ভাব সম্মিলন আসলে কী? পাঠ্য ‘ভাব সম্মিলন’ পদটিতে রাধার আনন্দের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো। MARK 2 + 3 = 5 | Class 11 Bengali | ভাব সম্মিলন
উত্তর :
কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর আর বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। কিন্তু বৈয়ব মহাজনরা রাধার বিরহ কাতরতা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন, এই মিলনই হল ভাব সম্মিলন।
→ আমাদের পাঠ্য ‘কি কহব রে সখি আনন্দ ওর’ পদটি ভাবোল্লাস বা ভাব সম্মিলন পর্যায়ের একটি বিখ্যাত পদ। পদটির মধ্যে কৃয়ের সঙ্গে মিলনে উল্লসিতা রাধার আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে। আনন্দে আত্মহারা রাধা তাঁর সখিকে বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা নেই। কারণ আর তিনি কোনোদিনই প্রিয়কে হারাবেন না। কৃষ্ণ চিরদিনের জন্য বন্দি হয়েছেন তাঁর ঘরে। বিরহ অবস্থায় রাধাকে বাঁধভাঙা চাঁদের হাসি যে পরিমাণ দুঃখ দিয়েছে, আজ প্রিয়-মুখ দর্শনে তিনি তত সুখই লাভ করলেন। রাধাকে যদি কেউ আঁচলভরে মহারত্ন দান করেন, তবুও তিনি তাঁর প্রিয়তমকে দূরদেশে পাঠাবেন না। কৃয়কে আর দূরদেশে না-পাঠানোর দৃঢ় সংকল্প থেকেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে পদটি ভাবোল্লাসের। দীর্ঘ গ্রীষ্মের পর বর্ষার বারিধারায় জীব ও উদ্ভিদ জগৎ যেমন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে, তেমনি দীর্ঘ বিরহের পর প্রিয়-সান্নিধ্য রাধাকে আকুল করে তুলেছে। কৃষ্ণের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককেও রাধা তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনের সঙ্গে তুলনা করে নতুন মাত্রা দান করেছেন। কৃষ্ণ তাঁর কাছে শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষাকালের ছাতা, আর অকুল সমুদ্রের তরণী। এখানেও রাধার একাগ্র-তন্ময়তা কৃয়প্রেমের অপূর্ব ব্যাখ্যা ভাবসম্মিলনের পদকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। এই উপমার মালা ব্যবহার করেও কবি রাধার প্রেমকে যেন মর্ত্যচারী করে তুলেছেন। এক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে প্রিয়তমকে পাওয়ার আনন্দে রাধা সব কিছু বিস্মৃত হয়েছিলেন, জড়সত্তার সঙ্গে প্রাণসত্তার পার্থক্য বোধও লুপ্ত হয়েছিল তাঁর। বৈয়ব তত্ত্ব মেনে বিদ্যাপতি ভাবোল্লাসের পদ রচনা করেননি। তবুও রাধার অন্তরে তিনি প্রিয় মিলনের যে অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছিলেন তা কাব্যিক প্রগাঢ়তায় আস্বাদনীয় হয়ে উঠেছে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।