প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, এখানে আমরা প্রতিবাদী লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করলাম। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে এই প্রবন্ধ রচনাটি লেখা হয়েছে। আশা করি তোমাদের সবারই ভালো লাগবে। ধন্যবাদ
প্রতিবাদী লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী
বাংলা সাহিত্যে প্রগতিশীল ও জীবনসম্পৃক্ত রচনাধারার অন্যতম শক্তিশালী লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী। প্রতিবাদী সাহিত্যধারার এই বিশিষ্ট লেখিকা ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মহাশ্বেতা দেবীর পিতা মণীশ ঘটক ছিলেন বিখ্যাত কবি, মাতা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত। রাজশাহির স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তারপরে বেলতলা বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইংরেজিতে সাম্মানিক স্নাতক হন। তারপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় পদ্মপুকুর ইন্সটিটিউশনে শিক্ষকতার মাধ্যমে। পরে তিনি পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফে আপার ডিভিশান ক্লার্ক হিসেবেও কাজ করেছেন। এর পর রমেন মিত্র বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা এবং জ্যোতিষ রায় কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী তাঁর অধ্যাপনা জীবন থেকে অবসর নেন। ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী বিবাহ করেন বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্যকে। তাঁদের একমাত্র সন্তান ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক সদ্যপ্রয়াত নবারুণ ভট্টাচার্য। একেবারে স্বাধীনভাবে চলবেন বলেই মহাশ্বেতা দেবী বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।
সমাজের তথাকথিত নিম্নবিত্ত ও নিম্নবর্গের মানুষের জীবনযাপন এবং তাদের আশা-স্বপ্ন-সংগ্রামের সংবেদনশীল এবং প্রতিবাদী রূপ উঠে এসেছে মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যসৃষ্টিতে। আদিবাসী এবং সমাজের অন্যান্য সর্বহারা মানুষের জীবনের উন্নয়নে তিনি যেমন ব্রতী হয়েছেন, তেমনি তাদের জীবনকথা নিয়েই শিল্পসার্থক ছোটোগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন।
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় মহাশ্বেতা দেবীর প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রাণি। তাঁর অন্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল মধুর প্রেম, রুদালি, প্রেমতারা, বায়োস্কোপের বাক্স, আঁধারমানিক, কবি বন্দ্যঘটী গাঞ্জির জীবন ও মৃত্যু, হাজার চুরাশির মা, অরণ্যের অধিকার, চোট্টি মুণ্ডা ও তার তীর, বিশ-একুশ, ব্যাধখণ্ড, গণেশ মহিমা, সিধু-কানুর ডাকে, নৈঋতে মেঘ, বীরসা মুণ্ডা, তিতুমির স্তন্যদায়িনী ও অন্যান্য গল্প ইত্যাদি। মহাশ্বেতা দেবীর সামগ্রিক রচনাকর্মকে তিনটি প্রবণতায় ভাগ করা যায়—প্রথমত, পরাধীন ভারত ও ঔপনিবেশিকতা, দ্বিতীয়ত, গত শতকের সত্তর দশকের রাজনীতি, তৃতীয়ত, এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলির শোষণ-বঞ্চনা।
মহাশ্বেতা দেবী তাঁর সাহিত্য সৃষ্টির জন্য ১৯৭৯-তে ‘সাহিত্য অকাডেমি’, ১৯৮৬-তে ‘পদ্মশ্রী’, ১৯৯৬-তে ‘জ্ঞানপীঠ’ এবং ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মবিভূষণ’-এ এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কারে সম্মানিত হন। সাহিত্যসৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ইত্যাদি রাজ্যে উপজাতি মানুষদের দুঃখ, বন ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সরাসরি পাশে থেকেছেন মহাশ্বেতা দেবী। তাঁর সম্পাদিত ‘বর্তিকা’ পত্রিকা হয়ে উঠেছে প্রান্তিক মানুষদের মুখপত্র। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে এক সাক্ষাৎকারে মহাশ্বেতা দেবীর কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁর ভবিষ্যৎ ভাবনা। উত্তরে মহাশ্বেতা দেবী নির্দিষ্ট করে দেন তাঁর লক্ষ্য – “Fight for the tribals, downtrodden under-privileged and write creatively if and when I find the time.” ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়।
Note: এই আর্টিকেলের ব্যাপারে তোমার মতামত জানাতে নীচে দেওয়া কমেন্ট বক্সে গিয়ে কমেন্ট করতে পারো। ধন্যবাদ।