. নিম্ন গঙ্গা সমভূমি (উত্তরবঙ্গের পার্বত্য ভূমি এবং পুরুলিয়া জেলার মালভূমি বাদ দিয়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ)।

চিত্র : উত্তরের সমভূমি অঞ্চল 

4. অসম বা ব্রহ্মপুত্র সমভূমি:
(i) অসম রাজ্যে ব্ৰত্মপুত্র নদের দু-পাশে যে সংকীর্ণ সমতলক্ষেত্রটি আছে, তার নাম ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
(ii) সমভূমিটি প্রায় 1000 কিমি দীর্ঘ এবং 80-100 কিমি প্রশস্ত।
(iii) সমভূমিটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢালু এবং এর ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বিনুনির মতাে একেঁবেৰ্কে প্রবাহিত হয়েছে।
(iv) এখানে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে অসংখ্য বালুচর বা দ্বীপ গঠিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে মাজুলি দ্বীপটি ভারতের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment