নির্বাক জীবন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা নির্বাক জীবন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ

নির্বাক জীবন

আদিপ্রাণ। জীবনের বহমানতায় অনুভূত হয় যে জীবনের স্পন্দন, বৃক্ষ সেখানে এক বিন্দুতে মিলে যায় উদ্ভিদ আর প্রাণীজগৎ। খালিচোখে দেখা না গেলেও বৃক্ষ আহত হলে ক্ষণিকের জন্য সংকুচিত হয়। সময়ভেদে গাছের এই অনুভূতির তারতম্য দেখা দেয়। সকালের জড়তা মধ্যদিনের উদ্দীপনায় নিজেকে মেলে দেয়। আর সন্ধ্যার অবসন্নতায় তার সমাপ্তি ঘটে। এ যেন মানুষেরই রোজনামচা ।

প্রাণীদেহে যেমন উত্তেজনার ফলে স্নায়বিক প্রবাহ তৈরি হয়, গাছেদের ক্ষেত্রেও তেমন হয়। এমনকি তা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো কোনো প্রাণীর থেকেও দ্রুতগামী। বাইরের আঘাত গাছের শরীরে প্রবেশ করলে গাছ সেই শক্তিকে সঞ্চয় করে রাখে, ঠিক যেভাবে সঞ্চয় করে রাখে বাইরের আলো, উত্তাপ কিংবা অন্যান্য শক্তিকে। শক্তি সঞ্চয় পূর্ণ হলে তা বাইরে স্পন্দন হিসেবে প্রকাশ পায়। এর মধ্যে কিছু গাছ আছে যারা অল্প শক্তি সঞ্চিত হলেই তা উথলে দেয়, আবার বনচাড়ালের মতো কিছু গাছ দীর্ঘকাল ধরে শক্তি সঞ্চয় করার পরে তার স্পন্দন প্রকাশ করে।

গাছের স্পন্দন যখন শেষ হয় তখনই তার মৃত্যু ঘটে। গাছের শরীর কুঞ্চিত হয়ে পড়ে, শরীরে যেন বিদ্যুৎপ্রবাহ সঞ্চারিত হয়। শেষ স্পন্দনের পরে গাছ চিরকালের মতো স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপরে সেই মৃত্যুর চিহ্ন হিসেবেই যেন গাছ হেলে পড়ে বা শুকিয়ে যায়। মৃত্যুতেও যেন প্রাণীজগৎ আর উদ্ভিদ মিলে যায়।

বৃক্ষ এক নিবিড় পর্যবেক্ষণের বিষয়। তার বেঁচে থাকার ভঙ্গি, নিজেকে মেলে ধরার বৈচিত্র্য অজস্র। কখনও পাতা আলোকসন্ধানী, কখনও আলোকবিমুখ। সূর্যের আলো পাওয়ার জন্য পাতাগুলি নিজেদের আকারও পালটে ফেলে। কোনোটি ঊর্ধ্বমুখী তো অন্যটি পার্শ্বমুখী। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে উদ্ভিদের হৃৎস্পন্দনও অনুভব করা যায়। এর সঙ্গে থাকতে হবে গভীর অনুসন্ধিৎসা। তবেই বৃক্ষ সম্পর্কে বহু ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটবে। বৃক্ষ যেহেতু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে না, প্রাণীদের মতো আওয়াজ করতে পারে না তাই তারা প্রাণহীন—এই ধারণা আজ নিতান্তই মূর্খের প্রলাপ । বৃক্ষ প্রাণময়।

প্রাণময় বৃক্ষের সঙ্গে মানুষের আচরণ হওয়া উচিত সহৃদয়তার। একথা মানতেই হবে যে গাছ হল সভ্যতার ধাত্রী। পরিবেশ থেকে অর্থকরী দিক সবকিছুতেই বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ স্বার্থপর মানুষ নিজের অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে বৃক্ষনিধনে মত্ত। এ যে এক হত্যালীলা, প্রাণের বিনাশ তা আধুনিক মানুষ বুঝতে পারে না। একদিকে বিজ্ঞানচেতনা এবং অন্যদিকে সহৃদয়তা বৃক্ষ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে পালটাতে পারে। এই ভালোবাসা থেকেই তো কবি লিখেছেন,

“গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে গাছের মতন
ফুল ফুটেছে সেই মানুষের বুকের ধারে
পাতার শাখায় হারিয়ে গেছে মুখটি তাহার
গাছের কাছে পারলে হারে।”

—শক্তি চট্টোপাধ্যায়

গাছ আর মানুষের সম্পর্কের এই রসায়ন সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একান্ত আবশ্যক।

Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।

Leave a Comment