ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করো। Class 12 History Suggestion 2022

প্রশ্ন:- ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:

ভূমিকাঃ- অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধগতি। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্পকর্ম ছেড়ে চাষবাসের জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় আয়ে কৃষিজ অংশ বাড়তে থাকে ও শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অবশিল্পায়ন বলা হয়।

অবশিল্পায়নের কারণঃ- অবশিল্পায়নের একাধিক কারণ রয়েছে এগুলি হল-

১) কাঁচা মালের রপ্তানিঃ- ভারতীয় শিল্প ধ্বংশের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ড কাঁচামাল রপ্তানি শুরু করে। ভারত ইংল্যান্ডের কারখানাই খোলাবাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলা,নীল,কফি,চা, রেশম প্রভৃতি ইংল্যান্ডে পাঠানো হতে থাকে। ফলে কাঁচা মালের অভাবে দেশীয় শিল্পের অগ্রগতি ব্যহৃত হয়।

৩) সুতিবস্ত্রে সুল্ক আরোপঃ- ইংল্যান্ড সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক চাহিদা ছিল। ভারতীয় বস্ত্রের চাহিদা হ্রাস করে বিলেতী বস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারত থেকে ব্রিটেনে রপ্তানি করা সুঁতি বস্ত্রের উপর উচ্চহারে সুল্ক চাপাই। এর ফলে ব্রিটেনে ভারতীয় সুতি বস্ত্রের মূল্য বেড়ে গেলে এর চাহিদা হ্রাস পাই।

৪) অসম সুল্ক নীতিঃ- কোম্পানি নিজে বিভিন্ন কর্মের উপর সুল্ক ছাড়ের সুবিধা নিলেও বিট্রিশ সরকার বিভিন্ন দেশীয় শিল্প কর্মের উপর বিশাল পরিমানে সুল্ক চাপিয়ে দেন।

শিল্প বিল্পবঃ– অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইংল্যান্ডে শিল্প বিল্পবের সূচনা ঘটে এবং যন্ত্রের সাহায্যে অনেক কম সময়ে উন্নত মানের ও সস্তা শিল্প পন্য উৎপাদিত হতে থাকে। ব্রিটিশ শিল্পপতিদের চাপে ভারত সরকার ইংল্যান্ডের বনিকদের কাছে দরজা খুলে দিতে বাধ্য হন। ১৮১৩ খ্রিঃ আইনের মাধ্যমে কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্যের অবসান ঘটলে ইংল্যান্ডে অন্য ব্যাবসায়িরা ভারতে আসতে শুরু করে। তারা এদেশে এসে জমি জমা কিনে,তাতে নীল,রাবার,তামাক প্রভৃতি চাষ শুরু করে এবং কাঁচামাল ইংল্যান্ডে রাপ্তারি করতে থাকে। ভারতে রেল ব্যবস্থা চালু হলে দেশের সর্বত্র ব্রিটিশ পন্যের প্রবেশ ঘটে। এই সব পন্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গেলে দেশীয় পন্য বিক্রি দারুন ভাবে মার খায়।

অবশিল্পায়নের ফলাফলঃ-

১) বেকারত্ব –দেশীয় কুটির শিল্প ধংশের ফলে ভারতের বিপুল সংখ্যক হস্ত শিল্পি ও কারিগর কাজ হারায়। ফলে দেশে তীব্র বেকার সমস্যা দেখা যায়।

২) কৃষির উপর চাপঃ- অবশিল্পায়নের ফলে জমির অণুপাতে মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে তাদের জীবিকা নির্বাহের চাপ বাড়ে এবং দেশে কৃষিজীবি ও ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে।

৩) দারিদ্র বৃদ্ধিঃ- অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনীতি ধ্বংশ হয় এবং দারিদ্র বৃদ্ধি পায়। দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ভারতীয় জনজীবনে নিত্য সঙ্গি হয়ে ওঠে।

৪) গ্রামীণ অর্থনিতিতে ভাঙনঃ- অবশিল্পায়ন ভারতের গ্রামীণ অর্থনিতিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে। এই সময় অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে কৃষি নির্ভর হয়ে পড়ে। কৃষি মরসুম ছাড়া অন্য সময় মানুষের কাজ না থাকায় মানুষের গড় আয় যথেষ্ট কমে যায়।

৫) নগর জীবনের অবক্ষয়ঃ- অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের প্রাচীন ও সমৃদ্ধ শহর গুলির অবক্ষয় শুরু হয়। অষ্টাদশ শতকে ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, সুরাট, মুসুলি প্রভৃতি নগরের অবক্ষয় শুরু হয়।

Read Also:

HS History Suggestion 2022 PDF Download
জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ আলােচনা করাে।
অতীতকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি এবং স্মৃতিকথার ভূমিকা আলােচনা করাে।
ব্রিটিশ আমলে ভারতের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা করো।
জাদুঘর কাকে বলে? অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা আলােচনা করাে।
ক্যান্টন বাণিজ্য কি? ক্যান্টন বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে। এই বাণিজ্যের অবসানের কারণ আলােচনা করাে।
নৌ বিদ্রোহের কারণ ও তাৎপর্য আলােচনা করাে।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment