চার্টার অ্যাক্ট-এর পটভূমি, শিক্ষা-সংক্রান্ত ধারা ও মিশনারি-সংক্রান্ত ধারা ও তাদের কার্যকারিতা সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তর :
চার্টার অ্যাক্ট-এর পটভূমি :
মুসলিম রাজশক্তিকে পরাস্ত করে 1756 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয় এবং সেই থেকে তারা ভারতীয় জনগণের শিক্ষা বিষয়ে উৎসাহদানের কথা ভাবতে শুরু করে। কিন্তু এই বিষয়ে কোনাে প্রকার দায়িত্ব পালনে তারা আগ্রহী ছিল না। ওই সময় এদেশের জনগণের শিক্ষার দায়িত্ব কোম্পানি গ্রহণ করবে কিনা সে-বিষয়ে কোম্পানির ডিরেক্টর এবং এদেশে নিযুক্ত কোম্পানির আধিকারিকদের মধ্যে মতান্তর লক্ষ করা যায়। একদিকে কোম্পানির ডিরেক্টররা এদেশের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণে অনিচ্ছুক হয়, অন্যদিকে এদেশে নিযুক্ত কোম্পানির আধিকারিকরা কোম্পানিকে এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনুরােধ জানাতে থাকে।
1810 থেকে 1811 খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো ধারণা করেন যে, কোম্পানি পরিচালিত সরকার যদি ভারতীয় শিক্ষাক্ষেত্রে আর্থিক সাহায্য দান না-করে, তাহলে ভারতবর্ষের শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুশীলন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে।
কোম্পানির শিক্ষা প্রসঙ্গে ঔদাসীন্য ইংল্যান্ডের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, শিক্ষিত সমাজ এবং ভারতবর্ষে আগত খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারাও ব্যাপকভাবে সমালােচিত ও নিন্দিত হতে থাকে।
এমতাবস্থায় 1813 খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির সনদ আইন পুনর্নবীকরণের প্রাক্কালে সর্বপ্রথম কোম্পানির শাসনাধীন অঞ্চলগুলিতে এদেশের শিক্ষার বিষয়ে যে কোম্পানি-সরকারের দায়িত্ব আছে, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়। মােটকথা জনমতের চাপে ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষাবিস্তারের জন্য চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন 1813 পাস হয়।
চার্টার অ্যাক্ট-এর শিক্ষা বিষয়ক ধারা :
1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের 43নং ধারাটি হল শিক্ষা-সংক্রান্ত ধারা। এটিতে প্রধান বক্তব্য হিসেবে যা বলা হয়, তা হল—“ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষে সামরিক, অসামরিক এবং শিল্পবাণিজ্যের ব্যয় এবং সরকারি ঋণ ও তার সুদের জন্য ব্যয় বহন করার পরে রাজস্ব কর ও লাভের আয় থেকে যে পরিমাণ অর্থ উদবৃত্ত হবে, তার থেকে প্রতিবছর অন্তত কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা শিক্ষিত ভারতবাসীদের উচ্চতর শিক্ষালাভের উৎসাহদানের জন্য, সাহিত্যে পুনরুজ্জীবন ও উন্নয়নের জন্য এবং ভারতবর্ষে ব্রিটিশশাসিত অঞ্চলের জনগণের মধ্যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রবর্তন ও উন্নয়নের জন্য ব্যয় করাই হবে সপরিষদ গভর্নর জেনারেলের আইনসম্মত কাজ।
চার্টার অ্যাক্ট-এর মিশনারি-সংক্রান্ত ধারা :
1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইনের 13 নং ধারাটি হল মিশনারি-সংক্রান্ত ধারা। এই ধারায় উল্লেখ করা হয়—ভারতীয়দের মধ্যে প্রয়ােজনীয় জ্ঞানের প্রচার ও নৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষা প্রবর্তনে আগ্রহী যে-কোনাে ব্যক্তি বা সংস্থা ভারতবর্ষে যেতে এবং সেখানে থাকতে পারবে এবং তাদের সকল প্রকার সুযােগসুবিধা দেওয়া হবে।
এই ধারাটিতে সরাসরিভাবে মিশনারিদের কথা উল্লেখ করা না-হলেও, মিশনারিদের ওপর কোম্পানির যে-বিধিনিষেধ ছিল, তা উঠে যায়। মিশনারিরা ভারতে গিয়ে অবাধে ধর্ম এবং শিক্ষা প্রচারের যে-দাবি বহুদিন ধরে করে আসছিল, তা পূরণ করা হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।