বিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks
উত্তর:
বিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটি :
আধুনিক সমাজব্যবস্থায় শিশুর জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য বিদ্যালয় অপরিহার্য। গৃহের সীমিত পরিবেশে থেকে বিদ্যালয়ই শিশুকে মুক্তি দেয়। আবার বিদ্যালয়ই তার কাছে বৃহত্তর সমাজজীবনের পটভূমিকা তুলে ধরে। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিদ্যালয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম। কিন্তু পরিকাঠামােগত ত্রুটির কারণে বিদ্যালয় সবসময় সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিগুলি হল :
[1] সম্পূর্ণ সামাজিক বিকাশ সম্ভব নয় : বিদ্যালয়ের সমাজকেন্দ্রিক দায়িত্বে বলা হয়, বিদ্যালয়ের কাজ শিক্ষার্থীর সামাজিক বিকাশে সহায়তাদান করা। কিন্তু বিদ্যালয় জীবনের স্বল্প পরিসরে সব ধরনের সামাজিক বিকাশ সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার পৃথক একটি সামাজিক পরিবেশ।
[2] একঘেয়ে যান্ত্রিক শিক্ষা : বিদ্যালয়ের চার দেয়ালে ঘেরা পরিবেশের শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে কৃত্রিম বা যান্ত্রিক শিক্ষা। এই শিক্ষা প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীকে আনন্দদান করতে পারে না। এখানে পুস্তকনির্ভর কিছু তথ্য যান্ত্রিকভাবে মুখস্থ করিয়ে শিক্ষার্থীকে পরীক্ষারূপী বৈতরণি পারাপারে সাহায্য করা হয় মাত্র।
[3] নম্বরনির্ভর শিক্ষা : বর্তমানে বিদ্যালয়গুলিতে পরীক্ষায় বেশি নম্বর প্রাপ্তির ওপরই গুরুত্বদান করা হয়। এই নম্বর পাওয়ার তাগিদে তারা যেভাবে চাপের মুখে পড়ে, তাতে তাদের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হয়। অনেকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলে।
[4] কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা যুক্ত শিক্ষা : বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সারাক্ষণ কঠোর নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হয়। এতে তাদের স্বাধীনভাবে শেখার ক্ষমতা ও প্রবণতা নষ্ট হয়। অনেক সময় এ হেন কঠোর শৃঙ্খলা শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী হতে নিরুৎসাহী করে।
[5] ব্যক্তিগত বৈষম্য অবহেলিত : বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণিতে একই সময়ে একই পাঠক্রমের ভিত্তিতে একই পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঠ পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সকল শিক্ষার্থী একরকমের হয় না। তাদের রুচি, পছন্দ-অপছন্দ, আগ্রহ, প্রবণতা, ক্ষমতা ইত্যাদিতে অনেক পার্থক্য থাকে। ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অনেকে বিদ্যালয় যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
[6] ব্যয়বহুল শিক্ষা : বিদ্যালয়ের শিক্ষাতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক ক্রয়, খাতাপত্র সংগ্রহ, ভরতির জন্য নির্দিষ্ট বেতন ইত্যাদি বিষয় বেশ কিছু পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থী ওই পরিমাণ অর্থ জমা দিতে পারে না। ফলে অনেককেই বিদ্যালয়ের পাঠ বন্ধ করে দিতে হয়।
[7] পরীক্ষানির্ভর শিক্ষা : বিদ্যালয়ের শিক্ষা যেহেতু নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা, তাই এতে প্রতিটি বিষয়ে পাঠক্রমের ভিত্তিতে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। প্রতিটি বিষয়ে বছরে তিনবার ঘটা করে পরীক্ষা তাে হয়েই থাকে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক পরীক্ষারও ব্যবস্থা থাকে। পরীক্ষার চাপে বহু শিক্ষার্থী হাঁপিয়ে ওঠে। তাদের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হয়।
[8] সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির অভাব : ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক বিকাশের জন্য তত্ত্বগত পাঠের পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির প্রয়ােগ দরকার হয়। পরিকাঠামােগত ত্রুটির কারণে বহু বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলির আয়ােজন করতে পারে না। ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রতি নেতিবাচক মনােভাব গড়ে ওঠে।
[9] প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব : বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের কার্যকারি শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্তসংখ্যক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের দরকার। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে প্রতিটি বিদ্যালয়েরই শিক্ষকের অভাব বা ঘাটতি লক্ষ করা যায়। ছাত্রছাত্রীদের ওপর তার প্রভাব পড়ে। এটিও বিদ্যালয়ের একটি সীমাবদ্ধতার দিক।
[10] উপযুক্তসংখ্যক বিদ্যালয়ের অভাব : ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম হলে এক-একটি বিদ্যালয়ের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপ অনেক সময় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মসূচি ও সুস্থির অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।