ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের অভিমত কী ছিল?

ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের অভিমত কী ছিল? Class 12 | Education (শিক্ষাবিজ্ঞান) | 8 Marks

উত্তর:

ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে রাধাকন্ত্রণ কমিশনের অভিমত

রাধাকৃষণ কমিশন ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যম কী হবে, এই বিষয়েও বিশেষভাবে আলােকপাত করেছে।

         ব্রিটিশ শাসনে ইংরেজি ছিল ভারতবাসীর চরম শত্রুর ভাষা। তাই শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে প্রাধান্য না দিয়ে, ভারতীয় কোনাে ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রতি অধিকাংশেরই মনােভাব ছিল। ভারতীয় জনসাধারণের এই আবেগ বা আকাঙ্ক্ষা তখন স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিল। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দাবি উঠেছিল — একটি ভারতীয় ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের প্রতি। কিন্তু বহু ভাষাভাষী মানুষের দেশ এই ভারতে ‘ভাষার বৈচিত্র্য সেই পথে। প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

        সে সময়ে ভারতে প্রায় তিনশােরও বেশি ভাষা প্রচলিত ছিল। ওই ভাষাগুলির মধ্যে সাহিত্য-সম্পদসমৃদ্ধ ও শিক্ষার মাধ্যম হওয়ার যােগ্য ভাষার সংখ্যা ছিল প্রায় বারােটি। ভারতের বেশির ভাগ অংশের মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলত। কিন্তু সেইসময় হিন্দি ভাষা দেশের প্রশাসন, বিচারকার্য ও আইন ব্যবস্থা পরিচালনার যােগ্যতা অর্জন করেনি। অন্যদিকে, দেশের শিক্ষিত মানুষজনের কছে ইংরেজি ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা সে সময়ে।

জাতীয়তাবাদের বিকাশে ইংরেজি ভাষা প্রাধান্য পেয়েছিল। তাই সরকারি কাজকর্মের জায়গা, অফিস-আদালত এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র থেকে ইংরেজিকে অপসারণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। অথচ ইংরেজিকে অপসারন দিয়ে অন্য একটি ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা লাভের জন্য সমৃদ্ধ হতে হবে, কারণ জাতীয় সংহতি বজায় রাখার জন্য ভাষা একটি অতি প্রয়ােজনীয় অস্ত্র।

      আবার, আধুনিক যুগে কেবল জাতীয় সংহতি বজায় রাখলেই চলতে না, চাই’ আন্তর্জাতিকতাবােধের বিকাশ। এর জন্য প্রয়ােজন ইংরেজি ভাষা। কারণ ইংরেজি হল বিশ্বভাষা—যাকে কোনাে মতেই বাদ দেওয়া সম্ভব নয়।

      এমতাবস্থায়, ভাষা সম্পর্কে বিভিন্ন দিক পর্যালােচনা ও বিশ্লেষণের। গরে জাতীয় সংহতি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কমিশন। যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নথিভুক্ত করে, সেগুলি হল— 

[1] শব্দভান্ডারের উন্নয়ন: বিভিন্ন উৎস থেকে শব্দ সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রীয় । একটি ভাষার শব্দভাণ্ডারের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। 

[2] পরিভাষা গ্রহণ; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে যেসব ভাষা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সেগুলিকে ভারতীয় পরিভাষায় গ্রহণের ব্যবস্থা। করতে হবে। 

[3] শিক্ষার মাধ্যম: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজির পরিবর্তে সংস্কৃত বাদে। অন্য একটি ভারতীয় ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে৷ 

[4] ত্রিভাষাচর্চা: উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে মােট তিনটি ভাষা চর্চা করতে হবে। এগুলি হল— i. মাতৃভাষা/আঞ্চলিক ভাষা, ii. রাষ্ট্রভাষা এবং iii. ইংরেজি ভাষা৷ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষায় বা আঞ্চলিক ভাষায় বিষয়বস্তু আলােচনা করা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রভাষা যাতে ব্যবহৃত হতে পারে, তার জন্য সরকারি স্বীকৃতি থাকবে| 

[5] দেবনাগরী লিপির ব্যবহার : রাষ্ট্রভাষা লেখার ক্ষেত্রে দেবনাগরী লিপি ব্যবহার করতে হবে। 

[6] পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন: আঞ্চলিক ভাষা এবং রাষ্ট্রভাষার উন্নতিবিধানের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভাষাতত্ত্ববিদ এবং বিজ্ঞানীদের | নিয়ে বাের্ড গঠন করে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। 

[7] ইংরেজিচর্চা: মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার্থীরা যাতে ইংরেজি চর্চা করার সুযােগ পায়, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment