বিদ্যালয়ের সমাজকেন্দ্রিক কাজগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে Class 11 | Education (শিক্ষার বিভিন্ন রূপ) 8 Marks
উত্তর:
বিদ্যালয়ের সমাজকেন্দ্রিক কাজ :
শিক্ষার্থীর বিভিন্ন ধরনের বিকাশ, শিক্ষামুলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনাদান, মূল্যায়ন, সুঅভ্যাস গঠন ইত্যাদি কাজগুলি ছাড়াও বিদ্যালয়ের কতকগুলি সমাজকেন্দ্রিক কাজ বা দায়িত্ব থাকে। নীচে সেগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হল :
[1] সামাজিকীকরণ : বিদ্যালয়ে যেসকল শিক্ষার্থী পাঠক্রমের জন্য উপস্থিত হয়, তারা প্রত্যেকেই মানবসমাজের একজন সদস্য। সমাজে সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে গেলে প্রত্যেককে কিছু রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। বিদ্যালয় পাঠক্রমের অন্তর্গত বিভিন্ন বিষয় অনুশীলনের সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সামাজিক রীতিনীতির ও আচার-আচরণের প্রাথমিক পাঠদান করে থাকে। ফলে বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন কালেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রথা, নিয়মকানুন মূল্যবােধ ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হয়। এইভাবে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণে সহায়তা করে।
[2] সামাজিক অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ : সমাজের বয়স্ক মানুষেরা যেসকল অভিজ্ঞতা নিজের জীবনে অর্জন করেছেন বা যেসকল ঐতিহ্য পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছেন বিদ্যালয় সেই মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যগুলিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। বিদ্যালয়ের মাধ্যমেই সমাজের বর্তমান প্রজন্ম তাদের শিক্ষাধারা, অভিজ্ঞতা এবং ঐতিহ্যকে ভাবীকালের নাগরিকদের হাতে তুলে দেয়।
[3] অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্যের সলিন : বিদ্যালয় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে সেগুলি সঞ্চালনের ব্যবস্থাও করে। পাঠক্রম ও পাঠ্যসূচির সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে অভিজ্ঞতা ও ঐতিহ্য সঞ্চালনের কাজটি বিদ্যালয়েই ঘটে থাকে।
[4] ঐতিহ্যের উন্নয়ন : বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নানান ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ঘটায়। অতীতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আধুনিক সময়ােপযােগী করার জন্য তার উন্নয়নের দরকার হয়। এই উন্নয়ন মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিদ্যালয়গুলি এই কাজে অগ্রণীর ভুমিকা পালন করে।
[5] গণতান্ত্রিক ভাবধারার বিকাশে সহায়তা : যে-কোনাে দেশের সমাজব্যবস্থায় এবং ব্যক্তিজীবনে ঐক্য, সংহতি, সাম্য এবং শৃঙ্খলা বিশেষভাবে দরকার। বিদ্যালয় এই প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলির সার্থক রূপায়ণের জন্য লক্ষ্য স্থির করে, যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্মশৃঙ্খলা, সাম্যবােধ এবং গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা ও তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক বােধ জাগ্রত করা বিদ্যালয়ের একটি সমাজকেন্দ্রিক কাজ।
[6] জাতীয় সংহতি ও আন্তর্জাতিকতাবােধের বিকাশে সহায়তা : বিদ্যালয়ে ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা একত্রে পঠনপাঠন করে। এর ফলে তাদের মধ্যে জাতীয় সংহতি বজায় থাকে। এই বােধ থেকেই ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিকতাবােধের বিকাশ ঘটে।
[7] পরিবার ও বিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পর্ক : কোনাে নির্দিষ্ট কমিউনিটির মধ্যে বিভিন্ন পরিবার বসবাস করে। ওই পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিদ্যালয় গড়ে তােলা হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর জোগান আসে কমিউনিটির অন্তর্গত বিভিন্ন পরিবার থেকে। ফলে পরিবার, বিদ্যালয় এবং কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সুসম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।