কৈশোর বলতে কি বোঝ | কৈশোরের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য

কৈশোর বলতে কি বোঝ | কৈশোরের মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য

উত্তর : 

কৈশাের :

কৈশােরের বয়সকাল হল 12 থেকে 20 বছর। মনােবিদ জারসিল্ডের মতে, কৈশাের হল এমন একটি বয়সের পর্যায় যে-সময়ে ছেলেমেয়েরা মানসিক, প্রক্ষোভিক, সামাজিক ও শারীরিক দিক দিয়ে বাল্যকাল থেকে বয়সকালের পথে অগ্রসর হয়। 

কৈশােরের মানসিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য :

কৈশােরকালে প্রধান মানসিক পরিবর্তন দেখা যায় ছেলেমেয়েদের অনুভূতির জগতে। দেহের পরিবর্তন, ইন্দ্রিয় শক্তির পূর্ণতা লাভ এবং যৌনগ্রন্থিগুলির পরিপূর্ণ বিকাশ এ সময় মানসিক স্তরে এক বিরাট আলােড়ন সৃষ্টি করে। এই সময়কার মানসিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 

[1] ভাবালু ও আবেগপ্রবণতা গুণের বিকাশ : এইসময় ছেলেমেয়েরা ভাবালু ও আবেগপ্রবণ হয়। তারা নানা আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। মনে মনে কোনাে মহাপুরুষ বা বীরের আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করে। এই বয়সে তাদের মধ্যে বীরপূজার প্রবণতা দেখা দেয়। 

[2] স্মৃতি ও কল্পনার বিকাশ : এইসময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্মৃতি ও কল্পনা শক্তি বিকশিত হয়। 

[3] সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্য অর্জন : এই সময়ে ছেলেমেয়েরা যে-কোনাে বিষয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার পাশাপাশি যুক্তি ও বিচার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। 

[4] নীতিবােধের বিকাশ : এই বয়সে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে নীতিবােধের ধারণা গড়ে ওঠে। 

[5] সামাজিকীকরণের সামর্থ্যের বিকাশ : কৈশােরকালে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের মধ্যে যুক্তি, বিশ্লেষণ ও সামাজিকীকরণের সামর্থ্যের বিকাশ ঘটে। 

কৈশােরের বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য :

কৈশােরকালে ছেলেমেয়েদের বুদ্ধির চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। তবে এই বয়সে বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে গতি ও প্রকৃতির মধ্যে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। আধুনিক মনােবিদদের মতে,বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে একটি চরম সীমা থাকে। বড়ােজোর 18 বছর বয়স পর্যন্ত বুদ্ধির বিকাশ চলে। কিন্তু কৈশােরকাল 12 থেকে শুরু হয়ে 20–21 বছর বয়স পর্যন্ত চলতে পারে। সুতরাং কৈশােরকাল বুদ্ধির চরম বিকাশের কাল না-হলেও এ সময়ই যে, বুদ্ধি বিকাশের প্রশস্ত ক্ষেত্র সেবিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই। এই স্তরের বৌদ্ধিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— 

[1] বৌদ্ধিক বিকাশ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় : এই পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের সব ধরনের বিমূর্ত ধারণা গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। যেসকল ধারণা কৈশােরের আগে পর্যন্ত অস্পষ্ট ছিল যেমন জীবের জন্মমৃত্যুর ঘটনা, স্ত্রী-পুরুষের প্রেম ইত্যাদি, সেগুলি এই পর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বুদ্ধির বিকাশের কারণে ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ধরনের সৃজনাত্মক কাজে অংশগ্রহণের জন্য অগ্রসর হয়।

[2] বুদ্ধির পরিপক্কতার প্রকাশ ঘটে : এই পর্যায়ে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ, সামাজিক আচার-আচরণ ও চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে বুদ্ধির পরিপক্বতা প্রকাশিত হতে থাকে। এইসময় ছেলেমেয়েরা কেবল পুথিগত জ্ঞানের মধ্যে আটকে না-থেকে নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয়। 

[3] রহস্য উদঘাটনে এগিয়ে আসে : কৈশােরে পৌঁছালে বহু ছেলেমেয়ে আপনা থেকেই বিভিন্ন ধরনের রহস্যমুলক কাজের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং রহস্য উদঘাটনে অগ্রসর হয়। 

[4] অবরােহ পদ্ধতিতে আগ্রহী হয় : কৈশােরকালে পৌঁছালে ছেলেমেয়েদের বুদ্ধির বিকাশ এমনভাবে ঘটে যে, ওই পর্যায়ে তারা আরােহ পদ্ধতি অপেক্ষা অবরােহ পদ্ধতিতে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণে উৎসাহী হয়। এই পর্যায়ে আপন বুদ্ধি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তির জাল বুনে নতুন সত্যে উপনীত হতে চেষ্টা করে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!