Bengali Bangla Prabandha Rachana তরুণের স্বপ্ন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

তরুণের স্বপ্ন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা তরুণের স্বপ্ন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ

তরুণের স্বপ্ন

জাতি হিসেবে বাঙালির ইতিবাচকতা কারুর থেকে কম নয়। বাঙালির সাহস, সদিচ্ছা যেমন আছে, তেমনি আছে কল্পনা প্রবণতা। এসবের সূত্র ধরেই বাংলাদেশে অসংখ্য মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে। তাঁরা সভ্যতা ও ইতিহাসকে পথ দেখিয়েছেন। যুগে যুগে অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ঘটনাপ্রবাহে এই দেশ আন্দোলিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও যে এই জাতি পুনর্গঠিত হতে পেরেছে তা শুধু তার মানসিক শক্তির জোরে। দুঃখকষ্টে ম্রিয়মান হয়ে না পড়ে বাঙালি তার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। খুঁজে নিয়েছে লড়াইয়ের প্রেরণা। এতেই তার আনন্দ ।

বাঙালির মধ্যে রয়েছে জানার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। তাই বাঙালি বিশ্বভ্রমণ করে। জ্ঞানের সাম্রাজ্যে তার দেওয়া-নেওয়া চলতেই থাকে। বিশ্বনাগরিকত্ব বাঙালিকে উদারমনা করে তুলেছে। পৃথিবীর সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গেও তার প্রতিদিনের ওঠা-বসা। সে সবকে নিজের করে নিতে বাঙালি কোনোদিনই দ্বিধা করেনি। এর মধ্য দিয়েই জাতির চরিত্রের বিস্তার ঘটে। আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতার পরিধি বিস্তৃত হয় ।

এত কিছুর পরেও বাঙালি জাতিসত্তার দুর্বল দিকগুলিকে এড়ানো যায় না। বাঙালি অতীতচারী। অতীতের গৌরবগাথাকে কল্পনার মিশেল ঘটিয়ে তুলে ধরতে বাঙালি অত্যন্ত আগ্রহী। তার পরিণতিতে বর্তমান হয়ে উঠছে এক আদর্শহীন, স্বার্থান্ধ মনোভাবের বিচরণক্ষেত্র। ফলে যে বাংলা দেশ একদা ছিল মহামানবের জন্মভূমি, সেখানে নতুন করে কোনো আলোকদিশারির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। অধ্যবসায় আর আদর্শের অভাব চারপাশে বড়ো বেশি চোখে পড়ছে।

উৎসাহ-উদ্দীপনার অভাব না থাকলেও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে বিস্তর ফাঁক থেকে যাচ্ছে। বাঙালির এমনিই ‘হুজুগে জাত’ বলে অপবাদ আছে, তা দূর করতে যে একাগ্রতা দরকার তা বাঙালি দেখাতে পারছে না। বাঙালির মধ্যে নিজস্বতা রক্ষার বদলে দেখা যাচ্ছে পরানুকরণ প্রবৃত্তি। অতীত অর্থাৎ বাপ-ঠাকুরদার গল্প বলে নিজের মিথ্যা অহংকারকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও দেশজ ঐতিহ্যে তার প্রবল অনীহা। শিকড়হীন এই বাঙালির পক্ষে বড়ো কোনো কাজ করা সম্ভব নয়।

তাই বাঙালির নবজাগরণ দরকার। আত্মবিশ্বাস আর আত্মপ্রত্যয়ই তাকে জাগিয়ে তুলতে পারে। ব্যক্তিগত অহংকার নয়; পারস্পরিক সহমর্মিতা, অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই জাতি হিসেবে বাঙালিকে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। আমরাও পারি—এই প্রত্যয়ই বাঙালি জাতিকে সঞ্জীবিত করবে। একদিন যে বাঙালি দেশকে পথ দেখিয়েছিল, সে আবার তার শ্রেষ্ঠত্ব ফিরে পাবে। আর জাতির এই পুনরুজ্জীবন আর পুনরুত্থানের কালে তরুণসমাজই থাকবে নেতার ভূমিকায়। স্বার্থপরতা, স্থূল হিসেবনিকেশ এসবের বাইরে এই তরুণ সমাজের ভূমিকাই হবে অগ্রগণ্য। সর্বাগ্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকারী হবে তারাই।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

error: Content is protected !!